বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হচ্ছে আজ শুক্রবার। তিন দিনব্যাপী এই ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা। ঢাকার অদূরে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে এরই মধ্যে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন মুসল্লিরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়েছে ইজতেমার মূল অংশ আম বয়ান। বিদেশি অতিথিদের কেউ আম বয়ান করলে সর্বসাধারণের বোঝার সুবিধার্থে তাৎক্ষণিক তা তরজমার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। আজ জুমার দিন হওয়ায় মাঠের চারপাশ ও আশপাশের সড়কে মুসল্লিরা জমায়েত হয়ে জুমার নামাজ আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামী রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ওই মোনাজাতেও প্রথম পর্বের মতো লাখো মুসল্লির উপস্থিতি হতে পারে বলে ধারণা করছেন আয়োজক ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ জন্য শুরু থেকেই ইজতেমা উপলক্ষে আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
একই মাঠে প্রথম পর্বের ইজতেমা সম্পন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় পর্ব শুরুর আগে গত কয়েক দিন ধরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোরেশোরে চালানো হয় মাঠটি পরিষ্কারের কাজ। এরপর তা বুঝিয়ে দেওয়া হয় আয়োজকদের কাছে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে এরপর তাঁবু টানানোসহ বিভিন্ন খুঁটিনাটি কাজ সম্পন্ন করে গতকাল সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় আম বয়ান।
এদিকে এবারের ইজতেমায় গতকাল পর্যন্ত মাওলানা সাদ কান্ধলভির অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়নি। তবে গতকাল সন্ধ্যায় ইজতেমা ময়দানে পৌঁছেছেন মাওলানা সাদের তিন ছেলে। তাঁরা হলেন মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি, মাওলানা সাঈদ কান্ধলভি ও মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভি। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুসল্লিরা গতকাল বুধবার থেকে ইজতেমা ময়দানে জড়ো হতে থাকেন। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থেকে দুই হাজারের বেশি মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে জড়ো হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম।
ইজতেমায় ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনা
এদিকে, ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে রাজধানীতে চলাচলকারী ও রাজধানীর বাইরে থেকে আসা যানবাহনগুলোকে আজ শুক্রবার থেকে আগামী রোববার পর্যন্ত চলাচলে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশ (ডিএমপি)।
এতে কোথায় গাড়ি রাখতে হবে ও কোন কোন সড়কে যানবাহনকে ভিন্ন সড়কে চলাচল করতে হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে:
গাড়ি পার্কিং বিষয়ে: ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের যানবাহনগুলো রাখার জন্য বিভাগ অনুযায়ী পার্কিং পরিকল্পনা দিয়েছে ডিএমপি। এগুলো হচ্ছে:
ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ পার্কিং: উত্তরা ১৫নং সেক্টর এলাকাধীন কদমতলী মার্কেট, ৫নং ব্রিজের ঢাল এবং ১৭নং সেক্টর উলুদাহ মাঠ।
সিলেট ও খুলনা বিভাগ পার্কিং: উত্তরা ১৫নং সেক্টর লেকপাড় মাঠ।
রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ পার্কিং: ১০নং ব্রিজ, ১১নং ব্রিজ লেকের পশ্চিম পার্শ্ব, ১৬নং সেক্টরের ভেতরে ও বউবাজার মাঠ।
বরিশাল বিভাগ পার্কিং: ধউর ব্রিজ ক্রসিংসংলগ্ন বিআইডব্লিউটিএ ল্যান্ডিং স্টেশন।
ঢাকা মহানগরী পার্কিং: ৩০০ ফিট রাস্তা সংলগ্ন স্বদেশ প্রোপার্টির খালি জায়গা।
ডাইভারশন বিষয়ে: শুধু আখেরি মোনাজাতের দিন আগামী ১১ ফ্রেব্রুয়ারি ভোর ৪টা থেকে ধউর ব্রিজ, উত্তরা ১৮নং সেক্টর পঞ্চবটি ক্রসিং, পদ্মা ইউলুপ, ১২নং সেক্টর খালপাড়, মহাখালী ক্রসিং, হোটেল রেডিসন ব্লু ক্রসিং, ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে (বিশ্বরোড নিকুঞ্জ-১ কেসি গেট), কুড়াতলী ফ্লাইওভার লুপ-২, মহাখালী ফ্লাইওভার পশ্চিম পার্শ্ব ও মিরপুর দিয়াবাড়ি বাসস্ট্যান্ড ক্রসিং।
বিশেষ নির্দেশনা: আখেরি মোনাজাতের দিন ভোর ৪টা থেকে আন্তজেলা বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও অন্যান্য ভারী যানবাহন আব্দুল্লাহপুর, ধউর ব্রিজ মোড়ের বদলে মহাখালী-বিজয় সরণি-গাবতলী হয়ে চলাচল করবে।
অনুরূপভাবে নবীনগর, বাইপাইল ও আশুলিয়া হয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে আগত যানবাহনসমূহ কামারপাড়া/আব্দুল্লাহপুর ক্রসিংয়ের বদলে সাভার, গাবতলী দিয়ে চলাচল করবে অথবা ধউড় ব্রিজ ক্রসিং হয়ে মিরপুর বেড়িবাঁধ দিয়ে চলাচল করবে।
ঢাকা থেকে এয়ারপোর্ট রোড দিয়ে আগত যানবাহনগুলো কুড়িল ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে প্রগতি সরণি হয়ে অথবা বিশ্বরোড ক্রসিং (নিকুঞ্জ-১ কেসি গেট) দিয়ে ইউটার্ন করে চলাচল করবে।
আখেরি মোনাজাতের দিন ভোর ৪টা হতে ৩০০ ফিট দিয়ে আগত যানবাহনগুলো কুড়িল ফ্লাইওভার লুপ-২ (এয়ারপোর্টগামী পথ) দিয়ে যেতে পারবে না। এগুলোকে প্রগতি সরণি এবং কুড়িল ফ্লাইওভার লুপ-৪ (কাকলী মহাখালীগামী) ব্যবহার করতে হবে। কোনোভাবেই বিমানবন্দর সড়ক ব্যবহার করা যাবে না।
আখেরি মোনাজাতের দিন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা/এয়ারপোর্টগামী এক্সিট ব্যবহার না করারও অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি।
এ ছাড়া উত্তরার বাসিন্দা, বিমানযাত্রী, বিমান অপারেশনাল যানবাহন ও বিমান ক্রু বহনকারী যানবাহন, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সব ধরনের যানবাহনের চালক বিমানবন্দর সড়ক এড়িয়ে বিকল্প হিসেবে মহাখালী বিজয় সরণি হয়ে মিরপুর-গাবতলী সড়ক ব্যবহার করবেন।
ঢাকা মহানগর থেকে যেসব মুসল্লি পায়ে হেঁটে বিশ্ব ইজতেমাস্থলে যাবেন, তারা তুরাগ নদীর ওপরে নির্মিত বেইলি ব্রিজ অথবা কামারপাড়া ব্রিজ দিয়ে টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে যাতায়াত করবেন।
বিদেশগামী যাত্রীদের বিমানবন্দরে আনা-নেওয়ার জন্য আখেরি মোনাজাতের দিন পদ্মা ইউলুপ এবং কুড়াতলী লুপ-২ হতে ট্রাফিক-উত্তরা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় যাত্রীদের জন্য পরিবহন সেবা প্রদান করা হবে।
নির্ধারিত পার্কিং স্থানে মুসল্লিবাহী যানবাহন পার্কিংয়ের সময় অবশ্যই গাড়ির চালক/হেলপার গাড়িতে অবস্থান করবেন এবং বহনকারী যাত্রীরা ও চালক একে-অপরের মোবাইল নম্বর নিয়ে রাখবেন, যাতে বিশেষ প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে পারস্পরিক যোগাযোগ করা যায়। গাড়ির সামনে ড্রাইভারের মোবাইল নম্বর দৃশ্যমান রাখতে হবে।
এ ছাড়া খিলক্ষেত থেকে আব্দুল্লাপুর হয়ে ধউড় ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে পার্কিং করা যাবে না বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ডিএমপি।
ট্রাফিক সম্পর্কিত যেকোনো তথ্যের জন্য ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম: ০১৭১১-০০০৯৯০সহ ঢাকা ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নম্বরে এবং পুলিশি সহায়তার জন্য জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা