এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ তরুণ নেতৃত্ব ও তরুণ চিন্তা-চেতনাকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। এ কারণেই দলটির সাধারণ সম্পাদক থেকে সভাপতি হয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তৎকালীন রাজনীতির হিসাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একঝাঁক তরুণকে নিয়ে পঞ্চাশের দশক থেকেই এগিয়ে চলেছিল আওয়ামী লীগ। যার ফল হিসেবে ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০ এবং সর্বোপরি ১৯৭১ সালে ইতিহাস রচনা করে দেশের তরুণ ও সাধারণ মানুষের সম্মুখযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ।
২০০৮ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যখন তার ইশতেহারে ‘দিন বদলের সনদ’ ঘোষণা করে, তখনও ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা হয় তরুণদের। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদের জন্য ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের ঘোষণায়ও রয়েছে তরুণদের প্রাধান্য দেওয়ার কথা। আর আওয়ামী লীগের নতুন মন্ত্রিসভায়ও রয়েছে সেই ছাপ। অনেকেই এই মন্ত্রিসভাকে স্মার্ট মন্ত্রিসভা বলেও আখ্যায়িত করছেন।
বরাবরের মতোই আওয়ামী লীগের এবারের মন্ত্রিসভায়ও শিক্ষিত এবং মেধাবীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রায় ৫ জনের বেশি সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক ও আমলা রয়েছেন। রয়েছেন চিকিসৎসক ও গবেষক। ফলে স্পষ্ট করেই বলা যায়, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য যে চারটি স্তম্ভের কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার তার বক্তব্যে বলেছেন, তার একটি তিনি নতুন মন্ত্রিসভার মাধ্যমে স্থাপনের আভাস দিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ স্মার্ট সরকার তৈরির জন্যই শিক্ষিত ও যোগ্য একটি মন্ত্রিসভা গড়ে তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে এই মন্ত্রিসভা উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দেশপ্রেমের জন্য কাজ করবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের এবারের মন্ত্রিসভায় ১৯ জন নতুন মন্ত্রী হয়েছেন, সেই সঙ্গে বাদ পড়েছেন সদ্য সাবেক কেবিনেটের ১৯ জন মন্ত্রী। এই মন্ত্রিসভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শিক্ষিত এবং বিশেষজ্ঞদের প্রাধান্য দেওয়া। এবারের মন্ত্রিপরিষদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছেন কয়েকজন। যার মধ্যে একজন রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। একাদশ জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভায় সফলভাবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হিসেবে কাজ করা ড. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ এবারের মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নানাবিধ আন্তর্জাতিক কারণে বিগত দুই বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য আগামী ৫ বছরও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমকে। আর সেই চ্যালেঞ্জের জন্য দলটির অন্যতম নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে হাছান মাহমুদকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম ওয়ার্ড শাখা ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতির জীবন শুরু করা ড. হাছান মাহমুদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সেই সঙ্গে তিনি এর আগে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বে ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন আঙ্গিকে উষ্ণ করতে চায় বাংলাদেশ। আর এ কারণেই তাকে বেছে নেওয়া।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমকে গতিশীল রাখতে বিগত বছরগুলোর মতোই ওবায়দুল কাদেরের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। আর এ কারণেই আবারও এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যার পর থেকে কলেজ জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত এই নেতা ৫ বছর জেলে বন্দি থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় জেলেবন্দি এই নেতাকে ছাত্রলীগের সভাপতি ঘোষণা করা হয়। নিজ আসন নোয়াখালী-৫ থেকে এখন পর্যন্ত ৫ বার বিজয়ী হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। ২০১৪ সাল থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। অন্যদিকে ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিনি। দলটির সবচেয়ে দীর্ঘ সময় দায়িত্বে থাকা সাধারণ সম্পাদকও তিনি।
এবারের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ একটি নাম আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকলেও পূর্বে মন্ত্রী হিসেবে তার অভিজ্ঞতা ছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালনার। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দিনাজপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, অর্থ বিভাগকে নতুন করে সাজাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষত অর্থ খাত এবং এই সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি বন্ধে শক্ত হাতে বিষয়গুলো দমনের জন্য কাউকে খোঁজা হচ্ছিল। আওয়ামী লীগের ইশতেহারেও এবার এ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। আর দৃঢ়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং শক্তহাতে অর্থ খাতের দুর্নীতিকে মোকাবিলার জন্যই আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে বেছে নেয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩) গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া নিয়েও রয়েছে আলোচনা। আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত এই সংসদ সদস্যকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার কেন্দ্রের খুব কাছাকাছি দেখা যায়নি। তার মন্ত্রী হওয়া এবং গৃহায়ন ও গণূপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্জনের বিষয়টি দলীয় ফোরামেও প্রশংসা কুড়িয়েছে। সাবেক এই আমলা ২০১১ সালে উপনির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি ১৯৭১ সালে মুজিব বাহিনীর অধীনে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলে তিনি দেশব্যাপী গণতান্ত্রিক ছাত্রআন্দোলন ও প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন।
১৯৭৫ সালের ২০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলের নেতৃত্বদান ও ৪ নবেম্বর ঢাকার রাজপথে প্রথম প্রতিবাদ মিছিলের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৬ সনের অক্টোবরে গ্রেফতার হয়ে প্রায় ২ বছর কারাবরণ করেন এবং ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে মাসে হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তি পান।
এবারের মন্ত্রিসভায় তরুণদের স্থান দেওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হয়ে রয়েছেন শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল (চট্টগ্রাম-৯)। চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিবারের এই সদস্য সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসেবে ছিলেন। এবার সরাসরি তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। মহিবুল হাসান চৌধুরী লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স থেকে স্নাতক পাশ করে লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি সম্পন্ন করেন। তিনি ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি সর্বকনিষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন। তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, শিক্ষাব্যবস্থায় যে আমূল পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা রয়েছে, সেখানে দীর্ঘ সময় কাজ করার লক্ষ্য নিয়েই তরুণ একজনকে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সরকারের পক্ষে লিয়াজোঁ করে যাচ্ছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী (ঢাকা-৯)। নিজ আসনে জনপ্রিয় এই সংসদ সদস্যকে এবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে সফল বিসিবি সভাপতি হিসেবে এখনো তাকে বিবেচনা করা হয়, যার তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস মর্যাদা লাভ করে। সামনে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জলবায়ু পরিবর্তন। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন উন্নত দেশগুলোর অর্থ ছাড়। আর এ বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেগোসিয়েশনের প্রয়োজন থেকেই এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে সাবের হোসেন চৌধুরীকে নিয়ে আসা।
টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে চমক দেখিয়েছেন ডা. সামন্ত লাল সেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। দেশজুড়ে গঠিত বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করা এই ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বড় ধরনের বিপ্লব ঘটাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির জন্য সুপরিচিত একজন চিকিৎসক তিনি।
শপথপাঠ অনুষ্ঠানে নিজ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে খ্যাতনামা এ চিকিৎসক বলেন, ‘আমি স্বপ্নেও ভাবিনি যে মন্ত্রী হবো। এটা আমার কাম্য ছিল না। যাই হোক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর আস্থা রেখে মন্ত্রিত্ব দিয়েছেন, আমি সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করব।’
মন্ত্রিত্ব পাওয়ার বিষয়ে অবাক হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ফোন পেয়ে আমি ভেবেছিলাম, তার মনে হয় কোনো রোগী আছে এখানে। কিন্তু তার কথা শুনে আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আমি তো প্রথমে বিশ্বাসই করিনি! ভেবেছিলাম ভুল ফোন হতে পারে। তবে সত্যিই আমি মন্ত্রী হলাম। এটা আমার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ।’
মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন না হওয়া আসাদুজ্জামান খান কামাল (ঢাকা-১২) তার সঠিক অবস্থানেই রয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। বিশেষত বিগত কয়েক বছর জঙ্গিদের উত্থানের আপ্রাণ চেষ্টা, চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উত্থান তথা সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য তার ভূমিকাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। আর এ কারণেই তার চলমান কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে এই মন্ত্রণালয়ে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। ২০০৮ সাল থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। ২০১৪ সালে প্রথম স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন তিনি। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে নতুন মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এবারও একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
আওয়ামী লীগের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা আ ক ম মোজাম্মেল হক (গাজীপুর-১) আবারও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় নেতৃত্বদানের মাধ্যমেই ছাত্রলীগ রাজনীতিতে পদযাত্রা। তিনি ১ মেয়াদে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও দুই মেয়াদে সহ-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ গাজীপুরে সর্বপ্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে তিনি সশস্ত্র প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেবের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন এবং ব্রিগেডিয়ার জাহানজেবকে জয়দেবপুর থেকে ফেরত চলে আসতে বাধ্য করেন। তিনি স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনবারের বেশি। ২০০৮ সালে পৌর মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করে গাজীপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা আব্দুস সালামকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক রেখে কাজ করে যাওয়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কেও দুর্নীতি মোকাবিলায় বেশ কঠোর কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। আর এ কারণেই দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম এমন একজনকে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত হন। ১৯৯৬ সাল থেকে নিজ আসনে (ময়মনসিংহ-৯) আওয়ামী লীগের প্রার্থী তিনি।
এবারের মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফরহাদ হোসেন (মেহেরপুর-১)। তিনি আবারও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।
এই মন্ত্রিসভার আরেকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মো. আব্দুস শহীদ (মৌলভীবাজার-৪) কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ ১৯৭৩ সালে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ গণমহাবিদ্যালয়ে যোগদান করে শিক্ষকতা পেশা শুরু করেন। তিনি এক সময় চিফ হুইপ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
এদিকে মো. তাজুল ইসলাম ২০১৯ সাল থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বড় কোনো সমালোচনা না থাকায় এবারও এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। মো. ফরিদুল হক খান (জামালপুর-২) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে থাকলেও এবার তিনি পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে এই মন্ত্রণালয় পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন। সাধন চন্দ্র মজুমদার (নওগাঁ-১) রয়েছেন তার আগের দায়িত্বে খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে। অতীতে বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মুহাম্মদ ফারুক খান বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেছেন।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন (কিশোরগঞ্জ-৬) পেয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। রাজবাড়ী-২ আসন থেকে পঞ্চমবারের মতো জয় পেয়ে প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় মো. জিল্লুল হাকিম। রেলমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া এই রাজনীতিবিদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। বিগত তিনটি সরকারেরই টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ছাত্র জীবনে তিনি বাম ধারার রাজনীতিক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সফলতার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালন করায় এবারও নসরুল হামিদ (ঢাকা-৩) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। টানা চারবার ঢাকা-৩ আসনের এই সংসদ সদস্য বিগত ১০ বছর ধরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। কেননা এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই।
যিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন, তিনিও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। পূর্ণমন্ত্রীহীন মন্ত্রণালয় লাভ করা প্রতিমন্ত্রী হলেন মোহাম্মদ আলী আরাফাত। ঢাকা-১৭ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে প্রথম নির্বাচিত হওয়া এই তরুণ রাজনীতিবিদ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। রাজনৈতিক বিষয়ে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনায় অত্যন্ত দক্ষ ও গবেষক এই তরুণ রাজনীতিবিদ চলতি সংসদে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন এটা অনেক আগে থেকেই দলীয় আলোচনায় ছিল।
আবারও নৌ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। নিজ আসনে (দিনাজপুর-২) জনপ্রিয় এই সংসদ সদস্য ২০০৮ সাল থেকেই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর থেকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। তার মন্ত্রণালয়ে কোনো মন্ত্রী নেই। একই রকমভাবে মন্ত্রী নেই জুনাইদ আহমেদ পলক (নাটোর-৩) এর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে। তিনি এককভাবে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এই মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। ২০০৮ সাল থেকে তরুণ এই রাজনীতিবিদ নিজ আসনে জনপ্রিয় হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন এবং ২০১৪ সাল থেকে তিনি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কাজ করছেন।
আওয়ামী লীগের অন্যতম সফল সাধারণ সম্পাদক এবং মুক্তিযুদ্ধকালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা তাজউদ্দীন আহমেদের কন্যা বেগম সিমিন হোসেন রিমি (গাজীপুর-৪) রয়েছেন মহিলা ও শিশু =বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। এ ছাড়াও মো. মহিববুর রহমান (পটুয়াখালী-৪)- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়; জাহিদ ফারুক (বরিশাল-৫)- পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়; কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (খাগড়াছড়ি)- পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়; বেগম রুমানা আলী (গাজীপুর-৩)- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়; শফিকুর রহমান চৌধুরী (সিলেট-২)- প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; আহসানুল ইসলাম টিটু (টাঙ্গাইল-৬)-বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রথমবারের মতো দায়িত্ব লাভ করেছেন।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা