হুমায়ুন ফরীদি- দেশীয় শোবিজের এক বাতিঘর এবং কিংবদন্তির নাম। আশি ও নব্বইয়ের দশকে যে কজন অভিনয়শিল্পী মঞ্চ ও টিভি নাটককে জনপ্রিয় এবং আলোচিত করেছিলেন, হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। জীবদ্দশায় তিন দশকেরও বেশি সময় চলচ্চিত্রেও সমান দাপটের সঙ্গে অভিনয়ের মাধ্যমে রং ছড়িয়ে গেছেন নন্দিত ও বরেণ্য এই অভিনেতা। এর সুবাদে দেশ-বিদেশের অসংখ্য ভক্তের মনে চিরস্থায়ী আসন করে নেন তিনি। নায়ক কিংবা খলনায়ক সব চরিত্রেই সমান পারদর্শিতা দেখানো এই গুণী শিল্পী কাটিয়েছেন অভিনয়ের বর্ণাঢ্য জীবন। তিনি এখনো আছেন সবার হৃদয়ে। ভক্তদের ভালোবাসায় হুমায়ুন ফরীদি একজন অমর অভিনেতা।
নাটক, চলচ্চিত্র কিংবা মঞ্চ- সবখানেই ছিল তার অবাধ বিচরণ। শুধু অভিনয় দিয়েই দর্শককে বিমোহিত করেছিলেন ডাকসাইটে এই অভিনেতা। তাকে বলা হয় অভিনেতাদের অভিনেতা, একজন আদর্শ শিল্পী। তার অভিব্যক্তি, অট্টহাসি, ব্যক্তিত্বের ভক্ত কে না চেনেন! অনেকের কাছে তার ব্যক্তিজীবনের গল্পও বেশ অনুপ্রেরণার। কিন্তু চলে গিয়েছিলেন বড় অসময়ে। ২০১২ সালের এই দিনে (১৩ ফেব্রুয়ারি) অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে পাড়ি দেন না ফেরার দেশে। আজ এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী।
হুমায়ুন ফরীদির জন্ম হয়েছিল ১৯৫২ সালের ২৯ মে, ঢাকার নারিন্দায়। বাবার নাম এ টি এম নুরুল ইসলাম, মায়ের নাম বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে ফরীদি ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৭০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেন চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সশরীরে যোগ দেন তাতে।
দেশ স্বাধীনের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে শিক্ষাজীবন শুরু করেন হুমায়ুন ফরীদি। এখানেই তার অভিনয় প্রতিভার বিকাশ ঘটে। নাট্যগুরু সেলিম আল দীনের কাছে নাট্যতত্ত্বে দীক্ষা নেন। যুক্ত হন ঢাকা থিয়েটারে। সহজাত অভিনয়-গুণে আদায় করে নেন দর্শকের ভালোবাসা।
১৯৮২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘নীল নকশার সন্ধ্যায়’ ও ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’ নাটকে অভিনয় করে হুমায়ুন ফরীদি তাক লাগিয়ে দেন। তার অভিনীত ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’ আজও দর্শকের স্মৃতির পাতায় ভাস্বর। এতে ‘কানকাটা রমজান’ চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি।
বহুমাত্রিক এই অভিনেতা ১৯৮৪ সালে অভিনয় শুরু করেন চলচ্চিত্রে। এখানেও সাফল্যের দেখা পান তিনি। খুব কম সময়ে দখল করেন শ্রেষ্ঠ খল-অভিনেতার স্থান। বাংলা চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে তিনি যোগ করেন নতুন মাত্রা। ২০০৪ সালে ‘মাতৃত্ব’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতা শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। মৃত্যুর পর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক।
ব্যক্তিগত জীবনে প্রয়াত কিংবদন্তি হুমায়ুন ফরীদি দুই বার বিয়ে করেন। তার প্রথম স্ত্রীর নাম মিনু। ১৯৮০ সালে তাদের বিয়ে হয়েছিল। সেই সংসারে শারারাত ইসলাম দেবযানী নামে তার এক মেয়ে রয়েছে। ১৯৮৪ সালে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় ফরীদির। ওই বছরই তিনি অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাকে বিয়ে করেন। ২০০৮ সালে ভাঙে সেই সংসারও।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা