বৈশ্বিকভাবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং দেশের অর্থনৈতিক দুর্বলতা আমাদের জ্বালানি সংকটের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা জ্বালানির ওপর প্রভাব ফেলছে। আবার জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিও অর্থনীতিকে সংকটে ফেলছে। অর্থাৎ দুটি বিষয় পারস্পরিক সম্পর্কিত।
সেই পরিস্থিতিতে প্রথমে আমাদের জ্বালানি সরবরাহের ওপর আলোকপাত করা দরকার। আমরা এখন কয়লা কিনতে পারছি, যদিও দামটা বেশি পড়ছে। আবার গ্যাসের ক্ষেত্রে যেখানে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি চুক্তি রয়েছে, সেখান থেকে গ্যাস কেনা যাচ্ছে। তবে স্পট থেকে গ্যাস কেনায় সমস্যা হচ্ছে। আর আমাদের নিজস্ব গ্যাস সরবরাহ দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা তেমন কোনো পরিকল্পনায় যেতে পারছি না। এখন আমরা নিজস্ব গ্যাস উৎপাদনে মনোযোগী হচ্ছি। তবে এখানে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে ডলার এখানে বড় ফ্যাক্টর। কিন্তু এখন আমরা ডলার সংকটে পড়ে গিয়েছি।
সরকার সব সময় বিদেশি বিনিয়োগের কথা বলে থাকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, গত দশ বছরে গ্যাস অনুসন্ধানে তেমন বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি, যা এসেছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র হাজারটা তৈরি করে লাভ নেই, যদি আমরা প্রাথমিক জ্বালানি নিশ্চিত না করতে পারি। এখন তাই দুদিক থেকে সমস্যা তৈরি হয়েছে। একটা অর্থনৈতিক, আরেকটা আমরা নিজস্ব জ্বালানি উৎপাদন না বাড়িয়ে আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছি। এ পর্যন্ত সরকারের যত পরিকল্পনা হয়েছে, সেগুলোতে নিজস্ব উৎপাদনের চেয়ে আমদানির ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আমদানি আমাদের করা প্রয়োজন এবং ভবিষ্যতে রপ্তানির বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। তবে ধীরে ধীরে আমদানি কমিয়ে নিজস্ব উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টিতে জোর দিতে হবে। এ জন্য বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন পড়বে। আগামীতে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও জাইকার যে ঋণ প্রদানের কথা রয়েছে, সেটা হলে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট অনেকটা কেটে যাবে। তখন আমরা বিদেশি বিনিয়োগের ওপর জোর দিতে পারি।
মনে রাখতে হবে, জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আত্মনির্ভরতা। পুরোটা না পারলেও যতটা পারা যায়, তার চেষ্টা থাকতে হবে। উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য এটা খুব জরুরি। বিশ্ববাজারের স্বাভাবিক সময়ে গ্যাসের দামই বাংলাদেশের জন্য বড় চাপ। তাই আমদানিনির্ভর না হয়ে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দেয়া উচিত ছিল। জার্মানি, হাঙ্গেরি, কোরিয়া, জাপান আবার কয়লার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তারা নিরুপায় হয়ে এটা করছে। বাংলাদেশেরও নিজ কয়লা উত্তোলনের কথা ভাবতে হতে পারে।
আমাদের মনে আছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা না বাড়ানোয় ২০০০ সালের পর থেকে বিদ্যুৎ ঘাটতিতে পড়ে বাংলাদেশ। পরিস্থিতি সামলাতে বিএনপি সরকার তখন জ্বালানি তেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে আসে। সেটাই পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গ্রহণ করে বাস্তবায়নের জন্য। ২০০৮ সালেই প্রথম ১০টি প্রতিষ্ঠানকে রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট বসানোর অনুমোদন দেয়া হয়। প্রথম দিকে বিরোধিতা করলেও ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আরও তেলনির্ভর রেন্টাল প্ল্যান্টের অনুমোদন দেয়। কেননা মারাত্মক লোডশেডিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আর কোনো উপায় ছিল না। লোডশেডিংয়ের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছিল। এর মাঝেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের সমস্যার জায়গা নিল প্রাথমিক জ্বালানির স্বল্পতা। ২০০৭-এ প্রতিদিন ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি ছিল, যা মেটানোর আর কোনো উপায় ছিল না। আজ সেই ঘাটতি দৈনিক ১৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০২০ সালে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মহাপরিকল্পনা (পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান বা পিএসএমপি) এবং ২০১৬ সালের পিএসএমপিতে এই ঘাটতির কথা স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনাগুলোতেই অভ্যন্তরীণ উৎস হতে জ্বালানি গ্যাস অনুসন্ধানের বদলে বাইরে থেকে জ্বালানি আমদানির ওপর অধিক নির্ভরশীলতার নীতি গৃহীত হয়। ২০১০-এর পরিকল্পনায় স্থানীয় খনিতে প্রাপ্ত কয়লার ওপর ৩০ শতাংশ নির্ভরতার কথা বলা হলেও ২০১৬ সালের পরিকল্পনায় তা বাদ দেয়া হয়। যদিও সরকার এসব পরিকল্পনা সেভাবে অনুসরণ করেনি, তার বদলে জ্বালানির আমদানি বৃদ্ধি অব্যাহত থেকেছে। এর ফলেই আন্তর্জাতিক বাজরের মূল্য ও জোগানের ওঠানামার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন যতটা গুরুত্ব পেয়েছে, প্রাথমিক জ্বালানির বিষয়টা তেমনভাবে সামনে আসেনি। প্রতিবার এই অতি আমদানি নির্ভরতার কথা যখন বলা হয়েছে, তখন অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে সমাধান হিসেবে হাজির করা হয়েছে।
একমাত্র বাপেক্সনির্ভর অনুসন্ধানের নীতির ফলে দেখা যাচ্ছে, গত ২০ বছরের মধ্যে কোনো বছরেই একটির বেশি খনন হয়নি। আবার ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ সত্ত্বেও সমুদ্রবক্ষে অনুসন্ধানী কার্যক্রম ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। পেট্রোবাংলাও ২০১৬-১৭ সালে যতটুকু উৎপাদনে সক্ষম হয়েছিল, তা তারা ধরে রাখতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আর স্থানীয় উৎস থেকে যে কোনো ধরনের কয়লা উৎপাদনের সম্ভাবনাও শেষ হয়ে গেছে ২০১২-এ। অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান ও প্রাপ্ত গ্যাসের সদ্ব্যবহারের অভাবের কারণে বাংলাদেশের জ্বালানি স্বনির্ভরতার পথ থেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত গতিতে সরে গেছে। জ্বালানি ও তার উৎসের বৈচিত্র্য তথা জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে এলএনজি ও কয়লা আরও আগে থেকে আমদানি শুরু করার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাণিজ্যে আমাদের অনভিজ্ঞতা আরও প্রকাশিত হয় যখন আমরা ৭ দশমিক ২ মিলিয়ন টন (৭২ লাখ টন) এলএনজি সক্ষমতার জন্য চার মিলিয়ন (৪০ লাখ) টনের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করলাম। স্থায়ী সরবরাহ ঘাটতি পরিস্থিতির জন্য তাৎক্ষণিকভাবে আমদানির জন্য তহবিল রাখার কোনো সুপারিশ রাখা হয়নি।
অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সামর্থ্যের সংকট একটি ফাঁদ, যা সরকারই তৈরি করেছে। ২৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার মধ্যে ৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটই অফগ্রিড (বাসাবাড়ির সৌরচালিত বিদ্যুৎ এবং স্থানীয়ভাবে শিল্প উৎপাদিত বিদ্যুৎ)। সেই সঙ্গে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া বাধ্যবাধকতা ও যান্ত্রিক কারণ বা জ্বালানি স্বল্পতার জন্য বন্ধ হয়ে আছে। সক্ষমতার নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং উৎপাদনকেন্দ্রের প্রাপ্যতা মিলিয়ে গ্রিডের সক্ষমতা ১৬ হাজার মেগাওয়াট।
যতক্ষণ সরকার অলস পড়ে থাকা কাগজ-কলমের ৩ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার হিসাব থেকে বাদ না দেবে ততক্ষণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের অতিসক্ষমতার অস্বচ্ছতা কাটবে না। ক্যাপাসিটি পেমেন্টের আরেক দিক আরও জটিল। প্রতিটি পাওয়ার প্ল্যান্টকে কিলোওয়াট-ঘণ্টা ১ দশমিক ২৫ থেকে ২ দশমিক ৪০ টাকা পর্যন্ত ক্যাপাসিটি কস্ট বা সামর্থ্য ব্যয় দেয়া হয়। এটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়েরই একটি অংশ। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা প্রকল্প চলাকালে তাদের টাকা উঠিয়ে নিতে পারে। পুরোনো দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলোর ব্যয় কম। যদি একটি ভারী জ্বালানি তেলচালিত কারখানার উৎপাদনব্যয় প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় ১৫ টাকা হয়, তাহলে ২ টাকা হবে তার সামর্থ্য ব্যয় এবং ১৩ টাকা তার জ্বালানি ব্যয়। একইভাবে পুরোনো কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের গ্যাসচালিত বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীর (আইপিপি) ব্যয় হবে কিলোওয়াট-ঘণ্টা প্রতি সাড়ে তিন টাকা এবং সামর্থ্য ব্যয় হবে ১ টাকা ২৫ পয়সা।
পুরো শীতের সময় তেলনির্ভর বিদ্যুৎ কারখানাগুলোকে বসিয়ে রাখা হয়, কিন্তু মালিকরা সামর্থ্য ব্যয় বা ক্যাপাসিটি কস্ট গ্রহণ করে। তীব্র গ্রীষ্মে যখন বিদ্যুতের চাহিদা ৫ হাজার মেগাওয়াট বাড়ে, তখন তাদের অধিকাংশকে কাজে লাগানো হয়। সেখানে কি দুর্নীতির কোনো সুযোগ থাকে? কিছু দুর্নীতি অবশ্যই হয়। তবে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা সামর্থ্য সৃষ্টিতে যে টাকা দেয়া হয় তা নিয়ে যত কথা উঠছে তা কর্মহীন বসে থাকা ওই সময় নিয়ে। বেশ কিছু এ রকম বসে থাকা প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য কদাচিৎ কাজে লাগে। এগুলোকে প্রথমেই বাদ দেয়া উচিত। তবে কয়লাভিত্তিক বড় উৎপাদনকারী না আসা পর্যন্ত তেলভিত্তিক সক্ষমতাকে এখনই বাতিল করে দেয়া যাবে না।
আমরা আমাদের আগের ভুলগুলোর জন্য এখন মাশুল দিচ্ছি। আমরা খুব সহজেই ছয় মিলিয়ন বা ৬০ লাখ টনের দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি চুক্তি করতে পারতাম। আমরা আমদানির পাশাপাশি স্থানীয় গ্যাস খাতের উন্নয়নে অনেক বেশি মনোযোগ দিতে পারতাম। আমরা বড় কয়লাভিত্তিক প্রকল্প তৈরিতে সময় নিয়েছি। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প হাতে নেয়ার পর থেকে প্রায় ১২ বছর চলে গেল। আরও অনেক সমস্যা আছে। আমরা বাস্তবায়নের বিলম্ব ও ভুল ছাড়াও নীতির ক্ষেত্রেও কিছু ভুল করেছি। এগুলো সহসাই পাল্টানো সম্ভব হবে না। তবে সেগুলো সংশোধনে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। ভূমিতে ও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের সবগুলো পথ অন্বেষণের উদ্যোগ খুব দ্রুতই হাতে নেয়া দরকার। গ্যাসের নিশ্চিত উৎসের সঙ্গে ভূমিতে এলএনজি প্ল্যান্ট দরকার। এ ছাড়া চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে স্থানীয় কয়লার উন্নয়নের জন্য তৃতীয় কোনো পক্ষ দিয়ে নিরপেক্ষ সমীক্ষা করানো দরকার।
অদূর ভবিষ্যতে বিদ্যুতের জোগান নিশ্চিত করতে সরকারকে অবশ্যই সব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কারখানাগুলোর কাজ শেষ করতে হবে। কয়লা সরবরাহ ও আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ সংযোগের (ট্রান্সমিশন লাইনের) কাজ শেষ করতে হবে। আমরা পায়রা পাওয়ার প্ল্যান্টের এক ইউনিটের জন্য গত দেড় বছর ধরে প্রতিমাসে ১০০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিচ্ছি। কেননা সরবরাহ লাইনগুলো এখনো অসম্পূর্ণ। অন্যান্য পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য যেমন বিশেষ করে একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে এটা করার সামর্থ্য আমাদের নেই।
বর্তমানে আমাদের যে জ্বালানি সংকট চলছে তা খুবই অন্যরকম। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বর্তমান পর্যায়ে রাখার জন্য পরিকল্পিত লোডশেডিং সম্ভবত সর্বোত্তম পন্থা। তবে আগে থেকেই গ্রাহককে লোডশেডিংয়ের সময় জানিয়ে দেয়া উচিত। এটি বিদেশি মুদ্রার চাহিদা সহনীয় পর্যায়ে রাখবে। এই পদ্ধতি গ্রহণের সেটাও আরেকটা কারণ। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ উৎপাদনশীল খাত যেমন শিল্প ও কৃষিতে আমাদের বিশেষ নজর দেয়া দরকার। আমাদের ছাদ, বাড়ি, সেচ, রাস্তার বাতি ইত্যাদিসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতিটি অংশকে আমাদের নীতিগত ও আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। যেসব কারখানায় সব সময় বিদ্যুৎ প্রয়োজন, তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে বিদ্যুৎ সরবরাহে। আর লোডশেডিং করে সরকারের কী পরিমাণ সাশ্রয় হচ্ছে, তাও সবাইকে জানাতে হবে। এখন ব্যবস্থাপনা এমনভাবে করতে হবে, যাতে অর্থনৈতিক ধাক্কাটা কম লাগে।
মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্ভব নয়। এ দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির মূল উৎস সৌরশক্তি। পর্যাপ্ত ভূমি না থাকায় বড় আকারের সৌরবিদ্যুতের প্রকল্প বাস্তবায়ন এখানে দুরূহ। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মানসম্মত সূর্যের আলোর প্রাপ্যতা বাংলাদেশে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। ফলে চাহিদা অনুসারে বিদ্যুতের জোগান মিলবে না। আর ২০৫০ সালে বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়াবে ৬০ হাজার মেগাওয়াট। যার পুরোটা নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে মেটানো সম্ভব নয়। বিশ্বের যেসব জায়গায় বিদ্যুতের চাহিদার পুরোটুকু নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেখানেই সংকট দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছিল। বর্তমানে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বেড়ে গেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা বর্ধিত চাহিদা মেটাতে পারছে না। শতভাগ না হলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষকে যথাযোগ্য উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
বাংলাদেশ আমদানিকৃত এবং নিজস্ব- উভয় জ্বালানিই ব্যবহার করে। তবে চলমান সংকট মোকাবিলায় আমাদের আরও গুরুত্বের সঙ্গে নিজস্ব জ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধিতে মনোযোগী হতে হবে। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য শক্তি ও জ্বালানির দক্ষ ব্যবহারের দিকে আমাদের বাড়তি নজর দিতে হবে।
লেখক: অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা