জন্ম থেকেই হাঁটতে পারেন না মীম। হাতে সমস্যা থাকার কারণে ধীরে ধীরে লিখতে হয়। মায়ের কোলে চড়েই শিক্ষাজীবনের দুই-তৃতীয়াংশ পাড়ি দিয়েছেন তিনি। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাতেও ভালো ফলাফলের আশা।
মীমের পুরো নাম মাহফুজা আক্তার মীম। তার বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাংশায়। দুই ভাই-বোনের সংসারে বড় মেয়ে মীম। বাবা মঞ্জু হোসেন পেশায় ফার্নিচার মিস্ত্রি। মায়ের নাম সাহেরা বেগম। গতকাল শুক্রবার গুচ্ছভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় মায়ের কোলে উঠে পরীক্ষায় অংশ নিতে আসেন মীম। বাহাদুরপুর পণ্ডিত কাজী আবুল হোসেন কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করেন তিনি।
মায়ের অক্লান্ত শ্রম আর মেয়ের অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে হার মেনেছে হাজারও প্রতিবন্ধকতা। ছোটবেলায় স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে শিকার হতে হয়েছে নানা বাধার। এর পরও নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে স্কুল-কলেজ জয় করে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হওয়ার অপেক্ষা।
পরীক্ষা শেষে কথা হয় মীমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ পরীক্ষা ভালো হয়েছে। জন্মগতভাবে আমার শারীরিক কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আমার লেখাপড়ার পুরো যাত্রাতেই আম্মু পাশে আছেন। আমার এ পর্যন্ত শিক্ষাজীবন আম্মুর কোলে বসেই। ছোটবেলায় আমি যখন স্কুলে ভর্তি হতে যাই, সাধারণ বাচ্চাদের মতো আমাকে ভর্তি নিতে চায়নি। আম্মুর অনুরোধে শিক্ষকরা আমাকে ভর্তি নেন। পরবর্তী সময় বার্ষিক পরীক্ষায় যখন আমি ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করি তখন শিক্ষকরা আমাকে নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর থেকে নিজের চেষ্টায় ভালো ফলাফল ধরে রেখেছি। আজ জীবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দিয়েছি।’
নিজের স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে মীম বলেন, ‘মার স্বপ্নই আমার স্বপ্ন।’
মীমের মা সাহেরা বেগম বলেন, ‘শিক্ষা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমি বিশ্বাস করি, আমার মেয়ে যদি শিক্ষিত হয়, আমি মারা গেলে মেয়ে তার বাবার বোঝা হবে না। সেজন্য আমি শত কষ্টেও তাকে এতদূর এনেছি।’
সাহেরা বেগম আরও বলেন, ‘মেয়ের জন্মের পর থেকেই ওর বাবা আমাকে সহায়তা করেছে। আমার আরেকটা ছোট ছেলে রয়েছে। তবে আমার স্বপ্ন আমার বড় মেয়ে মীমকে ঘিরেই। আমি চাই আমার মেয়ে একটা সরকারি চাকরি করুক, সমাজের বোঝা না হোক।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা