বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেতা, নাট্যনির্দেশক মামুনর রশীদ। তিনি যে কত বিশাল ব্যক্তিত্বের অধিকারী এবং জ্ঞানের আলো- যারা তার সান্নিধ্য পেয়েছেন, কেবল তারাই বিষয়টা জানেন। বস্তুত তার জ্ঞান স্পৃহা, প্রজ্ঞা এবং অভিজ্ঞতার খুব সমান্যই জনসম্মুখে উন্মচিত । বর্তমানে বাংলাদেশে মামুনুর রশিদ ছাড়া আর কোন বটবৃক্ষ জীবিত নেই; যার ছায়াতলে নাট্যকর্মীর আশ্রয় পেতে পারে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের মঞ্চ আন্দোলনের পথিকৃৎ মামুনুর রশীদ। শ্রেণিসংগ্রাম, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের নানা আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু নিয়ে নাটক লিখে ও নির্দেশনা দিয়ে বাংলাদেশের নাট্যজগতে মামুনুর রশীদ হয়ে উঠেছেন অপরিহার্য।
মামুনুর রশীদ শুধু মঞ্চ ও টিভি নাটকের বাতিঘর কিংবা একজন মুক্তিযোদ্ধাই নন , তিনি তার আয়ত্বের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন এবং প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। শ্রেণিসংগ্রাম তার নাটকের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু। তিনি টিভির জন্যেও অসংখ্য নাটক লিখেছেন এবং অভিনয় করেছেন। বিভিন্ন সামাজিক ইস্যূ নিয়ে, শ্রেণিসংগ্রাম, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা অধিকার আদায়ের নানা আন্দোলন নিয়ে নাটক রচনা ও পরিবেশনা করে বাংলাদেশের নাট্য জগতে আলাদা স্থান করে নিয়েছেন। নাট্যকলায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১২ সালে তিনি একুশে পদকে ভুষিত হন। ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেলেও স্বৈরশাসনের প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি পুরস্কারটি প্রত্যাখ্যান করেন।
বরেণ্য এই নাট্যজনের আজ জন্মদিন। ২৯ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়ার সুবাদে চার বছর পরপর তার জন্মদিন উদযাপনের সুযোগ আসে সবার। বয়স ৭৬ হলেও আজ তার ১৯ তম জন্মদিন পালিত হচ্ছে। এই দিনটির অপেক্ষায় থাকে তার পরিবার, ভক্ত, অনুরাগীসহ সব শিল্পী কলাকুশলী। বহুল প্রতীক্ষিত এই জন্মদিন রাঙাতে তাই আয়োজন করা হয়েছে উৎসবের, আনন্দ মিলনমেলার। মামুনুর রশীদের জন্মদিন উপলক্ষে তিন দিনের বিশেষ উৎসবের আয়োজন করেছে তার হাতে গড়া নাট্যদল ‘আরণ্যক’।
আজ থেকে আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে ৩ দিনব্যাপী ‘আলোর আলো নাট্যোৎসব’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উৎসব আয়োজনে থাকবে মামুনুর রশীদ রচিত ও নির্দেশিত নাটকের মঞ্চায়ন, সংগীত, নৃত্য, সেমিনার, প্রদর্শনী ও থিয়েটার আড্ডা। নানা কর্মসূচিতে সমৃদ্ধ এ আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তাদের উজ্জ্বল উপস্থিতির মাধ্যমে অনুষ্ঠানকে আলোকিত করবেন বলে জানানো হয়।
আজ বিকেল ৫টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন অনিমা মুক্তি গোমেজ, অনিমা রায়, চঞ্চল চৌধুরী, ফজলুর রহমান বাবু ও রাহুল আনন্দ। বাঁশি বাজাবেন উত্তম চক্রবর্তী। ওয়ার্দা রিহাবের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করবে ধৃতি নর্তনালয়।
১ মার্চ সকাল ১০টায় শিল্পকলা একাডেমির সেমিনারকক্ষে আয়োজিত হবে ‘একজন দায়বদ্ধ সৃজনকর্মীর নাট্যপরিভ্রমণ’ শীর্ষক আলোচনা। আলোচনার ধারণাপত্র পাঠ করবেন মলয় ভৌমিক। বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট ও সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে হবে ‘রাঢ়াঙ’ নাটকের পরপর দুটি প্রদর্শনী। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন মামুনুর রশীদ।
২ মার্চ বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে থিয়েটার আড্ডা ‘নাট্যকর্মীদের মুখোমুখি মামুনুর রশীদ’। সন্ধ্যা ৭টায় একই হলে প্রদর্শিত হবে নাটক ‘কহে ফেসবুক’। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন মামুনুর রশীদ। এ ছাড়া চ্যানেল আইয়ের পক্ষ থেকেও পালিত হচ্ছে তিনদিনের উৎসব।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা