তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বর্বরতা তথা গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সাময়িকভাবে বন্ধের জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আজ শুক্রবার রায় দেবে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। এদিকে গাজার খান ইউনুস শহরে ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে তীব্র যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। খবর রয়টার্স, আল-জাজিরা।
আইসিজের এক্স অ্যাকাউন্টে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর ১টায় রায় দেওয়া হবে। এর আগে অবশ্য আইসিজেতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সেখানে তেল আবিবের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার অভিযোগ আনে দেশটি।
রায়ে জরুরি আদেশ দিয়ে এই ধ্বংসলীলা থামানোর প্রত্যাশা করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওই সংবাদ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিচার মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিসপিন ফিরি এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, আদালত কখন এ রায় ঘোষণা করবেন, তা নিয়ে আদালতের সঙ্গে আমাদের আনুষ্ঠানিক কোনো যোগাযোগ নেই।
মামলার শুনানি শুরু হয় গত ১১ জানুয়ারি। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এই অভিযোগকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, দক্ষিণ আফ্রিকা ‘ইসরায়েলকে ধ্বংসের’ আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে দেশটির গণহত্যার দাবির ‘বাস্তব ও আইনগত ভিত্তি’ উভয়ই নেই বলে মন্তব্য করেছে দেশটি। অন্যদিকে আইসিজেকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে গাজায় ফিলিস্তিনিদের অধিকারকে ‘আসন্ন অপূরণীয় ক্ষতির হাত থেকে’ রক্ষা করার জন্য ‘অস্থায়ী ব্যবস্থা’ গ্রহণ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
১৯৪৮ সালে গণহত্যার বিরুদ্ধে যে কনভেনশন হয়েছে সেটির স্বাক্ষরকারী দেশ ইসরায়েল। এতে গণহত্যাকে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলোকে এটি প্রতিরোধে বাধ্য করার কথা বলা হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার হাইকোর্টের আইনজীবী টেম্বেকা এনগকুকাইতোবি আইসিজের আদালতে বলেন, “সামরিক হামলা চালানোর ধরন দেখেই ইসরায়েলের ‘গণহত্যার অভিপ্রায়’ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে গাজাকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রটির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।”
এদিকে গাজায় সামরিক হামালাকে প্রথম থেকেই ‘যুক্তিযুক্ত’ বলে দাবি করে আসছে ইসরায়েল। তেল আবিবের দাবি, হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে এই আক্রমণ করছে তারা।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আইনি সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত এই আদালত দুই দেশের মধ্যে বিরোধ মেটাতে পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। আইসিজের দেওয়া সিদ্ধান্তগুলো মেনে চলার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে তা মানার জন্য কোনো দেশের ওপর খুব কম শক্তিই খাটাতে পারেন এই আদালত। তবে এর মতামত জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে।
খান ইউনুসে তুমুল লড়াই করছে হামাস
গাজার খান ইউনুস শহরের পশ্চিম, দক্ষিণ এবং পূর্বদিকে ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে তীব্র যুদ্ধ হচ্ছে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের। ইসরায়েলের হামলা থেকে রক্ষা পেতে নিজেরাই প্রতিরোধ দেয়াল গড়ে তুলেছেন হামাস সদস্যরা। যুদ্ধ-পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তিনটি ফ্রন্টে ইসরায়েলি সেনাদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে হামাস। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার এবং ক্রিটিক্যাল থ্রেটস প্রজেক্ট রিপোর্টে বলেছে, গাজা উপত্যকার উত্তর দিয়ে ফিলিস্তিনি এই যোদ্ধাগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আকাশপথে বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
এদিকে খান ইউনুসে নাসের হাসপাতালের চত্বরে স্টাফরা কবর খুঁড়ছেন। কারণ, ওই হাসপাতালে কেউ প্রবেশ করতে বা বের হতে পারছেন না। সেখানে হামলায় বিপুল পরিমাণ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। খান ইউনুসে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘ পরিচালিত একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ইসরায়েল বোমা হামলা করেছে। এতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৯ জন। এর নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক এজেন্সি। ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি রিপোর্টে বলছে, খান ইউনুসে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার অংশ হিসেবে আল আমাল হাসপাতালের চারপাশে পুরোপুরি কারফিউ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা