আপডেট : ১১ মার্চ, ২০২৪ ১৩:০১
দেশের কৃষির এগিয়ে যাওয়ার গল্প
আবুল কাসেম ভূঁইয়া

দেশের কৃষির এগিয়ে যাওয়ার গল্প

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের বেশির ভাগ মানুষের প্রধান জীবিকা হচ্ছে কৃষি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের কৃষি বিভাগ তেমন শক্তিশালী ছিল না; কিন্তু গত এক দশকের মধ্যে দেশের কৃষি ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। দেশের কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন আগের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের কৃষি ক্ষেত্রের অগ্রগতির পেছনে বর্তমান সরকারের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। কৃষিকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তি এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করাতে কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অতীতে পুরোনো গতানুগতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করাতে ভালো ফলন পাওয়া যেত না। এ দেশের কৃষি ক্ষেত্রের প্রতিটি বিভাগে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে শাক-সবজির উৎপাদন চাহিদার তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে দেশে উৎপাদিত শাক-সবজি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা নিত্যনতুন অধিক ফলনশীল সবজি চাষের ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহিত করছেন। এতে ভালো সুফল মিলছে। সবচেয়ে বড়কথা আগে এ দেশের অশিক্ষিত কৃষকরা চাষাবাদ করতেন। বর্তমানে সেখানে শিক্ষিত উদ্যোমী তরুণ যুবকরা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে এগিয়ে আসছেন। এতে বেকার সমস্যার অনেক সমাধান হচ্ছে এবং তরুণ যুবক কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। দেশের উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। এভাবে দেশে শাক-সবজির উৎপাদন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে বিভিন্নজাতের ফল রয়েছে। দেশে ফল উৎপাদনে অনেক এগিয়ে গেছে। বর্তমানে সারা দেশে সারা বছর ধরে ব্যাপক ফলন উৎপাদন হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন ফলের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল হচ্ছে আম। অতীতে আমাদের দেশে সীমিত পর্যায়ে আম উৎপাদিত হতো। দেশে উৎপাদিত আম দেশের চাহিদা পূরণ করতে পারত না। যে কারণে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে আম আমদানি করা হতো। বর্তমানে দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উন্নতজাতের বিভিন্ন ধরনের আম উৎপন্ন হচ্ছে। কৃষি উদ্যোক্তারা ছোট-বড় আমের বাগান গড়ে তুলছেন। অতীতে রাজশাহীর আমের খ্যাতি ছিল। বর্তমানে সারা দেশে বিভিন্ন প্রজাতির উন্নতমানের উৎপন্ন হওয়ায় রাজশাহীর আমের চাহিদা অনেকটা কমে যায়। চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে আমচাষিরা বিশাল বিশাল আমের বাগান গড়ে তুলেছেন। এখানে প্রতি বছর হাজার হাজার টন আম উৎপন্ন হয়ে থাকে। এই আম সারা দেশের বেশির ভাগ চাহিদা মেটাচ্ছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত আম এখন বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। দেশের বাইরে থেকে আম আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। আম ছাড়াও দেশে আধুনিক পদ্ধতিতে কমলা, মালটা, সফেদা, কাঁঠাল, লিচু, ড্রাগন ফল, স্ট্রবেরি ব্যাপক ভিত্তিতে চাষ হচ্ছে। এগুলো দেশের চাহিদা পরিপূর্ণভাবে মেটাতে পারছে। দেশে উৎপাদিত ফলের সংরক্ষনাগার না থাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফল নিয়ে সমস্যায় পড়ে থাকেন। সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণাগার এবং প্রক্রিয়াজাত কারখানা গড়ে তুললে কৃষকরা আরও লাভবান হতেন। কৃষিজাত পণ্য রাবার উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে রাবার বাগান গড়ে উঠেছে। বর্তমানে দেশে যে পরিমাণে রাবার উৎপন্ন হচ্ছে বিদেশে রাবার আমদানির আর প্রয়োজন পড়বে না। রাবার উৎপাদনকারীরা বর্তমানে নানা সমস্যায় আছে। সরকার যদি রাবার বাগান মালিকদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন তবে রাবার শিল্প আরও এগিয়ে যাবে। দেশে রাবারের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে দেশে উৎপাদিত রাবার বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। আমাদের পোলট্রি শিল্পের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। আগে যেখানে শুধু দেশি মুরগির ওপর নির্ভর করতে হতো, বর্তমানে সেখানে উন্নত প্রযুক্তিতে বিভিন্ন জাতের বিদেশি মুরগি উৎপন্ন হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত মুরগি এখন সারা দেশের চাহিদা পরিপূর্ণভাবে মেটাতে পারছে। দেশের পোলট্রি শিল্পকে একটু এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে দেশে উৎপাদিত মুরগি বিদেশে ব্যাপকভিত্তিতে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যেত। পোলট্রিশিল্পের মতো আমাদের ডেইরি শিল্পও অনেক এগিয়ে গেছে। আগের সেই গতানুগতিক ধারায় গবাদিপশু পালন করা হয় না। পোলট্রিশিল্পের অগ্রগতির জন্য শিক্ষিত তরুণদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তারা উন্নতমানের বিদেশি গরুর বীজ এনে দেশে উন্নতমানের গরু উৎপাদন করছে। বর্তমানে সারা দেশে হাজার হাজার ডেইরি খামার গড়ে উঠেছে। এসব দুগ্ধ খামারে উৎপাদিত দুধ দেশের চাহিদা পূরণ করে উৎবৃত্ত থেকে যাচ্ছে। দেশে ডেইরিশিল্পে একটা নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। ডেইরিশিল্পে উৎপাদিত গরু দিয়ে আমাদের মাংসের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। শুধু তাই নয়- প্রতি বছর কোরবানির ঈদের সময় ডেইরিশিল্পের গরু দিয়ে কোরবানির গরুর চাহিদা মেটানো হচ্ছে। আগে কোরবানির ঈদের সময় পূরণ করা হতো। বর্তমানে তা আর লাগছে না। দেশের ডেইরি শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে দেশ মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে এবং বাড়তি মাংস বিদেশে রপ্তানির সুযোগ আসবে। দেশের সম্ভাবনাময় ডেইরিশিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারকে আরও আন্তরিক হতে হবে। আমাদের কৃষির অন্যতম উৎস হচ্ছে মৎস্য খাত। আমাদের মৎস্য খাত আগের তুলনায় অনেক এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশে এখন মাছের কোনো ঘাটতি নেই। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয় থেকে মৎস্য আহরণে বিশ্বে চতুর্থ এবং চাষে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। জানা গেছে সারা দেশের প্রায় তিন কোটি যুবক মাছচাষে জড়িত। বর্তমানে বাংলাদেশে মৎস্য বিপ্লব ঘটেছে। আমাদের দেশের মাছের উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক এবং বিজ্ঞান ভিত্তিতে মাছের চাষের মাধ্যমে মাছচাষিরা বিরাট সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সরকারও মাছ উৎপাদনের ব্যাপারে বিভিন্ন নিয়ম-কানুন চালু করাতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। পোনা মাছ নিধন বন্ধ হয়েছে। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৎস্য বিজ্ঞানীরা অবিরাম গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে নিত্যনতুন জাতের মাছচাষের ব্যাপারে। আমাদের মৎস্য ভাণ্ডার থেকে উৎপাদিত মাছ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। মাছের পাশাপাশি মাছ থেকে তৈরিকৃত শুঁটকি মাছও রপ্তানি হচ্ছে। মোট কথা আমাদের মৎস্য সম্পদ এখন পুরোপুরি সমৃদ্ধ। মৎস্য খাতে কিছু কিছু সমস্যা রয়েছে এগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হলে মৎস্য খাত আরও এগিয়ে যাবে। মোট কথা আমাদের দেশের কৃষি খাতকে আরও সমৃদ্ধশালী করতে হবে। কারণ এই খাত থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা আয় হচ্ছে। আশা করি এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা একটু সচেতন হবেন।

লেখক: প্রাবন্ধিক