শুধু শ্রম ইস্যুতেই প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আজ বৃহস্পতিবার দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে ভার্চুয়ালি এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কূটনৈতিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জ্বালানি এবং পরিবেশবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জোস ডব্লিউ ফার্নান্দেজ।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে বলেন, মূলত যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ থেকেই এই বৈঠক হচ্ছে। দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক পরামর্শক সভায় আলাদা করে শুধু শ্রম বিষয়ে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ বৈঠকের বিষয়ে প্রস্তাব দেয় ওয়াশিংটন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শ্রম অধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি চাপ তো আছেই। বৈঠকে এই ইস্যুতে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরবে ঢাকা।
এই কর্মকর্তা জানান, শুধু শ্রম ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের এটাই প্রথম বৈঠক। তবে এ ধরনের বৈঠক আরও হবে কি না সেটা এখনো নিশ্চিত নই। বৃহস্পতিবারের বৈঠক থেকেই সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
জানা যায়, চলতি বছরের মাঝামাঝি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক পরামর্শক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন আর্থিক সংস্থার (ডিএফসি) তহবিল সুবিধার জন্য ওয়াশিংটনের কাছে অনুরোধ করে ঢাকা। এ তহবিল পেতে বাংলাদেশকে শ্রমের মান উন্নয়নের তাগিদ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের কথাও জানিয়েছে তারা।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বৈঠকে অংশ নিতে মার্কিন প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসার আগ্রহ প্রকাশ করলেও ঢাকার পক্ষ থেকে ভার্চুয়াল বৈঠকের প্রস্তাব দেয়া হয়। কারণ আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে শ্রম অধিকার নিয়ে চাপ নিতে রাজি নয় বাংলাদেশ।
গত ২৩ অক্টোবর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব বিষয়ে আলোচনা করেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
সূত্র জানায়, মানবাধিকার গণতন্ত্রসহ নানা ইস্যুতে বাংলাদেশের সমালোচনায় মুখর যুক্তরাষ্ট্র এবার শ্রম ইস্যুতে আরও কঠোর হতে যাচ্ছে। এ কারণেই শ্রমবিষয়ক এই বৈঠকের আগে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে প্রথমবারের মতো একজন পূর্ণকালীন শ্রম কর্মকর্তা যুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের শ্রম অধিকার, কাজের পরিবেশ, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও বৈষম্য, শ্রমমানসহ সার্বিক বিষয়গুলো দেখভাল করবেন এই কর্মকর্তা। বলা যায়, এই কর্মকর্তার মাধ্যমে শ্রম অধিকারের বিষয়গুলো আরও জোরালো পর্যালোচনা করবে ওয়াশিংটন।
শ্রম অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। তাই বরাবরই অন্যান্য ইস্যুর মতো বাংলাদেশের কর্মপরিবেশ, শ্রমমান ও শ্রম অধিকার নিয়ে সরব দেশটি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাজরীন অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের বিশেষ শুল্ক ছাড় সুবিধা জিএসপি স্থগিত করে দেশটি।
প্রতিবছর বাংলাদেশের শ্রমিকের অধিকার নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের স্বাধীনতা এবং দর-কষাকষির অধিকার, জোরপূর্বক শ্রম, শিশুশ্রম, কর্মস্থলের নিরাপত্তা, পেশার ক্ষেত্রে বৈষম্য, শ্রমিকের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, শ্রম ইউনিয়ন করার অধিকার, কর্মক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য শর্তাবলি, শ্রমিকের কর্মঘণ্টাসহ সার্বিক বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। জাতিসংঘসহ যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মার্কিন এ প্রতিবেদনকে আমলে নিয়ে থাকে।
গত মাসের শেষে শিশু ও জোরপূর্বক শ্রম প্রতিবেদন ২০২২ প্রকাশ করে মার্কিন শ্রম দপ্তর। এতে বাংলাদেশ অংশে পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, শ্রম খাতের সংস্কারে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে মাঝারি। এখনো গার্মেন্ট খাতে শ্রমিকরা তীব্র মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা