আপডেট : ২৫ অক্টোবর, ২০২২ ১৪:২৮
যে নির্বাচন নিয়ে চোর-ডাকাত-গুণ্ডারাও বিভক্ত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

যে নির্বাচন নিয়ে চোর-ডাকাত-গুণ্ডারাও বিভক্ত

ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও শহর। একটি নির্জন স্থানে গভীর রাতে গোপন বৈঠকে বসে এক ব্যাংক ডাকাত সর্দার, এক অস্ত্র চোরাচালানকারী এবং এক মাদক পাচারকারী। আর তাদের পাহারা দিচ্ছে সশস্ত্র দেহরক্ষীরা। তবে বৈঠকে নতুন কোনো অপরাধের নীলনকশা করতে নয় বরং রাজনীতি, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা তুমুল তর্কবিতর্কে জড়িয়েছেন।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপের ভোট আগামী ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। সে দিনই ভোটাররা চূড়ান্ত করবেন, ব্রাজিলের পরবর্তী কর্ণধার হিসেবে বামপন্থি সাবেক প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভাকে বেছে নেবেন নাকি বর্তমান ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকেই বহাল রাখবেন।

রিও ডি জেনেরিওর ওই বৈঠকে একজন অস্ত্র চোরাচালানকারী স্বীকার করেন যে, লুলার চেয়ে বলসোনারোর আমলেই তুলনামূলকভাবে অনেক সহজে অস্ত্র ও গুলি সংগ্রহ করতে পেরেছেন তারা। তবে ব্রাজিলের গরিব মানুষের জন্য লুলাকেই সবচেয়ে ভালো শাসক বলে তিনি বিবেচনা করেন। তিনি যুক্তি দেখান, বামপন্থি নেতা লুলা প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ে গৃহীত সামাজিক কর্মসূচিগুলো লাখ লাখ মানুষের দারিদ্র্য ঘোচাতে সহায়তা করেছে।

ওই অস্ত্র চোরাচালানকারী বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবারের জন্য হয়তো বলসোনারো ভালো। কিন্তু যে আমার শেকড়, যে অবহেলিত ফাভেলা বস্তিতে, সেখানকার শিশুদের ভবিষ্যৎ কী হবে?’

তবে অস্ত্র চোরাচালানকারীর সঙ্গে একমত নন আরেক অপরাধী ডাকাত সর্দার। তার মতে, লুলা খুবই খারাপ। লুলার ওয়ার্কাস পার্টি ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে দুর্নীতি লুটপাট কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দেশকে অধপাতে নিয়ে গেছে। তাই নতুন করে তাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে কোনোভাবে রাজি নয় ডাকাত সর্দার।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে অসংলগ্ন নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচন নিয়ে ব্রাজিলের সমাজের যে বিভাজন দেখা গেছে তার ক্ষুদ্র একটি নমুনাই অপরাধী চক্রটির তর্কবির্তকে ওঠে এসেছে।

পোলিং গ্রুপ কোয়েস্টের প্রধান ফেলিপ নুনেস লুলা আর বলসোনারোর মধ্যকার নির্বাচনী লড়াইয়ের আগে ভোটারদের মধ্যে মতামত জরিপ চালায়। তিনি বলেন, জরিপে ৫০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন বলসোনারোকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয়া উচিত। একই চিত্র লুলার ক্ষেত্রে এসেছে। অর্থাৎ ৫০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলসোনারোকে চান বাকি ৫০ শতাংশ লুলার পক্ষে মত দিয়েছেন।

ফেলিপ বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ বিভাজনের অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছি, যা শুধু দুই ব্যক্তির মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা নয়—বরং দুটি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যকার লড়াই। ব্রাজিলের ইতিহাসে এমন লড়াই কখনো হয়নি। দেশ যেন ভাগ হয়ে গেছে।

এমনকি রিও ডি জেনিরোর অপরাধীরাও তাদের অবৈধ ব্যবসার কথা বিবেচনায় না এনে দেশের জন্য কে সেরা প্রেসিডেন্ট হবে তা নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

ফেলিপ বলেন, এই মুহূর্তে ব্রাজিলের সার্বিক অবস্থা বোঝাতে শুধু বলা যায় দেশ বিভক্ত হয়ে গেছে। সমাজ, ধর্ম, মানুষ, অর্থনীতি, সংস্কতি সবকিছু বিভাজিত হয়ে পড়েছে। লুলাকে যদি গরিবরা ভোট দেয় তাহলে ধনীদের ভোট বলসোনারোর পক্ষে পড়বে। কৃষ্ণাঙ্গরা লুলাকে ভোট দিলে শ্বেতাঙ্গদের ভোট বলসোনারো পাবেন। নারীরা লুলাকে ভোট দিলে বলসোনারো পাবেন পুরুষদের ভোট। প্রোটেস্ট্যান্টরা বলসোনারোকে দিলে ক্যাথলিকরা দেবে লুলাকে ভোট। ফেলিপ বলেন, এবারের নির্বাচন যেন দুই ব্রাজিলের মধ্যে একটি সংঘাত।