আপডেট : ৫ মার্চ, ২০২৪ ০০:০৭
চার বছর ধরে ধান সংগ্রহে ব্যর্থ রংপুরের খাদ্য বিভাগ
মীর আনোয়ার আলী, রংপুর

চার বছর ধরে ধান সংগ্রহে ব্যর্থ রংপুরের খাদ্য বিভাগ

গত সপ্তাহে তারাগঞ্জ উপজেলার আমলপুর ইউনিয়নের ভেমপুর গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: দৈনিক বাংলা

টানা চার বছর ধরে ধান সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে রংপুরের খাদ্য অধিদপ্তর। কৃষকরা খোলা বাজারে ধানের দর বেশি পাওয়ায় ধান নিয়ে গুদাম মুখি হচ্ছেন না। সেই সঙ্গে ঘুষ, হয়রানি, পরিবহন ব্যয়সহ কৃষকদের রয়েছে খাদ্য বিভাগের প্রতি নানা অভিযোগ।

এবার আমন মৌসুমে রংপুর জেলার ৯টি খাদ্যগুদামে লক্ষ্যমাত্রার শতকরা তিন ভাগ ধান সংগ্রহ হয়েছে। জেলার ৮টি উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলা থেকে এক মুঠো ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গেল আমন মৌসুমে সরকারিভাবে জেলার ৯টি খাদ্যগুদামে ৬ হাজার ৩৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কৃষি অ্যাপসের মাধ্যমে সরাসরি খাদ্যগুদামে ধান দেওয়ার কথা ছিল কৃষকদের। প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে ধান কেনা অভিযান শুরু হয় গত বছরের ২৩ নভেম্বর এবং চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সংগ্রহ অভিযান শেষ হয়।

রংপুর জেলায় ৬ হাজার ৩৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয় মাত্র ১৮১ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার শতকরা তিন ভাগ মাত্র। ২০২০ ও ২০২১ সালেও আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি রংপুর খাদ্য বিভাগ। এ সময় আমনের মৌসুমে ১০ হাজার ১৪৯ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর মধ্যে ধান সংগ্রহ হয়েছিল মাত্র ১৪ মেট্রিক টন। ২০২২ সালে ৯ হাজার ৪৩ মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এক ছটাক ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খাদ্যগুদাম ১৪ ভাগ আর্দ্রতা না হলে ধান নিতে চায় না। অনেক সময় এ কারণে খাদ্যগুদামে ধান দিতে গিয়ে কৃষকদের ফিরে আসতে হয়। এ ছাড়া রয়েছে প্রতি টন ধানে কর্মকর্তাদের ৪০০-৫০০ টাকা দাবি, পরিবহন ব্যয়, শ্রমিকদের চাঁদা। এসব কারণেই কৃষকেরা খাদ্যগুদামে ধান দিতে আগ্রহ হারিয়েছেন।

বদরগঞ্জ উপজেলার আমরুলবাড়ির কৃষক ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘বাড়ি থাকি ১০ কিলোমিটার দুরোত খাদ্যগুদাম। ওটে ধান নিগাইলে ৩০ টাকা কেজি। কিন্তু ঝামেলা অনেক। ধান অল্পে আনা কম শুকনা হইলে নিবার চায় না, বস্তাতে ৩০-৪০ টাকা ভ্যানভাড়া, শ্রমিকেরা চাঁদা তো আছে। ব্যাংকোত টাকার জন্যে দৌড়াদৌড়ি তো আছে। এই জন্য দুই টাকা কম হইলেও বাড়িতে পাইকারের কাছোত ধান বেচি।’

আরেক কৃষক সাহেব আলী বলেন, ‘খাদ্যগুদামে ধান দিতে গেলে টনে লেবার খরচ আছে, সরকারি অফিসারকেও খুশি করতে হয়। তাই খাদ্যগুদামে ধান না দিয়ে বাজারে বিক্রি করছি।’

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ময়েনপুর গ্রামের আব্দুর রহমান জানান, ধান মাড়াইয়ের পর উঠানেই ৮২০ টাকা প্রতি মণ (২৮ কেজি মণ) দরে পাইকার ধান কিনে নেয়। আর ওই এক মণ ধান খাদ্যগুদামের জন্য শুকিয়ে ফ্যান করে দিতে গেলে হয় ২১ থেকে ২৪ কেজি। ৩০ টাকা দরে তার দাম ৬৩০ থেকে ৭৩৫ টাকা। হিসাব করে খাদ্যগুদামে ধান দিতে গেলে তাঁর প্রতি মণে লস ১০০ টাকা। এ জন্য তিনি খাদ্যগুদামে ধান দেন না।

এ বিষয়ে রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অন্তরা মল্লিক দৈনিক বাংলাকে বলেন, সরকারের দেওয়া দামের চেয়ে খোলা বাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকরা গুদামে ধান দিতে চান না। এ ছাড়া অ্যাপসের মাধ্যমে ধান বিক্রি এবং ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা নেওয়াটাকে কৃষকরা জটিলতা মনে করেন। মুলত এ কারণে কৃষকরা ধান নিয়ে গুদাম মুখি হতে চান না।