আপডেট : ২৪ অক্টোবর, ২০২২ ০৮:১২
রোহিঙ্গা সংকট: পাশে থেকেও সমাধান দিতে পারছে না জাতিসংঘ
জেসমিন পাপড়ি

রোহিঙ্গা সংকট: পাশে থেকেও

সমাধান দিতে পারছে না জাতিসংঘ

ছবি: সংগৃহীত

রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে জাতিসংঘ। কিন্তু আলোচনার পর আলোচনা করেও এ বিষয়ে কোনো সমাধান দিতে পারেনি সংস্থাটি। গত পাঁচ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে এই বিরাট জনগোষ্ঠীর বোঝা টেনে বেড়াতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন রক্ষাকারী সুরক্ষা ও সহায়তা প্রদানেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে জাতিসংঘ। তবে এক্ষেত্রে প্রয়োজনের তুলনায় সে তহবিল খুবই কম। এর বাইরে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা তৈরিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে সংস্থাটি।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। এর আগে থেকেই বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাস করছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। ২০১৯ সালে দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এহসানুল হক দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকেই জাতিসংঘ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন ধরনের সমাধান নিয়ে এগিয়ে আসার চেষ্টা করেছে। সমস্যা হলো, এই সংকটের জন্য দায়ী মিয়ানমার সরকারকে রাজি করানো জাতিসংঘের একার পক্ষে সম্ভব না।’

তার মতে, প্রত্যাবাসন সমাধানে না আসার পেছনে অন্য শক্তিগুলোর ভূমিকা রয়েছে। এখানে বৃহৎ শক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা উচিত। বিশেষ করে চীন, ভারত এবং রাশিয়া। এই তিন রাষ্ট্রের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান সম্ভব।

এহসানুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশকে জাতিসংঘের কাছে এ বিষয়টি আরও জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে। জাতিসংঘ যদি আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখে তাহলে হয়তো এই সমস্যার একটা যৌক্তিক সমাধান আসতে পারে। কারণ, সংস্থাটির অতীতে রেকর্ড বলছে, অতীতে তারা অনেক সংঘাতময় পরিস্থিতির সমাধান দিতে সমর্থ হয়েছে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দৈনিক বাংলাকে জানান, জাতিসংঘ কোনো আলাদা সত্তা নয়। সদস্য দেশগুলোকে নিয়েই জাতিসংঘ। আর সদস্য দেশগুলোর সিদ্ধান্তের বহিঃপ্রকাশ ঘটে জাতিসংঘের কর্মকাণ্ডে। মূলত রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রধান বাধা নিরাপত্তা পরিষদে ভেটোদানকারী ক্ষমতাধর রাষ্ট্র রাশিয়া এবং চীন। তারা মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় গণহত্যা চালানো সত্ত্বেও দেশটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।

জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও। দিন দিন দুর্বল প্রতিষ্ঠানে রূপ নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ থেকে ফিরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যায় আমরা জাতিসংঘের দিকে চেয়ে থাকি। অথচ জাতিসংঘ একটি যুদ্ধ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই থামাতে পারছে না। এতে বোঝা যায়, প্রতিষ্ঠানটি দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে।’ এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের কার্যকর ভূমিকার প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।

তবে বিরাট এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য শুরু থেকেই মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে জাতিসংঘ। জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান বা যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনার (জেআরপি) মাধ্যমে গঠিত তহবিলের মাধ্যমে এই সহায়তা দিয়ে থাকে সংস্থাটি।

কক্সবাজার ও ভাসানচরে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ-পাশে বসবাস করা স্থানীয় বাংলাদেশিদের জন্য ২০২২ সালের জেআরপিতে প্রায় ৮৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল চায় জাতিসংঘ। বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে এ বছরের জেআরপি অনুযায়ী কাজ করছে ১৩৬টি সংস্থা, যার মধ্যে ৭৪টি হচ্ছে বাংলাদেশি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন।

বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ দিবসের পাশাপাশি আজকের এই দিনটি ‘বিশ্ব উন্নয়ন তথ্য দিবস’ হিসেবেও পালিত হয়। জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৭২ সাল থেকে প্রতি বছরের ২৪ অক্টোবর এ দিনটি সদস্য দেশগুলোতে পালিত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ১৩৬তম সদস্য হিসেবে জাতিসংঘে যোগদান করে। যোগদানের এক সপ্তাহ পর ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলায় ভাষণ প্রদান করেছিলেন।