আপডেট : ৫ মে, ২০২৪ ২১:০৫
ব্লেড দিয়ে মানুষের হাত-পা কেটে ‘অস্ত্রোপচার’ করতেন মিল্টন সমাদ্দার: ডিবিপ্রধান
নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্লেড দিয়ে মানুষের হাত-পা কেটে ‘অস্ত্রোপচার’ করতেন মিল্টন সমাদ্দার: ডিবিপ্রধান

ছবি: সংগৃহীত

প্রতারণা ও নানা অনিয়মে গ্রেপ্তার হওয়া ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রয়কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দার মানুষের হাত-পা কেটে নিজেই ‘অস্ত্রোপচার’ করতেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

আজ রোববার রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই কথা বলেন।

মিল্টন ৯০০ মরদেহ দাফন করেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালালেও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ১০০ মরদেহ দাফনের কথা স্বীকার করেছেন বলেও এ সময় ডিবিপ্রধান জানান।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘‘বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে যাদের শরীরের কোনো অংশ পচে যেত, সে অংশগুলো তিনি ছুরি ও ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলতেন। এমন বেশ কয়েকজন বৃদ্ধের তিনি হাত, পা ও আঙুল কেটে ফেলেন। সে সময় তাদের কান্না, যন্ত্রণা ও রক্ত দেখে মিল্টন পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করতেন। তিনি কখনোই অসুস্থ ব্যক্তিদের কোনো হাসপাতালে নিতেন না। মিল্টনের ‘অস্ত্রোপচার কক্ষে’ শুধু কয়েকটা ছুরি ও ব্লেড পাওয়া গেছে। এখানে তিনি নিজেই ‘অস্ত্রোপচার’ করতেন।’’

তিনি বলেন, ‘মিল্টনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এখনো ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আছে। তিনি মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষের দাফন, বৃদ্ধ, বাক্প্রতিবন্ধী, অসহায় মানুষের আশ্রয়ের কথা বলে টাকা সংগ্রহ করতেন। কবর দেওয়ার সংখ্যা যত বেশি, টাকা সংগ্রহ তত বেশি হতো।’

‘মিল্টন সমাদ্দার একজন মাদকাসক্ত ও সাইকোপ্যাথ মানুষ। টর্চার সেলে তিনি মানুষকে পিটিয়ে নিস্তেজ করতেন। তিনি কীভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হলেন, তা বোধগম্য নয়’- যোগ করে বললেন ডিবিপ্রধান।

এদিকে মানব পাচার আইনে করা মামলায় ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’-এর চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শান্তা আক্তার শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিন আশ্রমের মৃত ব্যক্তিদের জাল মৃত্যু সনদ দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে তাকে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মিল্টনের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ। আদালত শুনানি শেষে তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বুধবার (১ মে) রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এরপর বৃহস্পতিবার (২ মে) মিরপুর মডেল থানায় প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা করা হয়। মামলায় মিল্টনের সহযোগী কিশোর বালা নামে একজনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় বৃহস্পতিবার (২ মে) মিল্টনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ।

এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন ডিবির এসআই কামাল হোসেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মানব পাচারের অভিযোগে বুধবার (১ মে) রাতে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মিরপুর মডেল থানায় মামলাটি করেন ধানমন্ডির বাসিন্দা এম রাকিব (৩৫)।

সম্প্রতি কিছুদিন ধরে মিল্টনের বিরুদ্ধে নানা প্রতারণার অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছিল। মিল্টন ফেসবুকে ভিডিও দিয়ে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরই মধ্যে তার সঙ্গে কাজ করা এবং সংশ্লিষ্ট কয়েকজন তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনেন।

পুলিশ ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মিল্টন সমাদ্দার ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি আশ্রয়কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা। জালিয়াতির মাধ্যমে চিকিৎসক সেজে মৃত ব্যক্তির সনদ দেওয়াসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে মিরপুর থানার পুলিশ।