মোবালই ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা এবং শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেয়ার কথা বলে এক বছরে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দু’টি প্রতারক চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও ফরিদপুরের ভাংগা এলাকা থেকে পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১০।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদ উদ্দিন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি কতিপয় প্রতারক চক্র রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষকে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান ও মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ/নগদ) ব্যবসায় অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে বিকাশ/নগদের মাধ্যমে প্রতারিত করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১০ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। তদন্তের এক পর্যায়ে র্যাব-১০ জানতে পারে, কক্সবাজারের পেকুয়া থানার বসবাসকারী ভুক্তভোগী ইসতাহাদ উদ্দিন সোহানের (১৯) মোবাইল নম্বরে গত ২২ মার্চ ৩টা ৩৬ মিনিটে কল দিয়ে তার নম্বরে উপবৃত্তির টাকা পাঠাবে বলে কৌশলে তার বিকাশের পিন নম্বর নিয়ে নেয় তারা। পরবর্তীতে ৩৮ লাখ ২৫৮ টাকা তার অ্যাকাউন্ট থেকে সরিয়ে ফেলে। এ ঘটনায় তিনি কক্সবাজার জেলার পেকুয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এছাড়া গত ২৪ মার্চ কক্সবাজারের পেকুয়া থানার জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে একই চক্র ২০ হাজার ৪০০ টাকা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানা এলাকার লোকমান হোসেন (৪৪) এর কাছ থেকে তার ছেলের নামে উপবৃত্তির কথা বলে ১৬ হাজার ৩০০ টাকা হাতিয়ে নেয়।
পরে মঙ্গলবার রাতে গোয়ন্দা তথ্যে অভিযান চালিয়ে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়, চক্রের হোতা ইসমাইল মাতুব্বর (২১), ইব্রাহিম মাতুব্বর (২৭), মো. মানিক ওরফে মতিউর রহমান (১৯) ও মো. সিনবাদ হোসেনকে (২৪)। তাদের কাছ থেকে ২২টি মোবাইল ফোন, ৩৫টি সিম কার্ড, মোবাইলের পাঁচটি চার্জার, একটি ল্যাপটপ, একটি ব্যাগ ও নগদ ৩০ হাজার হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার ইসমাইল মাতুব্বর বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা ও ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির অর্থ আত্মসাৎ চক্রের হোতা। নম্বর ক্লোন করে নিজেকে শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে কৌশলে বিকাশ বা নগদের পিন নম্বর হাতিয়ে নিতেন। এভাবে তার চক্র প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। চক্রের সবাই স্বল্প সময়ে ধনী হওয়ার আশায় প্রতারণার আশ্রয় নেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়।
তদন্তকালে র্যাব-১০ আরও জানতে পারে অন্য আরেকটি প্রতারক চক্র গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আব্দুল মমিন (৪২) নামে একজন নতুন বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ৪২ হাজার ৭৭৭ টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ডিএমপি ঢাকার ডেমরা থানায় তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ভুক্তভোগী।
জিডির সূত্র ধরে একই রাতে র্যাব-১০ এর দুটি পৃথক দল ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ/নগদ) ব্যবসায় অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে এজেন্টদের কাছ থেকে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে প্রতারিত করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎকারী চক্রের অন্যতম মূল হোতা সুমন ইসলাম (২০), মাহমুদুল হাসান পলক (২০), সাব্বির খন্দকার (১৯), মো. সাকিব (১৯), ও রাসেল তালুকদারকে (২৩) গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের নিকট হতে ১৪টি মোবাইল ফোন, ৯১টি সিম কার্ড, ১টি ব্যাগ, ১০৪ পিস ইয়াবা ও ৫২ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার সুমন ইসলাম মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ বা নগদ) ব্যবসায় অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে এজেন্টদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করা চক্রের হোতা। তার নেতৃত্বে চক্রটি প্রায় ৮-৯ মাস ধরে বিকাশ বা নগদ এজেন্টদের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল।
এই চক্রটি ২ বছর যাবৎ দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৬০-৭০ জন বিকাশ/নগদ এজেন্ট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে জানায়। তারা সবাই স্বল্প সময়ে কোটিপতি হবার আশায় এবং মাদক সেবনের অর্থ যোগান দিতে এই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা