আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ২৩:৩০
কিশোর গ্যাং পরিচয়ে ছিনতাই চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ৩৬
নিজস্ব প্রতিবেদক

কিশোর গ্যাং পরিচয়ে ছিনতাই চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ৩৬

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর, হাজারীবাগ এলাকা থেকে বিভিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের মূলহোতাসহ ৩৬ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-২)।
র‌্যাব বলছে, গ্রেপ্তারকৃতরা গাড়ির হেলপার ও ড্রাইভার, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, পুরাতন মালামাল ক্রেতা, সবজি বিক্রেতার কাজ করেন। এসব পেশার আড়ালে তারা মূলত মোহাম্মদপুর ও তার আশেপাশের এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করতো। তাদের প্রত্যেকের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। কেউ কেউ জেলও খেটেছেন। ছাড়া পেয়ে আবারও অপরাধকর্মে জড়িয়েছেন।
শুক্রবার রাতে র‌্যাব-২ রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় একাধিক অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের এই ৩৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে কিশোর গ্যাং ‘পাটালি গ্রুপের’মূলহোতা সুজন মিয়া ওরফে ফর্মা সজিবসহ ৫ জন, ‘লেভেল হাই’গ্রুপের মো. শরিফ ওরফে মোহনসহ ৬ জন, ‘চাঁন গ্রুপ গ্রুপের’ মো. সাকিব ওরফে প্রকাশ রিয়ামসহ ৬ জন, ‘লও ঠ্যালা গ্রুপের’ মোঃ রাকিব ওরফে মুরগী রাকিবসহ ৫ জন, ‘মাউরা ইমরান গ্রুপের’ মো. ইমরান ওরয়ে মাউরা ইমরানসহ ৭ জন ও ৭ জন অন্যান্য গ্রুপের সদস্য। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
শনিবার র‌্যাব-২-এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান মোহাম্দপুরের বসিলা ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, পাটালি গ্রুপটি সুজন মিয়া ওরফে ফর্মা সজিবের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে। নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণে তারা ২/৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। গ্রেপ্তার শরিফ ওরফে মোহনের নেতৃত্বে লেভেল হাই গ্রুপটি দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে। গ্রেপ্তাররা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাঁধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। তারা একাকী পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করতো। এছাড়া তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় দেশিয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারি, মাদকসহ বিভিন্ন ধরণের বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমেও জড়িত। এছাড়াও তারা মাদক সেবনসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিল। মূলত তারা মোহাম্মদপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতো।
র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার সুজন মিয়া ওরফে ফর্মা সজিব পাটালি গ্রুপের মূলহোতা। তিনি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপ তৈরি করেন। গ্রেপ্তার রানা শিকদার, জুয়েল মিয়া ও সাগর ফর্মা সজিবের সহযোগী। তার বিরুদ্ধে ১১টির অধিক মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় কারাভোগ করেছেন।
শরিফ ওরফে মোহন (২১) লেভেল হাই গ্রুপের মূলহোতা ও সন্ত্রাসী হায়াত ওরফে টাকলা হায়াতের অন্যতম প্রধান সহযোগী। আগে তিনি মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদকের ব্যবসা করতেন। গ্রেপ্তার দুলাল, সোহাগ ও তারেক লেভেল হাই গ্রুপের সদস্য। তার বিরুদ্ধে ৮টির অধিক মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।
সাকিব ওরফে প্রকাশ রিয়াম চাঁন গ্রুপের অন্যতম সহযোগী। তিনি বিভিন্ন সময়ে গার্মেন্টসে চাকুরী করেছেন। ২০২১ সালে একটি রিয়েল এস্টেটে চাকুরীর সময়ে চাঁন গ্রুপের সঙ্গে জড়িয়ে পরেন। তার বিরুদ্ধে ৩ টির অধিক মামলা রয়েছে এবং তিনি কারাভোগ করেছেন।
ইমরান ওরফে মাউরা ইমরান মাউরা ইমরান গ্রুপের সদস্য। এই গ্রুপে ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য রয়েছে। ২০২১ সালে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর সময়ে নিজেই কিশোর গ্যাং ‘মাউরা ইমরান গ্রুপ’ গঠন করেন। তার বিরুদ্ধে ৪টির অধিক মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় কারাভোগ করেছেন।
গ্রেপ্তার মো. রাকিব ওরফে মুরগী রাকিব বিভিন্ন সময়ে গার্মেন্টসে চাকুরী ও ডিসের লাইনে চাকুরী করতেন। ২০২০ সালে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে চাকুরীর সময় লও ঠ্যালা গ্রুপে যোগ দেন। তার বিরুদ্ধে ২টির অধিক মামলা রয়েছে এবং এ সকল মামলায় কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক।