যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রকল্প পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়ন হয় সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের হাত ধরে। বিভাগটিতে প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকেন একজন দক্ষ পুরকৌশল (সিভিল ইঞ্জিনিয়ার)। তবে প্রায় দুই বছর ধরে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) প্রধান প্রকৌশলীর পদ ফাঁকা রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে ওই পদে দায়িত্ব পালন করছেন একজন তড়িৎ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। ফলে বিভাগটির কর্মদক্ষতা কমেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রমে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আজিজুর রহমানের মেয়াদ শেষ হয়। ওই মাসেই শূন্য পদটির জন্য স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরকৌশল বা সমমানের স্নাতক ডিগ্রিধারী এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কাজে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনকারীদের নিয়ে কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিরও এক বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু ওই পদে নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি। ফলে দুই বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রধান প্রকৌশলীর পদ ফাঁকা রয়েছে।
এদিকে প্রধান প্রকৌশলীর মেয়াদ শেষের পর ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মোমেনুল এহসানকে। তিনি একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। প্রধান প্রকৌশলীর পদে আবেদন করার যোগ্যতা না থাকলেও তিনি প্রায় দুই বছর ধরে পদটির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। এ ছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বরত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রকৌশল বিভাগে আছেন ১০ জন ইঞ্জিনিয়ার। এদের পাঁচজন ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী। অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে প্রশাসন ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। ২০২২ সালের শেষের দিকে বিশেষজ্ঞ ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের লিফট পর্যবেক্ষণে (প্রি-ইন্সপেকশন) ইউরোপে ভ্রমণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির পাঁচ সদস্যের একটি দল। নিজ বিষয় সংশ্লিষ্ট না হলেও ওই দলের সদস্য হিসেবে ছিলেন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী (সিভিল) মুনির হোসেন। সেসময় দেশের বিভিন্ন দৈনিকে এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রিনহাউস নির্মাণ কাজ চলছে। দুইবার মেয়াদ বাড়িয়েও ওই প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান না হওয়ায় এতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মান নিয়েও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া গত দুই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রধান প্রকৌশলী না থাকায় এসব কার্যক্রমের সঠিক তত্ত্বাবধান ও গুণগত মান নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে।
এসব বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী পদে দায়িত্বে থাকা মোমেনুল এহসান বলেন, ‘দপ্তরের কাজ বেগবান রাখতে আমাকে টেম্পোরারি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। টেকনিক্যাল কিছু বিষয়ের জন্য হয়তো কোনো প্রকল্প শেষ হতে বিলম্ব হয়েছে তবে কাজের গুণগত মান বজায় রাখা হয়েছে। আমি নিজের সাধ্যমতো দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি। প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগ হলে তিনি সব দায়িত্ব বুঝে নেবেন।’
প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে চাহিদা অনুযায়ী সেভাবে আবেদন জমা না হওয়ায় আবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। তবে অতি দ্রুতই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা