আপডেট : ২৪ অক্টোবর, ২০২২ ১১:৫২
নারী সহকর্মীর স‌ঙ্গে অশোভন আচরণে ইউএনও‌’র শাস্তি ‘তিরস্কার’ 

নারী সহকর্মীর স‌ঙ্গে অশোভন আচরণে ইউএনও‌’র শাস্তি ‘তিরস্কার’ 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

নারী সহকর্মীর স‌ঙ্গে অ‌শোভন আচরণ করায় একজন উপ‌জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা‌কে (ইউএনও) ‌তিরস্কা‌রের দণ্ড দি‌য়ে‌ছে সরকার।

কুড়িগ্রামের চররাজিপুর উপজেলার ইউএনও অমিত চক্রবর্তী‌কে এ দণ্ড দি‌য়ে সম্প্র‌তি প্রজ্ঞাপন জা‌রি ক‌রে‌ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের ইউএনও থাকাকা‌লে নারী সহকর্মীর স‌ঙ্গে অ‌শোভন আচরণ করে‌ছি‌লেন তি‌নি।

প্রজ্ঞাপনে বলা হ‌য়ে‌ছে, কুড়িগ্রামের চররাজিপুর উপজেলার ইউএনও অমিত চক্রবর্তী ২০২১ সালের ২৫ জুলাই থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার ইউএনও হিসাবে কর্মরত থাকাকালে তার অধীন কর্মরত একজন সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সঙ্গে অশোভন আচরণ করা, তার সঙ্গে ফেসবুক মেসেঞ্জারে অশোভন কথোপকথন, তার স্বামী যেন বদলি হয়ে নীলফামারী জেলায় না আসেন সে বিষয়ে চাপ প্রয়োগসহ তার বাচ্চা যেন রংপুরে থাকে, তিনি স্টেশনে থেকে যেন চাকরি করেন, সে বিষয়ে চাপ প্রয়োগ ক‌রেন।

ওই নারী সহকর্মীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও তা‌কে বডি স্প্রে কিনে দেয়া, রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন কথাবার্তা বলা, ফোন দিয়ে ভারসাম্যহীন ও অসঙ্গতিপূর্ণ কথা বলা, রাত ৮টা থেকে ৯টার সময় অফিসে কোনো কাজ না থাকলেও অফিসে বসিয়ে রাখা, তাকে মাস্ক পরে তার সামনে বসতে নিষেধ করা, বন্ধের দিনে ফোন ওয়েটিংয়ে থাকা নিয়ে চাপ প্রয়োগ করার মত শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ এবং একজন নারী সহকর্মীর সঙ্গে খুবই অশোভন আচরণ করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করে কৈফিয়ত তলব করা হয়। একই স‌ঙ্গে তিনি ব্যক্তিগত শুনানি চান কিনা তা জানতে চাওয়া হয়।

'অভিযুক্ত কর্মকর্তা অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণীর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর লিখিত জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানির জন্য আবেদন করলে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয়।'

প্রজ্ঞাপ‌নে বলা হ‌য়ে‌ছে, ব্যক্তিগত শুনানিকালে সরকার পক্ষের নথি উপস্থাপনকারী কর্মকর্তা নীলফামারী জেলা প্রশাসনের উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. আব্দুর রহমান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অভিযোগ বিবরণীর বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, একজন নারী জুনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে এমন অশালীন ও দৃষ্টিকটু আচরণ কাঙ্খিত নয়। অপরপক্ষে অভিযুক্ত কর্মকর্তা অমিত চক্রবর্তী নিজের দাখিল করা লিখিত জবাব সমৰ্থন করে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বিভাগীয় মামলার দায় থেকে অব্যাহতির জন্য অনুরোধ করেন।

'যেহেতু সরকার পক্ষ, অভিযুক্তের বক্তব্য এবং নথি পর্যালোচনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুরুতর হওয়ায় ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা ও প্রকৃত তথ্য উদঘাট‌নের জন্য অভিযোগটি তদন্ত করা প্রয়োজন হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা গত ২৭ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।'

প্রজ্ঞাপ‌নে বলা হ‌য়ে‌ছে, তদন্ত কর্মকর্তা দাখিলকৃত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ' সংঘটনের অভিযোগে রুজুকৃত বিভাগীয় মামলার অভিযোগনামায় বর্ণিত 'অসদাচরণ' এর পর্যায়ভুক্ত অভিযোগগু‌লোর মধ্যে অভিযোগকারীর সঙ্গে ফেসবুক মেসেঞ্জারে অশোভনীয় কথোপকথন/চ্যাটিং করা এবং তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে বডি স্প্রে কিনে দেয়ার মাধ্যমে অভিযুক্ত কর্মকর্তা কর্তৃক অসদাচরণ সংঘটনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

'তদন্ত কর্মকর্তা কর্তৃক উল্লিখিত প্রমাণিত কার্যকলাপ সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী 'অসদাচরণ' এর পর্যায়ভুক্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অমিত চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অভিযোগগু‌লো প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগের মাত্রা ও প্রাসঙ্গিক সকল বিষয় বিবেচনায় তাকে তিরস্কার সূচক লঘুদণ্ড প্রদান করা হলো।'