চোটাঘাতে ক্ষয়ে গেছে পেস বোলিংয়ের ধার, শ্রীলঙ্কার আশার তরি ভাসানো ছিল স্পিনে। অথচ সে স্পিনকেই পাখির চোখ করলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা। লঙ্কান স্পিনারদের মধ্যমণি ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে নিয়ে রীতিমতো খেললেন স্টয়নিস-ম্যাক্সওয়েলরা। মার্কাস স্টয়নিস তো এমনই ঝড় তুললেন যে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডও হলো। তাতে নেট রানরেটের ঘাটতি মেটানোর দাবি মিটিয়ে জিতল অস্ট্রেলিয়া। গতকাল পার্থে ২১ বল এবং ৭ উইকেট হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে স্বাগতিক দল।
১৫৮ রানের লক্ষ্যে শুরুটা হয়েছিল অত্যন্ত মন্থর গতির। টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম পাওয়ার প্লেতে একবারও সীমানার বাইরে বল পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অ্যারন ফিঞ্চ টেস্টের ছন্দে ব্যাট করছিলেন, অন্যপ্রান্তে থাকা ওয়ার্নারের ওপর তাতে রান তোলার চাপ বেড়ে যায়। তা করতে গিয়ে মহেশ তিকশানার প্রথম বলে ক্যাচ তুলে আউট ওয়ার্নার (১১)।
তিনে নেমে ফিঞ্চের ধীরগতির ইনিংসের সঙ্গে তাল মেলান মিচেল মার্শও। নিজের প্রথম ১২ বলে মাত্র ৫ রান তুলতে পেরেছিলেন। তবে অষ্টম ওভারে হাসারাঙ্গা বোলিংয়ে আসতেই বদলে যায় দৃশ্যপট। তার ওভার থেকে এক চার ও ছক্কায় ১৪ রান তোলেন মার্শ। মার্শের দেখাদেখি খোলস ছেড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ফিঞ্চ।
পরের ওভারের প্রথম বলেই ধনঞ্জয়াকে ডিপ মিড উইকেট ছক্কা অধিনায়কের। এরপরই ফের খোলসবন্দি করেন নিজেকে, শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেন ৪২ বলে ৩১ রানে। নিজের ব্যাটিং নিয়ে হতাশ খোদ ফিঞ্চও, ‘আমার ইনিংস ছিল স্বভাববিরুদ্ধ। বাজে ছিল। আমি বল মারতে পারছিলাম না।’
ফিঞ্চ যেখানে ব্যর্থ, সেখানেই সফল ম্যাক্সওয়েল-স্টয়নিস। নবম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার রান যখন ৬০, তখন ধনঞ্জয়ার শিকার মার্শ (১৮)। চারে নেমে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। দুটি করে চার এবং ছয়ে লঙ্কানদের কাছ থেকে ম্যাচের লাগাম এনে দেন অস্ট্রেলিয়ার হাতে। তবে ১৩তম ওভারে চামিকা করুনারত্নেকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে একেবারে সীমানায় বান্দারার তালুবন্দি হয়ে ফেরেন ১২ বলে ২৩ রান করা ম্যাক্সওয়েল।
মার্ক স্টয়নিস যখন ক্রিজে আসেন, অস্ট্রেলিয়ার তখন ৪৬ বলে ৬৯ রান প্রয়োজন। ওভারপ্রতি ৯ রান তোলার বড়সড় চ্যালেঞ্জ উঁকি দিচ্ছিল। তবে স্টয়নিস সেসবকে পাত্তাই দিলেন না। লঙ্কান বোলারদের নিয়ে স্রেফ ছেলেখেলা করে ২১ বলেই আগেই দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছেন। নিজে ১৮ বলে ৪ চার, ৬ ছক্কায় ৫৯ রান করে গড়েছেন অনন্য রেকর্ড। ১৭ বলে ফিফটি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দ্রুততম।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের গতি আর বাউন্সের সামনে কুলিয়ে উঠতে পারেননি লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। দ্বিতীয় ওভারে ফর্মে থাকা ওপেনার কুশল মেন্ডিস (৫) পুল করতে গিয়ে ফেরেন ক্যাচ হয়ে। দ্বিতীয় উইকেট জুটি গড়ে তোলেন পাথুম নিসাঙ্কা এবং ধনঞ্জয়া। তবে তাদের প্রায় ৯.৪ ওভারে ৬৯ রানের জুটিতে পরের ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপই বেড়েছে।
সে চাপের মধ্যে দাঁড়িয়ে ২৫ বলে ৩৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে ১৫৭ রানের সম্মানজনক সংগ্রহ এনে দেন চারিথ আসালাঙ্কা। তবে স্টয়নিস-ঝড়ের সামনে এই রানকেও মামুলিই মনে হয়েছে।
এই জয়ে পয়েন্ট তালিকায় চারে উঠে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। ২ ম্যাচ থেকে তাদের পয়েন্ট এখন ২। প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে বড় হারের কারণে নেট রানরেট অবশ্য এখনো নেতিবাচক, -১.৫৫৫।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৫৭/৬ (নিসাঙ্কা ৪০, আসালাঙ্কা ৩৮*, ধনঞ্জয়া ২৬; ম্যাক্সওয়েল ১/৫, স্টার্ক ১/২৩, আগার ১/২৫)।
অস্ট্রেলিয়া: ১৬.৩ ওভারে ১৫৮/৩ (স্টয়নিস ৫৯*, ফিঞ্চ ৩১*, ম্যাক্সওয়েল ২৩; ধনঞ্জয়া ১/১৮, চামিকা ১/২১, তিকশানা ১.২৩)।
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মার্কাস স্টয়নিস (অস্ট্রেলিয়া)।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা