জীবনের বিশেষ মুহূর্ত বিয়ে। আর এর মূল আকর্ষণ কনের সাজ। কনের সাজে বা ব্রাইডাল সাজে ভিন্নমাত্রা যোগ করে বিয়ে উৎসবকে দেওয়া যায় অনন্যতা। এখন চলছে বিয়ে মৌসুম। ট্রেন্ডি, ফিউশন ও ট্রাডিশনসহ বিভিন্ন সাজ নিয়ে ইদানীং তাই যথেষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সাতকাহনের আজকের মূল প্রতিবেদনে রইলো বর্তমান সময়ের বর-কনের সাজের নানা আয়োজনের খোঁজ।
মনের মতো বিয়ের পোশাক
বিয়ের পোশাকের দিকেও রাখতে হবে আলাদা নজর। কোন রঙের পোশাকে কনেকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় এবং উজ্জ্বল দেখাবে বিষয়টি মাথায় রেখে তা নির্বাচন করতে হবে। প্রথাগত লাল বেনারসি শাড়িতেই যেসব কনেকে অপরূপ লাগবে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। বেনারসি-কাতানের পাশাপাশি নানা রঙের জামদানি, অরগানজা, সিল্ক ও মসলিনে ঝুঁকছেন কনেরা। এসব কাপড় দিয়ে তৈরি করা লেহেঙ্গা আর গাউনের আবেদনও রয়েছে ব্যাপক।
বর্তমান সময়ে রঙের ক্ষেত্রে এসেছে বেশ পরিবর্তন। কনেরা প্রাধান্য দিচ্ছেন সাদা, মিন্ট, হালকা গোলাপি, আইভরি, মিন্ট, ল্যাভেন্ডার ও গোল্ডেন রঙের মতো হালকা রংগুলোকে। তবে বিয়ের শাড়ি বা এর অনুষঙ্গ উজ্জ্বল রঙের হওয়া ভালো।
গয়নায় বৈচিত্র্য
বিয়ের সাজ মানেই জমকালো পোশাক-গহনা হতে হবে, এ ধারণা থেকে বেরিয়ে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে নিজেদের সাজিয়ে তুলছেন এখনকার কনেরা। একটা সময় পর্যন্ত ভাবাই যেত না বিয়ের দিনে বউয়ের গায়ে সোনা ছাড়া ইমিটেশনের গহনা উঠবে। এখন কিন্তু বিয়েতে প্রাধান্য পাচ্ছে সোনার বাইরেও সোনার প্রলেপ দেওয়া বা ভিন্ন ভিন্ন ধাতুর তৈরি ঐতিহ্যবাহী নকশার গহনা। কাটা কাজের নকশা, গলাজুড়ে ভরাট নকশা, মিসরীয় সভ্যতার গহনার নকশা এখন শোভা পায় আধুনিক কনের গহনায়।
আরেকটি বিষয় পোশাকের সঙ্গে মানানসই গহনা, ব্যাগ, জুতা ইত্যাদি এক্সেসরিজও থাকা চাই। বিয়ের জুতা মানেই পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে ঝাঁ চকচকে জুতা- এমন ধারণা এখন অনেকটাই ফিকে। বরং একটু আরামদায়ক জুতাই এখন পছন্দ বেশিরভাগ কনের।
কনের ব্যাগের দিকেও কিন্তু নজর থাকে সবার! আর তাই ব্যাগ কেনার সময় বিয়ের পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে কেনাই ভালো। পোটলি, বটুয়া বা বক্স ক্লাচ এখন ট্রেন্ডি ব্রাইডাল ব্যাগ। এর বাইরে অনেক কনের পছন্দের তালিকায় থাকে কাজ করা ছোট পার্সও।

বিয়ের সাজে নিজস্বতা
একেবারেই ন্যাচারাল লুক মনে হয় এমন সাজ-ইদানীং ব্রাইডাল সাজের ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। তাই বিউটিশিয়ানকে বলতে হবে, ন্যাচারাল মনে হয়; এমন সাজে সাজিয়ে দিতে। এখনকার কনেরা আগের সময়ের মতো ভারী মেকআপ একদমই পছন্দ করছেন না। নিজেকে মেকআপ দিয়ে পরিবর্তন না করে বরং নিজস্বতাকে ফুটিয়ে তোলাই যেন এখনকার মেকআপ ট্রেন্ড। ন্যুড মেকআপের চলের পাশাপাশি লাটে মেকআপ, গ্লোয়ি-ডিউই মেকআপই বেছে নিচ্ছেন এখনকার কনেরা।
আটপৌরে সাবলীল মেকআপকেও প্রাধান্য দিচ্ছেন অনেকেই। এমন মেকআপ করা হচ্ছে এখনকার সময়ে, যাতে করে মেকআপ অনেকটা সময় ঠিকঠাক থাকে। হালকা কিন্তু অনেক লম্বা সময় থাকে এমন স্টাইলের গ্রহণযোগ্যতাই বেশি দেখা যাচ্ছে।
বিয়ের আগে ত্বকের বিশেষ যত্ন
মেকআপ যতই ভালো হোক না কেন, ত্বক ও চুল যদি সুন্দর ও উজ্জ্বল না হয় তাহলে দেখতে মোটেও সুন্দর লাগবে না। তাই বিউটি এক্সপার্টদের পরামর্শ মেনে, মাসখানেক সময় হাতে রেখেই রূপচর্চা শুরু করতে হবে। নিয়ম মেনে ভালোভাবে করতে হবে খাওয়া-দাওয়া। বিয়ের সপ্তাহখানেক আগেই ত্বকের বিশেষ যত্ন নেওয়া শুরু করতে হবে। হাত-পায়ের ওয়াক্সিং, ফেসিয়াল, চুলের ট্রিটমেন্ট আগেই করে ফেলা উচিত।
নয়তো বিয়ের আগে একসঙ্গে সব কাজ করতে গেলে এগুলো আপনার গোটা সাজকেই মাটি করে দিতে পারে। বিয়ের ঠিক এক বা দুদিন আগে ভ্রু প্লাক করতে হবে। বিয়ের দিন সাজার সময় ভ্রু প্লাক করতে গেলে সেখানে দ্রুত মেকআপ করার সময় ভ্রুর জায়গাটিতে যন্ত্রণা, চুলকানি, লাল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে, যা আপনার সুন্দর সাজগোজকে মাটি করে দিতে পারে।
নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি ফাস্টফুড, কোল্ড ড্রিঙ্কস, ভাজাভুজি ও মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন। প্রচুর ফল ও সবজি খান ও মেডিটেশন করুন। বিয়ের অনুষ্ঠানের আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করুন। এতে আপনার ত্বকে ব্রণ বা অন্য কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে এবং মেকআপ ত্বকে খুব সুন্দরভাবে বসবে।
চোখ থাকুক বরের সাজেও
এবার আসা যাক বরের সাজসজ্জায়। বরবেশে বিয়েতে বরের সাজও এখন কম যায় না। বরের পোশাক এখন একই ধরনের রং থেকে বেরিয়ে আরও বর্ণিল হয়েছে। লাল ছাড়াও মেরুন, নীল, সোনালি, গোলাপি, ফিরোজা, সবুজ বা কালো রঙের বরের পোশাক দেখা যায় এখন। এখনকার বরেরা আবার কনের শাড়ি কিংবা লেহেঙ্গার সঙ্গে মিল রেখে নিজের পোশাক বাছাই করেন। তা হতে পারে কনের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে রং কিংবা কনট্রাস্ট কোনো কালার।
বর সাজতে হলে ভারী শেরওয়ানি পরতে হবে এমনও নয়। ফুল আর পাখির নকশা করা প্রিন্স কোট পরেও ভিন্ন বেশে বর সাজতে পারেন। অভিনবত্ব চাইলে যোধপুরি প্যান্টের সঙ্গে প্রিন্স কোট পরা যেতে পারে। বর সাজতে পারেন স্যুট-বুটেও। অনুষঙ্গ হিসেবে কোটপিন, টাই, বো, পকেট স্কয়ার জুতার প্রতি বিশেষ নজর থাকতে হবে। সঙ্গে এক জোড়া কাফলিংস যেন থাকে। বরের সাজটা তাতে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। সনাতন ধর্মের বর শেরওয়ানি ছাড়াও তসর, সিল্কের ভারী কাজের পাঞ্জাবির সঙ্গে ধুতি, দোপাট্টা পরতে পারেন। মাথায় পাগড়ির বদলে পরতে পারেন শোলার টোপর।
বরের বিয়ের পাগড়ি পরার নকশা এবং রঙে এখন ব্যাপক বৈচিত্র্য এসেছে। কেনা পাগড়ির বদলে হাতে বাঁধা পাগড়িতে বিয়ের সাজে আসে ভিন্নতা। সোনালি, তামাটে, লালের মতো উজ্জ্বল রঙ কিংবা ঘিয়ে রঙের পাগড়িতে বর বেশি জমকালো হয়ে ওঠে। আর তা যদি হয় জামদানি, কাতান, মসলিন, হাফসিল্ক কাপড়ের তবে তা আরও চমৎকারভাবে ফুটে ওঠে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা