আপডেট : ২ জুলাই, ২০২২ ০৫:৫৪
অবশেষে তিনি পেলেন...

অবশেষে তিনি পেলেন...

ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা শেষে ‘সোনার হরিণ’ হাতে আব্দুর রহিম। ছবি: দৈনিক বাংলা

আসাদুজ্জামান নূর

টিকিটের জন্য শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন আব্দুর রহিম। দীর্ঘ অপেক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি না পেয়ে রাত কাটান কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনেই। শনিবার সকাল হতেই ফের শুরু হয় টিকিট পাওয়ার লড়াই।

লাইনে দাঁড়িয়ে ‘সোনার হরিণের’ অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের এ ছাত্র। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অবসান হয় প্রতীক্ষার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে অবশেষে টিকিট ওঠে আব্দুর রহিমের হাতে।

কাউন্টারের সামনের ভিড় ঠেলে হাসিমুখে বেরিয়ে আসেন জয়পুরহাটের টিকিট পাওয়া এ শিক্ষার্থী;  দৈনিক বাংলার কাছে প্রকাশ করেন অভিব্যক্তি।


‘এত দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে পেলাম! টিকিট তো নয়, মনে হচ্ছে সোনার হরিণ দিচ্ছে তারা। এত ভিড়!’, ক্লান্তি আর শঙ্কা ভুলে এক চিলতে হাসি দিয়ে কথাগুলো বলছিলেন আব্দুর রহিম।

‘গতকাল বিকাল ৪টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। তারপরও যে পেলাম, এতেই আলহামদুলিল্লাহ!’, যোগ করেন এ শিক্ষার্থী।

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে শুক্রবার থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। দ্বিতীয় দিনের টিকিট বেচা শুরু হয় শনিবার সকাল ৮টা থেকে।

আগের দিনের মতো শনিবারও কমলাপুরে টিকিটপ্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। বাড়ি ফেরার টিকিটের জন্য মরিয়া এসব মানুষের একজন দিনাজপুরের পার্বতীপুরের তানভীর।

অগ্রিম টিকিটের আশায় তিনিও লাইনে দাঁড়ান শুক্রবার বিকেলে। শনিবার সকালে টিকিট পাওয়া সৌভাগ্যবানদের একজন তিনি।

তানভীর বলেন, ‘বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাব। গতকাল বিকেলে এসেছি, যাতে টিকিট পাই। কারণ সড়কপথে যানজট, দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি। টিকিট পেয়ে ভালো লাগছে।’

শনিবার ভোররাতে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন সিরাজগঞ্জের মানিক। ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ৬ জুলাইয়ের কাঙ্ক্ষিত সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসের টিকিট পান তিনি।

হাসিমুখে তিনি বলেন, ‘টিকিট হাতে পাওয়ার পর কষ্ট ভুলে গেছি। এখন বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারব।’


লাইনে রেলের কর্মীও

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের অনুসন্ধান বিভাগের কর্মী আনিসুরও অন্যদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছেন টিকিটের লাইনে। রেলওয়ের শৃঙ্খলার উদাহরণ দিতে গিয়ে গর্বিত স্বরে তিনি বলেন, ‘রেলের কর্মী বলেই যে লাইনে না দাঁড়িয়ে টিকিট পাব, তা নয়। আমাদেরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে টিকিট নিতে হচ্ছে।’

কবে কোন দিনের টিকিট

টিকিট বিক্রি শুরুর দিন ১ জুলাই দেয়া হয় ৫ জুলাইয়ের টিকিট। ২ জুলাই দেয়া হচ্ছে ৬ জুলাইয়ের টিকিট।


৩ জুলাই ৭ জুলাইয়ের, ৪ জুলাই দেয়া হবে ৮ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট। ৫ জুলাই দেয়া হবে ৯ জুলাইয়ের টিকিট।

ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হবে ৭ জুলাই থেকে। ওই দিন ১১ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হবে।

এর বাইরে ৮ জুলাইয়ে ১২ জুলাইয়ের টিকিট, ৯ জুলাই ১৩ জুলাইয়ের, ১১ জুলাই ১৪ এবং ১৫ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হবে।

১১ জুলাই সীমিত পরিসরে কয়েকটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করবে। ১২ জুলাই থেকে সব ট্রেন চলবে।

কোথায় কোন গন্তব্যের টিকিট

ঢাকায় ছয়টি স্টেশন এবং গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে থেকে ঈদের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সমগ্র উত্তরাঞ্চলগামী আন্তনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। কমলাপুর শহরতলী প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।


ঢাকা বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে মিলছে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও দেওয়ানগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট।

ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যাচ্ছে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট। ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে মিলছে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট। গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যাচ্ছে পঞ্চগড়ের ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট।