আপডেট : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ০৮:১৮
মুন্সীগঞ্জে সবজি চারার কোটি টাকার বাজার
মঈনউদ্দিন সুমন, মুন্সীগঞ্জ

মুন্সীগঞ্জে সবজি চারার কোটি টাকার বাজার

বীজতলায় চারার সাথে জন্মানো আগাছা ওঠাচ্ছেন কৃষক। রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে বীজতলা। ছবি: দৈনিক বাংলা

সবজি চারা উৎপাদনে ঢাকার লাগোয়া জেলা মুন্সীগঞ্জের সুনাম রয়েছে। মৌসুম আসার আগেই এখানে শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদন শুরু হয়। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় এবারো ব্যাপকহারে চারা উৎপাদিত হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর এখানে উৎপাদিত চারা বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়। দাম ও চাহিদা ভালো হওয়ায় প্রতিবছর এ জেলা থেকে কয়েক কোটি টাকার চারা বিক্রি হয়। এতে ফলন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, সবজি চারা উৎপাদনে মুন্সীগঞ্জ দেশের মধ্যে প্রসিদ্ধ। এখানকার চারার মান অন্যান্য জেলার চেয়ে ভালো। জেলা সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার অন্তত ৪০ জন কৃষক শীতকালীন লাউ, কুমড়া, মরিচ, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ব্রকলিসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চারা উৎপাদনে যুক্ত।

সদর উপজেলার পঞ্চসার, রামপাল, বণিক্যপাড়া, রামশিং, বজ্রযোগিনী ও দেওয়ান বাজার এবং টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আব্দুল্লাহপুর, বেতকা ও সোনা রং গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, উঁচু জমিগুলোতে বীজতলা বানিয়ে সবজির চারা আবাদ করা হয়েছে। রোদ-বৃষ্টিসহ যেকোনো প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে এসব চারা রক্ষা করতে ওপরে বাঁশের বেড়া দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখা হয়েছে। কিছু কিছু বীজতলায় বীজ থেকে মাত্র পাতা গজাতে শুরু করেছে। কিছু বীজতলায় আবার বীজ থেকে বেড়ে ওঠা চারা এরই মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়েছে। এসব বীজতলা থেকে আগাছা বাছাই করে বিক্রির জন্য চারা ওঠাচ্ছেন কৃষক ও শ্রমিকরা।

চারা উৎপাদনকারী কৃষকরা জানান, প্রতিবছর আগস্টের মাঝামাঝি চারা উৎপাদনের মৌসুম শুরু হয়। ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে চারা উৎপাদন। বীজ বপনের ২৫ দিনের মাথায় চারা বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। প্রতি হাজার চারা ১২০০ টাকা থেকে ১৭০০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি মৌসুমে একেকটি বীজতলায় তিন থেকে চারবার চারা উৎপাদন করা যায়। সব মিলিয়ে মুন্সীগঞ্জে এক মৌসুমে আড়াই থেকে তিন কোটি চারা উৎপাদিত হয়। আর এসব চারা সাড়ে তিন থেকে চার কোটি টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।

রামপাল ইউনিয়নের জোড়ারদেওল গ্রামের কৃষক হুমায়ূন বলেন, চারা উৎপাদন খুব পরিশ্রমের কাজ। তবে এতে লাভও বেশি। প্রতিবছর ১৫-২০ লাখ টাকার ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা বিক্রি করি। খরচ বাদ দিয়ে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ হয়।

পঞ্চসার গ্রামের চারাচাষি আমির হোসেন বলেন, ‘এবার আগস্টের মধ্যভাগে ৫০ শতক জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা আবাদ করেছি। তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। চারা বিক্রি করেছি সাড়ে চার লাখ টাকায়।’ এ মৌসুমে আরও তিনবার জমিতে চারা আবাদ করলে সব মিলিয়ে খরচ বাদে পাঁচ লাখ টাকার মতো লাভ থাকবে বলে আশা করছেন তিনি।

৩৫ শতাংশ জমিতে ব্রকলিসহ অন্যান্য সবজির চারা চাষ করেছেন দেওয়ান বাজারের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, চারা উৎপাদন খুবই লাভজনক পেশা। অনেকেই বংশ পরম্পরায় কয়েক যুগ ধরে এ পেশার সঙ্গে রয়েছেন। প্রতিবছর নতুন অনেক কৃষকও চারা উৎপাদনে যুক্ত হচ্ছেন।

২৫ বছর ধরে বিভিন্ন জাতের সবজির চারা উৎপাদন করেন বণিক্যপাড়া গ্রামের হারুন মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের জেলার চারার চাহিদা খুব বেশি। মানও ভালো। তাই চারা চাষে আমাদের কখনো লোকসান হয় না।’

১০ বছর ধরে অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন ভট্টাচার্যেরবাগ গ্রামের সোহেল। এবার নিজেই তিনি চারা উৎপাদন করছেন। সোহেল বলেন, সবজির চেয়ে চারা উৎপাদনে লাভ বেশি। তাই এবার প্রথমবারের মতো ৩০ শতাংশ জমিতে চারার আবাদ করেছি। আশা করছি লাভ হবে।

সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকির হাসান বলেন, উপজেলার কয়েকটি এলাকার কৃষক চারা উৎপাদনকেই নিজেদের প্রধান পেশা হিসেবে নিয়েছেন। জৈব সার ও খৈল ব্যবহার করা হয় বলে এখানকার চারার মান ভালো, চারা থেকে ফলনও ভালো হয়। তাই বেশি ফলন ও লাভের জন্য সাভার, মানিকগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, বরিশাল ও শরীয়তপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এখানকার চারা কিনে নিয়ে যান। বিশেষ করে শীতকাল সামনে রেখে ৭৭৭, সিরাযুথি, হিমাযুথি, ফ্রেস, স্নো হোয়াইট, মারবেল, কার্তিকা, ষাইটশা ও চালানি ষাইটশা জাতের কপির চারার চাহিদা বেশি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খুরশীদ আলম বলেন, মুন্সীগঞ্জে প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যাপক শীতকালীন সবজি চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। চারা বিক্রি করে কৃষকরা আর্থিকভাব লাভবান হচ্ছেন। যারা ভালো ফলন চান, তারা এখান থেকে সবজির চারা নিয়ে আবাদ করতে পারেন। কারণ এসব চারার গুণগত মান বেশ ভালো।