আপডেট : ৩১ অক্টোবর, ২০২২ ১৯:৫৬
সংসদে বিল: পিএসসির পরীক্ষায় ‘প্রক্সি’ দিলে ২ বছর জেল

সংসদে বিল: পিএসসির পরীক্ষায় ‘প্রক্সি’ দিলে ২ বছর জেল

প্রতীকী ছবি

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) পরিচালিত কোনো পরীক্ষায় ভুয়া পরিচয়ে অংশ নিলে (প্রক্সি) দুই বছরের কারাদণ্ড এবং পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে নতুন আইন হচ্ছে। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অর্ডিন্যান্স-১৯৭৭ রহিত করে নতুন এই আইনটি করা হচ্ছে।

আজ সোমবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন বিল-২০২২’ জাতীয় সংসদে তোলেন। পরে বিলটি ৬০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

প্রতিমন্ত্রী বিলটি সংসদে উত্থাপনের অনুমতি চাইলে তাতে আপত্তি জানান বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, দক্ষ জনবল নিয়োগের বিকল্প নেই। কিন্তু সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য–উপযুক্ত বিবেচিত হওয়ার পর পুলিশি যাচাইয়ের নামে ভিন্নমতের প্রার্থীদের বাদ দেয়া হচ্ছে। এটি প্রতিকারের বিষয়ে আইনে কিছু নেই।

তিনি পরীক্ষা সংক্রান্ত অপরাধের জন্য আলাদা আলাদা আইন না করে অভিন্ন একটি আইন করার দাবি জানান।

এসএসসি, এইচএসসি, মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন হারুনুর রশীদ।

তিনি বলেন, সম্প্রতি তথ্য সচিবকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। তাকে কেন বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন কথা গণমাধ্যমে এসেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হলে দলীয় বিবেচনা বাদ দিতে হবে।

হারুনুর রশীদের বক্তব্যের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, অতীতে প্রশ্নফাঁস নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা ছিল। ২০০১-২০০৬ সালে (বিএনপি-জামায়াত সরকার) বেশি ছিল। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটলে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়।

পরে কণ্ঠভোটে হারুনের আপত্তি নাকচ হয়ে যায়।

বিলে বলা হয়েছে, কমিশন প্রজাতন্ত্রের জনবল নিয়োগের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-বিধান সাপেক্ষে পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি ও শর্তাবলী নির্ধারণ করতে পারবে।

প্রস্তাবিত আইনে সরকারি চাকরির পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধ ও তার সাজা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পরীক্ষার্থী না হয়েও নিজেকে পরীক্ষার্থী হিসেবে হাজির করলে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে পরীক্ষার সময় পরীক্ষার হলে প্রবেশ করলে বা অন্য কোনো ব্যক্তির নামে বা কোনো কল্পিত নামে পরীক্ষায় অংশ নিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এর শাস্তি সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড।

প্রশ্নফাঁস বিষয়ে বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে পরীক্ষার জন্য প্রণীত কোনো প্রশ্ন সম্বলিত কাগজ বা তথ্য, পরীক্ষার জন্য প্রণীত হয়েছে বলে মিথ্যা ধারণাদায়ক কোনো প্রশ্ন সম্বলিত কাগজ বা তথ্য অথবা পরীক্ষার জন্য প্রণীত প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে বলে বিবেচিত হওয়ার অভিপ্রায় কোনো প্রশ্ন সম্বলিত কাগজ বা তথ্য যে কোনো উপায়ে ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণ করা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। এই অপরাধ আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য হবে।

বিলে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো পরীক্ষা সংক্রান্ত উত্তরপত্র বা এর অংশবিশেষের পরিবর্তে অন্য কোনো উত্তরপত্র বা এর অংশ বিশেষ প্রতিস্থাপন করলে বা পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থী কর্তৃক লিখিত হয়নি এ ধরনের উত্তর সম্বলিত অতিরিক্ত পৃষ্ঠা কোনো উত্তরপত্রের সঙ্গে সংযোজন করলে তার জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া যাবে।

এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি কোনো পরীক্ষার্থীকে কোনো লিখিত উত্তর, বই, লিখিত কাগজ, পৃষ্ঠা বা সেখানকার কোনো উদ্ধৃতি পরীক্ষার হলে সরবরাহ করলে বা মৌখিকভাবে বা যান্ত্রিক কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে কোনো প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য সহায়তা করলে তার দণ্ড হবে সর্বোচ্চ দুই বছর।

প্রশ্নপত্র ফাঁস বাদে অন্যান্য অপরাধের সাজা হবে মোবাইল কোর্ট আইনে।

বিলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অর্ডিন্যান্সের অধীনে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন এমনভাবে বহাল থাকবে যেন এটি নতুন আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একজন সভাপতি, অন্তত ছয় জন এবং সর্বোচ্চ ১৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হবে। কোনো বিভাগীয় অফিস, জেলা অফিস বা অধ্বস্তনের অফিসের কোনো পদ যাতে এই অফিসের প্রধান বা অফিসের অন্য কোনো কর্মকর্তা কর্তৃক নিয়োগ প্রদান করা হয় এমন পদে নিয়োগের বিষয়ে কমিশনের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক হবে না। এ ছাড়া কোনো আইন দিয়ে কমিশনের আওতা বহির্ভূত রাখা হয়েছে এমন কোনো চাকরি বা পদে নিয়োগের ক্ষত্রেও পিএসসির পরামর্শ নেয়া আবশ্যক হবে না।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সামরিক শাসনামলে জারি করা অধ্যাদেশগুলো পর্যালোচনা করে আইন আকারে বাংলায় প্রণয়নের বিষয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে পাবলিক পরীক্ষা সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দ্য পাবলিক এক্সামিনেশন (অফেনসেস) আইন কার্যকর আছে। এই আইনে পাবলিক পরীক্ষার সংজ্ঞায় পিএসসি আয়োজিত পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এবং পাবলিক পরীক্ষার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আয়োজিত পরীক্ষার মিল না থাকায় প্রস্তাবিত আইনে পিএসসির আওতায় অনুষ্ঠিত পরীক্ষা সংক্রান্ত অপরাধ ও শাস্তির বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।