দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’। এটি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রাসমুদ্রবন্দর থেকে ৫০০ কিলোমিটারের আশপাশে অবস্থান করছে। সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকূলের জেলাগুলোতে প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া হচ্ছে। এটি বড় আকারের ঘূর্ণিঝড় হতে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদেরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আগামীকাল ভোর থেকে সকাল নাগাদ খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
আজ সোমবার সকাল ৯টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বশেষ আট নম্বর বিশেষ বার্তা দিয়েছে। সে বার্তায় বলা হয়, আজ সোমবার সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমে; কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমে; মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পশ্চিমে অবস্থান করছিল সিত্রাং।
এটি আরও ঘনীভূত এবং উত্তর ও উত্তর–পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল ভোর থেকে সকাল নাগাদ খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান আজ সকালে দৈনিক বাংলাকে বলেন, দেশের উপকূলের দিকে সিত্রাং ধেয়ে আসছে। এ ঘূর্ণিঝড়টি দেশের মধ্য উপকূলাঞ্চল তথা পটুয়াখালী, বরিশাল ও ভোলার দিকেই এগোচ্ছে।

তিনি বলেন, মধ্য উপকূলের দিকে এগোলেও সিত্রাং দেশের উপকূলের সর্বত্রই প্রভাব ফেলবে। আমাদের উপকূল আকারে খুব বড় নয় বিধায় সর্বত্রই এর প্রভাব পড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ভারি (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারি (৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবশ্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চাট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের কাছের দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে আট ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বন্দরকে ছয় নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলেছে। এ ছাড়া সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং তাদের পার্শ্ববর্তী দ্বীপ ও চরগুলোকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব ধরনের মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয় থাকতে বলা হয়েছে।
ঢাকায়ও রাত থেকে বৃষ্টি, জনভোগান্তি
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় গতকাল রোববার রাত থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। সকালে বৃষ্টির প্রভাবে যাতায়াতে অসুবিধায় পড়তে হয় অনেককে। বিশেষ করে অফিসগামী ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে কষ্ট হয়।
সকালে মিরপুরের বাসা থেকে বাংলামোটরের কর্মস্থলে আসেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থেকে ভিজে গেছি। রিকশা করে অফিস আসবো, এত টাকা কই পাবো। বৃষ্টির কারণে প্রায় আধভেজা হয়ে অফিসে এসেছি।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা