আপডেট : ২৩ অক্টোবর, ২০২২ ১২:৪৭
ভারত-পাকিস্তানের শক্তি-দুর্বলতা
ক্রীড়া ডেস্ক

ভারত-পাকিস্তানের শক্তি-দুর্বলতা

ছবি: সংগৃহীত

একদিকে খেলোয়াড়দের মধ্যে বন্ধুত্ব নতুন মাত্রা ছুঁচ্ছে, ওদিকে ক্রিকেট রাজনীতিতে আবার নতুন করে যোগ হচ্ছে ভূরাজনীতি। বিসিসিআই এবং পিসিবি যখন যুদ্ধংদেহী মূর্তিতে, এমন প্রেক্ষাপটে মেলবোর্নে আজ দেখা হচ্ছে ভারত-পাকিস্তানের। টি-টোয়েন্টির শীর্ষ দল ভারত ফেবারিট হিসেবেই অস্ট্রেলিয়ায় এসেছে, তবে পাকিস্তান এবার আন্ডারডগ। আজ চলুন দুই দলের তাদের দুর্বলতার খবর নেয়া যাক। যে দল প্রতিপক্ষের দুর্বলতার সুযোগ যত বেশি নেবে, শেষ হাসি তাদেরই হবে।

ভারত

তৃতীয় পেসারসংকট

পিঠের চোটে যশপ্রীত বুমরার ছিটকে যাওয়া বড় ধাক্কা ভারতের জন্য। প্রায় সপ্তাহ দেড়েক ভেবে মোহাম্মদ শামিকে বিশ্বকাপের টিকিট দিয়েছেন বিসিসিআইয়ের নির্বাচকরা। প্রস্তুতি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এক ওভারেই চার উইকেট তুলে নিয়েছিলেন ৩২ বছর বয়সী পেসার। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে তাই নতুন করে ভাবতে হচ্ছে তৃতীয় পেসার নিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টিতে ভারতের একাদশে নিয়মিত মুখ দুই পেসার ভুবনেশ্বর কুমার এবং আর্শদীপ সিং। তৃতীয় পেসার হিসেবে এতদিন হার্শাল প্যাটেলের বড় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও শামির উপস্থিতিতে সে চিত্র বদলে গেছে।

পান্ডিয়ার কিছু হলে…

পেস বোলিং অলরাউন্ডাররা টি-টোয়েন্টিতে দলের সম্পদ। পিঞ্চ হিটিংয়ের সঙ্গে মিডল ওভার বা শেষ দিকে কার্যকরী বোলিংয়ে দলের জয়ে অবদান রাখতে পারেন তারা। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ভারতকে জয় এনে দিয়েছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। তবে কোনো কারণে পান্ডিয়া জ্বলে উঠতে না পারলে বা চোটে পড়লে তার ভূমিকা পালন করার মতো কেউ নেই। পেস বোলিং অলরাউন্ডারে বিকল্পের অভাব ভোগাতে পারে ভারতকে।

পানসে পন্ত

মাস দুয়েক আগেও ব্যাটিং নিয়ে ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তার অন্ত ছিল না। বিরাট কোহলির রানখরা, কে এল রাহুলের ফর্মহীনতা ভাবাচ্ছিল ভারতকে। তবে বিশ্বকাপের আগে সময়মতো ফর্ম খুঁজে পেয়েছেন তারা দুজনই। তবে ঋষভ পন্ত এখনো রানখরা থেকে মুক্তি পাননি। গত ফেব্রুয়ারির পর সর্বশেষ ১৫ টি-টোয়েন্টিতে ব্যাট করে মাত্র দুবার ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন। ফর্ম নিয়ে যুঝতে থাকায় মূল একাদশ তৈরির ক্ষেত্রে টিম ম্যানেজমেন্টের পছন্দের তালিকায় দলের অপর উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান দীনেশ কার্তিকের চেয়ে বেশ পিছিয়ে পড়ছেন পন্ত।

ডেথ বোলিংয়ে দুর্দশা

ডেথ ওভারে খরচে বোলিং করে দলের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছেন ভারতের পেস ত্রয়ী ভুবনেশ্বর কুমার, আর্শদীপ সিং এবং হার্শাল প্যাটেল। তাদের কেউই ডেথ ওভারে ঠিকঠাক ইয়র্কার দিতে পারছেন না, হার্শালের স্লোয়ার বলও এখন আর প্রতিপক্ষকে খুব একটা বিপদে ফেলতে পারছে না। বুমরার অনুপস্থিতিতে বিশ্বকাপে ভারতকে ডেথ ওভারের বোলিং নিয়ে তাই নতুন করে ভাবতে হতে পারে।

চাহাল নাকি অশ্বিন

পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত যুজবেন্দ্র চাহাল এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মধ্যে একজনকে বেছে নেয়া। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে লেগ স্পিনাররা বরাবরই কার্যকরী এবং পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের মূল দুই স্তম্ভ বাবর এবং রিজওয়ান- দুজনই ডানহাতি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে চাহাল-ই টিম ম্যানেজমেন্টের প্রথম পছন্দ। তবে পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। বাবর-রিজওয়ান দুজনই অফ স্পিনের বিপক্ষে দুর্বল। ২০২১ সাল থেকে টি-টোয়েন্টিতে অফ স্পিনের বিপক্ষে বাবর ও রিজওয়ানের স্ট্রাইকরেট যথাক্রমে ৯০.৪ এবং ১০৪.২৪! মেলবোর্নের বড় সীমানাও অশ্বিনের কথা ভাবতে বলে।

পাকিস্তান

ওপেনিং- আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?

বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান- বলতে গেলে এরা দুজনই পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। এই দুজনের ব্যাট হাসলেই হাসে পাকিস্তান। টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি পঞ্চাশোর্ধ্ব ও ১০০ ছাড়ানো জুটি তাদের। ওপেনিংয়ে তাদের যৌথ গড় প্রায় ৯৫। তবে শুধু গড় পুরো গল্পটা কখনো বলে না।

বাবর-রিজওয়ান টি-টোয়েন্টিতে যথাক্রমে ১২৯ এবং ১২৮ স্ট্রাইক রেটে রান তোলেন এবং এ দুজন অনেক দীর্ঘ সময় উইকেটে থাকেন। অর্থাৎ দুজন যদি ১৬ ওভার ৪ বল পর্যন্ত ব্যাট করেন, তাহলে দলের রান হবে ১২৯। বাকি ২০ বলে যতই মারকাটারি ব্যাটিং হোক না কেন, পাকিস্তানের পক্ষে রানটা ১৭০-এর বেশি করা কঠিন। বাস্তবেও এমনটা দেখা যায়। দলের স্কোরকে সম্মানজনক অবস্থানে নিতে পরের ব্যাটসম্যানদের ওপর পাহাড়সম চাপ সৃষ্টি হয়।

মিডল অর্ডার

পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা নিঃসন্দেহে দলটির মিডল অর্ডার। বেশির ভাগ ম্যাচেই দলকে ভালো শুরু এনে দেয়ার পরও একদিকে বাবর বা রিজওয়ান না থাকলেই ভেঙে পড়ে দলটির ব্যাটিং। আর কোনো কারণে বাবর বা রিজওয়ানদের দুজনের যদি দিনটা খারাপ কাটে পাকিস্তানের ব্যাটিং ধ্বংসস্তূপ হয়ে যায়। মিডল অর্ডার নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে পাকিস্তানের টিম ম্যানেজমেন্ট। নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে মোহাম্মদ নওয়াজ এবং হায়দার আলী এক ম্যাচে আশা দেখালেও বিশ্বকাপে দলটির বড় চিন্তার জায়গা মিডল অর্ডার।

চাপে ভেঙে পড়া

২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে ৪ বলে দরকার ছিল ৬ রান। দলকে জয়ের হাতছোঁয়া দূরত্বে নিয়ে যাওয়া মিসবাহ-উল-হক সেই মুহূর্তে খেললেন অপ্রয়োজনীয় এক স্কুপ। মিসবাহর এক ভুলে হাত ফসকে গেল শিরোপা। ২০২১ সালের বিশ্বকাপেও হাসান আলীর এক ক্যাচ মিসেই সাঙ্গ হয়েছিল পাকিস্তানের টুর্নামেন্ট। ১৯তম ওভারে ডিপ মিড উইকেট বাউন্ডারিতে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি। ফল, শাহীন আফ্রিদির সে ওভারের পরের ৩ বলে ৩ ছক্কায় ওয়েড অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে তোলেন। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এমন ভুল বরাবর পাকিস্তানকে ভুগিয়েছে।

প্রশ্নবিদ্ধ দল নির্বাচন

ব্যাটসম্যান বাবর আজমের সামর্থ্য নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে অধিনায়ক বাবর আজমকে নিয়ে কি একই কথা বলা যায়? টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাহসী অধিনায়কদের কদর বেশি, গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে যাদের সিদ্ধান্ত ম্যাচের দৃশ্যপট বদলে দেয়। দল নির্বাচনেও তাদের উদ্ভাবনী সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রচেষ্টা থাকে। তবে অধিনায়ক বাবরের সঙ্গে সাহসীর চেয়ে বরং সাবধানী শব্দটাই বেশি খাটে। কোচ সাকলাইন মুশতাকও দ্রুত পরিবর্তনশীল ক্রিকেটীয় বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ‘অপ্রস্তুত’। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের হারের পর তার ‘দর্শন কপচানোয়’ বিরক্ত হয়েছেন পাকিস্তানের ক্রিকেট অনুরাগীরা।

প্রত্যাশার চাপ

৩০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই প্রথম বিশ্বজয়ের স্বাদ পেয়েছিল পাকিস্তান। ইমরানের খানের নেতৃত্বে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিল তারা। আবারও সে অস্ট্রেলিয়াতে বিশ্বকাপ খেলছে পাকিস্তান। এ নিয়ে পাকিস্তানের মিডিয়ায় চলা আলোচনা আর রসিকতায় আটকে নেই। খেলোয়াড়দের ওপর এটা বাড়তি চাপ হিসেবে কাজ করতে পারে।