আপডেট : ৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১৪:১৯
একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান, ডিজিটাল নথির আওতায় আসবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
নুর নওশাদ, চবি প্রতিনিধি

একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান, ডিজিটাল নথির আওতায় আসবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

উপাচার্য ড. মো. আবু তাহের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের। বিভাগের সভাপতি, অনুষদের ডিন, একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনসহ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন করে ঢেলে সাজাতে চান এই শিক্ষাবিদ। একান্ত সাক্ষাৎকারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে তার প্রত্যাশা ও পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন দৈনিক বাংলাকে।

প্রশ্ন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য; আপনার অনুভূতি জানতে চাই?

উত্তর: প্রথমত আল্লাহর কাছে শোকরিয়া, তিনি আমাকে সুযোগ দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের নিকট বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। একই সঙ্গে আমার ওপর যে গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তা সর্বোচ্চ সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতার সহিত পালনের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

প্রশ্ন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আপনার পরিকল্পনা জানতে চাই।

উত্তর: আমি চাই বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়কে যেভাবে দেখতে চেয়েছিলেন সেভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হবে। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান সৃষ্টি হবে, জ্ঞান বিতরণ হবে, জ্ঞান সংরক্ষণ হবে। এই তিন উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি ইউজিসি প্রতিষ্ঠা করেন, যা সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখভাল করে। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন মত-দ্বিমত থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালোর জন্য যে সিদ্ধান্ত সেখানে আমাদের একমত হতে হবে। তৃতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও অবকাঠামোগত মাস্টারপ্ল্যান থাকতে হবে। সেগুলোর আবার ন্যাশনাল পলিসির সঙ্গে সমন্বয় থাকতে হবে। পাশাপাশি আমি চাই আমাদের সব শিক্ষক তার নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে।

প্রশ্ন: একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে কী ভাবছেন?

উত্তর: আমাদের একাডেমিক একটা মাস্টারপ্ল্যান থাকতে হবে। সব শিক্ষককে অবশ্যই গবেষণামুখী হতে হবে এবং গবেষণা করতে হবে। গবেষণার পাশাপাশি তারা নানা রকম আর্টিকেল প্রকাশ করবে যেটা থেকে আমাদের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। এ জন্য একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান লাগবে। র‍্যাংঙ্কিয়ে শীর্ষে পৌঁছতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রসহ সব অংশীজনকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকবে, সেটারও অবসান করতে হবে।

প্রশ্ন: গবেষণায় এখনো অনেকটা পিছিয়ে আছে চবি। আপনার পরিকল্পনা কী?

উত্তর: ইউজিসি সাড়ে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তবে যা বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেটিও ব্যবহার করা হচ্ছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন গবেষণার কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমাদের ওপর যে দায়িত্ব সেটা আমরা ঠিকঠাক পালন করছি? আমাদের মূল কাজ হচ্ছে শিক্ষকতা করা ও গবেষণা করা। সব শিক্ষককে অবশ্যই গবেষণা করতে হবে। গবেষণা করলেই শিক্ষকরা আধুনিক শিক্ষা ও যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সবাই মানিয়ে চলতে পারবে।

প্রশ্ন: ডিজিটাল থেকে স্মার্টের পথে বাংলাদেশ। তবে চবি এখনো মান্ধাতার পদ্ধতিতেই দাপ্তরিকসহ সব কার্যক্রম চালাচ্ছে। চবি কবে স্মার্ট হবে?

উত্তর: আমি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করে এসেছি (ইউজিসি) সেখানে ৯৫ শতাংশ কাজই ডি-নথি (ডিজিটাল-নথি) সিস্টেমে হয়। ডি-নথিতে সবকিছু সময় ও তারিখসহ উল্লেখ থাকে। তবে এখানে এসে দেখছি এখনো পুরোনো সিস্টেম রয়ে গেছে। ডিজিটালের উদ্দেশ্য দুটো- একটা হচ্ছে পেপারলেস অফিস, অন্যটি ক্যাশলেস সোসাইটি। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কেও ডি-নথির আওতায় আনার চেষ্টা করব। এতে সহজে অনলাইনেই সব করা যাবে।

প্রশ্ন: শাটল ও আবাসিক সমস্যা নিরসনে কী পদক্ষেপ নেবেন?

উত্তর: আমি মাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। হলের বিষয়গুলো নিয়ে হল প্রভোস্ট ও হাউস টিউটরদের সঙ্গে বসব। তারপর বিষয়টি সিন্ডিকেটে নিয়ে যাব। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় হবে। হলগুলোতে অছাত্র কেউ থাকলে সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শাটল ট্রেনের সমস্যার বিষয়ে যোগাযোগ ও রেলসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করব।

প্রশ্ন: চবিতে দীর্ঘদিন সমাবর্তন হচ্ছে না। সমাবর্তন কবে হবে?

উত্তর: আমি শুরুতেই ডিনদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সমাবর্তনের বিষয়ে। সব অনুষদের ডিন একমত হয়েছেন। এখন বাকি পর্ষদে পাস হয়ে এলে আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে সময় চাইব। তিনি সময় দিলে এ বছর সমাবর্তন হবে।

প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ও ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনার চিন্তা-ভাবনা কী?

উত্তর: টিএসসির জন্য আমরা সরকারের কাছে প্রজেক্ট সাবমিট করব। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়টা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। সরকার থেকে শুরু করে সব অংশীজন যদি চায় তখন সেটা নিয়ে এগুনো যাবে। আমি একা সিদ্ধান্ত নিলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায়ভার আমাকেই নিতে হবে।

প্রশ্ন: শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কী বলতে চান?

উত্তর: ছাত্রছাত্রীদের বলব, ‘পড়াশুনা, পড়াশুনা ও পড়াশুনা’। সবাইকে ক্লাসমুখী হতে হবে। সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে হবে। পাশাপাশি দেশ ও পরিবারের কল্যাণে কাজ করতে হবে। মা-বাবা অনেক স্বপ্ন নিয়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায়। সে স্বপ্নপূরণ করতে হবে।