কমোডিটি এক্সচেঞ্জ সম্পর্কে ধারণা নিতে ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ অব ইন্ডিয়া (এমসিএক্স) পরিদর্শন করে এসেছে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পাঁচ সদস্যের যে প্রতিনিধিদল, তাদের একজনের মেয়াদ আছে আর এক মাস। ফলে তিনি যে জ্ঞান আহরণ করে এসেছেন, সেই জ্ঞান প্রয়োগের কোনো সুযোগই পাবেন না তিনি।
সেই কর্মকর্তা হলেন সিএসইর পরিচালক এমদাদুল ইসলাম। আগামী ২৪ নভেম্বর তিনি অবসরে যাচ্ছেন। ঠিক এক মাস আগে গত ১৮ থেকে ২২ অক্টোবর অন্য চার কর্মকর্তার সঙ্গে তিনিও ভারত সফর করে এসেছেন।
সিএসই দেশে প্রথমবারের মতো নিত্যপণ্যের বড় পরিমাণের মালিকানা হাতবদলের জন্য কমোডিটি এক্সচেঞ্জ স্থাপন করতে যাচ্ছে। বিশ্বের দেশে দেশে এই ধরনের এক্সচেঞ্জ আছে, প্রতিবেশী ভারত তার একটি।
সিএসই প্রতিনিধিদলের টিম লিডার হিসেবে ছিলেন এমদাদুল ইসলাম। তার কাছে প্রশ্ন ছিল- এই সফর থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি সিএসইর কী উপকারে আসবেন, যেখানে এক মাস পর অবসরে যাচ্ছেন।
উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার দেশের জন্য অত্যন্ত একটা ভালো কাজ। আমি এক মাস পর না থাকলেও এই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ না হওয়া পর্যন্ত আমি এটা ছাড়ব না। আমি শেয়ারহোল্ডার হিসেবে যতদিন না মারা যাই, ততদিন থাকব। শেয়ারহোল্ডার হিসেবেও আমার একটা দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা আছে। যখন শেয়ারহোল্ডাররা এই কমোডিটি এক্সচেঞ্জটা পেয়ে যাবে- এই শেয়ারহোল্ডারদের একেকটার লাইসেন্সের দাম কোথায় উঠে যাবে জানেন? যেখানে এক পয়সা তারা পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না, সেখানে ওয়ান গো-তে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার ওপর প্রত্যেকটা শেয়ারহোল্ডার পাবে। এই টাকাটা যে পার্টনার থেকে পাচ্ছি সেটা এক্সচেঞ্জে জমা হবে না, এটা স্ট্রেট ওয়ে সব শেয়ারহোল্ডারের মাঝে সমানভাবে ডিস্ট্রিবিউট হবে।’
এমদাদের দাবি, তার এই সফর জ্ঞানার্জনের বা প্রশিক্ষণের কিছু ছিল না। তিনি বলেন, ‘যে নিউজটি এসেছে আমরা জ্ঞান অর্জন করার জন্য ভারতে গিয়েছি, এটা সম্পূর্ণ ভুল। আমরা প্রশিক্ষণ নিতে যাইনি। প্রশিক্ষণ কি দুই-তিন দিনে হয় নাকি? প্রশিক্ষণ নিতে লাগে তিন-চার মাস। আর বলা হচ্ছে আমরা জ্ঞান অর্জনের জন্য গিয়েছি, ‘আমার তো এত জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজন নেই। আমি শেয়ারহোল্ডার হিসেবে আজীবন এখানে থাকব।’
তবে গত ১৯ অক্টোবর সিএসইর একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য পণ্য ক্লিয়ারিং, সেটেলমেন্ট, ট্রেডিং, গুদামজাতকরণ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনই এ সফরের প্রধান উদ্দেশ্য।’
যদি জ্ঞানার্জন বা প্রশিক্ষণের জন্য নাই যাবেন, তাহলে আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা কেন লেখা- এমন প্রশ্ন করতেই যারা বিজ্ঞপ্তিটি লিখেছেন, তাদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন এমদাদুল। তিনি বলেন, ‘চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে কেউ মামার সূত্রে চাকরি পেয়েছে, কেউ ফুপার সূত্রে চাকরি পেয়েছে। তাই সিএসইর অবস্থা এ রকম আরকি।’
অবশ্য পরিচালকের নিজের বক্তব্য থেকেই উঠে এসেছে যে এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল কমোডিটি এক্সচেঞ্জটাকে এগিয়ে নেয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ভালো কাজের পেছনে কিছু দুষ্টলোক সব সময় থাকে। আমি যেহেতু কমোডিটি এক্সচেঞ্জের শুরু থেকে ছিলাম, তাই এটার ফরমুলেট করার জন্য গিয়েছি।’
একই প্রশ্নে সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম ফারুকের জবাব সুস্পষ্ট ছিল না। তিনি বলেন, ‘কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাই সফরে গেছেন। সেখানে আইটিসংশ্লিষ্ট সবাই ছিল। আর এমদাদুল ইসলাম ছিলেন সবার টিম লিডার।’
এমডি হওয়া সত্ত্বেও আপনি কেন গেলেন না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অফিসে কাজ থাকায় যেতে পারিনি।’
সিএসইর বিজ্ঞপ্তিতে যা উল্লেখ ছিল
১৯ অক্টোবর স্টক এক্সচেঞ্জটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সিএসইর প্রতিনিধিদলটি ১৮ অক্টোবর তাদের পরিদর্শন সফর শুরু করে এবং এমসিএক্স দল আন্তরিকভাবে স্বাগত জানায়। তাদের জ্ঞান ভাগ করে নেয়ার সময় তারা পণ্য বিনিময়ের আরও উন্নয়নের জন্য প্রমিত ডেলিভারি সিস্টেম প্রক্রিয়া বোঝার জন্য ‘বুলিয়ন ভল্ট’ (ভল্ট পরিষেবা প্রদানকারী) পরিদর্শন করেছে।
“পরিদর্শন সপ্তাহ শেষে দুই দিন প্রতিনিধিদল ‘ডেমো লাইভ ট্রেডিং অন ট্রেড ওয়ার্কস্টেশন’-এর অভিজ্ঞতা অর্জন করবে এবং ‘কৃষি গুদামজাতকরণ, গুদামের ভার্চুয়াল সফর, প্রক্রিয়া প্রবাহের ওপর উপস্থাপনা’র মতো একটি উপস্থাপনা উপস্থাপন করা হবে।”
এতে আরও উল্লেখ ছিল, ‘এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পণ্য বিনিময় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পণ্য, ক্লিয়ারিং এবং সেটেলমেন্ট, ট্রেডিং, গুদামজাতকরণ, নিয়ন্ত্রক দিক ইত্যাদি বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান সংগ্রহ করা।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা