জাপান ও বাংলাদেশের সমন্বিত অংশীদারত্বমূলক সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে চায় দুই দেশ। নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরে দুই দেশের সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারত্বের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসতে পারে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের নানা দিক নিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বৈঠক করবে বাংলাদেশ ও জাপান। এ উপলক্ষে দুদিনের সফরে ঢাকায় এসেছে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব ও পশ্চিম এশিয়াবিষয়ক মহাপরিচালক আরিমা ইয়োতাকার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। দলে আরও রয়েছেন দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া বিভাগের উপ-পরিচালক মাচিমুরা কেইতা এবং সহকারী পরিচালক উন আনরি।
প্রতিনিধিদলটি বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অনুবিভাগ) কাজী রাসেল পারভেজের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর টোকিও সফরের দ্বিপক্ষীয় অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর টোকিও সফরের মূল কার্যক্রম ৩০ নভেম্বর ঠিক করা হয়েছে। সে হিসেবে ২৯ নভেম্বর তিনি ঢাকা ছাড়তে পারেন। সফরটি তিন দিনের হতে পারে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশের বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ ও অর্থায়নের মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে জাপানের আরও নিবিড় সম্পৃক্ততা চাইবে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে কোনো প্রকল্প ঘোষণা না হলেও একটা রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা যাতে থাকে।
এবারের সফরে জাপানি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ছাড়াও সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে দুই দেশ। এই সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ২০২৬ সালের পরও (স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পরে) কমপক্ষে আরও পাঁচ বছর পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা, শিল্প খাত আধুনিকায়ন, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ও মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা চাওয়া হবে। সে সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও টোকিওর সরাসরি ভূমিকা চাইবে ঢাকা।
অন্যদিকে জাপানের পক্ষ থেকে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল কৌশল রূপকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে পাশে চাইবে।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ে গেলেই সামরিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়টি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসে। তবে কোন কোন জায়গায় সহযোগিতা হবে সেটা আলোচনার বিষয়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির আগ্রহ জানিয়েছে জাপান। এই আগ্রহ থেকেই দেশটি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ে নিতে চায়। অস্ত্র বিক্রি ছাড়াও সামরিক সহযোগিতার মধ্যে দুই দেশের বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে প্রশিক্ষণ বিনিময়, যুদ্ধ জাহাজের শুভেচ্ছা সফর, প্রযুক্তি বিনিময়ের মতো বিষয়গুলোও থাকতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাপান প্রযুক্তিগত সমরাস্ত্রের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে। তাদের সরঞ্জামগুলো মূলত নৌ ও বিমানবাহিনীর জন্য বেশি প্রযোজ্য। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন জাপান সফরে এ বিষয়টি চূড়ান্ত না হলেও যৌথ বিবৃতিতে তার প্রতিফলন থাকবে। তবে টোকিও সনির্দিষ্ট পণ্যের প্রস্তাব দিলে বাংলাদেশ তা যাচাই-বাছাই করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে জানান, আগামী ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে দ্বিতীয় আন্তমন্ত্রণালয় সভা হবে। সেখানেই মূলত সফরের সার্বিক একটি ধারণা পাওয়া যাবে কী কী চুক্তি ও সমঝোতা সই করবে দুই দেশ।
তবে আগামীকাল বৈঠকে জাপানের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো জানা যাবে। এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর এ সফরের বিষয়ে প্রথম আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা