আপডেট : ১১ মে, ২০২৪ ০০:১৩
ইভিএমে পড়েছে কম ভোট, ব্যালটে বেশি
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইভিএমে পড়েছে কম ভোট, ব্যালটে বেশি

ছবি: সংগৃহীত

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল এ যাবৎ অনুষ্ঠিত সব উপজেলা নির্বাচনের মধ্যে সবচেয়ে কম। সাধারণত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে পছন্দের প্রার্থী থাকায় ভোটারদের মধ্যে আলোচনা বেশি থাকে, উপস্থিতিও থাকে বেশি। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধীদল না থাকায় একতরফা নির্বাচনের যে প্রভাব ভোটের মাঠে পড়েছিল, উপজেলাতেও দেখা গেছে তারই রেশ। এ নির্বাচনেও ছিল না বিরোধী দল, ফলে দলীয় প্রতীক ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ধাপের ভোট। ভোটারদের এমন কেন্দ্রবিমুখ হওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালও।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলার নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়েছে ৩৬.১৮ শতাংশ। এর মধ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) চেয়ে ব্যালটে ভোট বেশি পড়েছে। অর্থাৎ ইভিএমকে এখনো আস্থায় নিতে পারছেন না ভোটাররা।

দেখা গেছে, যে ২১টি উপজেলায় ইভিএমে ভোট পড়েছে সেখানে তুলনামূলক কম ভোট পড়েছে। সেখানে গড়ে ভোট পড়েছে মাত্র ৩১.৩১ শতাংশ, অন্যদিকে ব্যালটে অনুষ্ঠিত বাকি উপজেলাগুলোতে ভোট পড়েছে ৩৭.৩১ শতাংশ

গত এক দশকের মধ্যে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে ভোটের হার এবারই সবচেয়ে কম। এর আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৫ম উপজেলা ভোটে গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছিল। তার আগে ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা ভোটে ৬১ শতাংশ এবং তৃতীয় উপজেলা ভোটে ২০০৯ সালে ৬৭.৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে।

নির্বাচন-সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় এক ধরনের অনাস্থার পরিবেশ থাকায় ভোটাররা ভোট বিমুখ হয়েছে। বিশেষ করে বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে। সর্বশেষ বিগত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর বড় একটি অংশ বর্জন করে। সেই ধারাবাহিকতায় উপজেলা ভোটেও বিএনপি-জামায়াত ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। তা ছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ফলে বেশির ভাগ উপজেলায় আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের লড়াই হয়। এক অর্থে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আওয়ামী লীগই। এতে করে সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে টানতে পারেননি প্রার্থীরা।

ইভিএমের চেয়ে ব্যালটে ভোট বেশি পড়ার কারণ হিসেবে অনেকে বলছেন, ইভিএমের চেয়ে ব্যালট পেপারে ভোটের ক্ষেত্রে অনিয়ম হয় বেশি। কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল মারার ঘটনা ঘটে। ইভিএমে ব্যালটের চেয়ে অনিয়মের মাত্রা কিছুটা কম হয়। এখানে কেন্দ্র দখল হলেও ভোটারের ফিংগার ছাড়া ভোট দেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে ব্যালট পেপারে অনুষ্ঠিত উপজেলাগুলোয় ভোটের প্রদত্ত হার বাড়তে পারে।

ভোটের হার নিয়ে সন্তুষ্ট নয় ইসি : উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোটের প্রদত্ত হার নিয়ে সন্তুষ্ট নয় ইসি। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৩৬ শতাংশ ভোট পড়ার এই হারকে ‘কম’ আখ্যা দিয়ে কিছু কারণও চিহ্নিত করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মোটা দাগে পাঁচ কারণে ভোট কম পড়েছে। এগুলোর মধ্যে বৈরী আবহাওয়া, ভোটে বিএনপির অংশ না নেওয়া, জনপ্রিয় প্রার্থীর অভাব, ধান কাটার মৌসুম এবং সাধারণ ছুটি থাকায় শ্রমিকরা নিজ এলাকায় চলে যাওয়ায় ভোট কম পড়েছে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে সোনাতলা, মিরসরাই ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায়। সেখানে ভোট পড়েছে ১৭ শতাংশ। সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলায়। সেখানে ভোট পড়েছে ৭৩.১ শতাংশ। সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন দুটি উপজেলায় ব্যালট পেপারে ভোট অনুষ্ঠিত হয়।

ইসির প্রস্তুত করা ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইভিএমে যে ২১টি উপজেলায় ভোট হয়েছে তার মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে পাবনার সুজানগরে। সেখানে ভোট পড়ে ৪৯.৭৮ শতাংশ। সর্বনিম্ন ভোট পড়ে সিরাজগঞ্জের সদরে ২২.৭০ শতাংশ।

১০ উপজেলায় অস্বাভাবিক ভোট : এবারের উপজেলা ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি থাকলেও ১০টি উপজেলায় অস্বাভাবিক ভোট পড়েছে। উপজেলাগুলো হলো- জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল, কালাই, রাঙ্গামাটির কাউখালী, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, কুড়িগ্রামের রাজিবপুর, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর, কুষ্টিয়ার খোকসা, বাগেরহাটের কচুয়া, মাগুরার শ্রীপুর ও গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া।

২০ শতাংশের নিচে ভোট ছয় উপজেলায় : ছয়টি উপজেলায় ২০ শতাংশের নিচে ভোট পড়েছে। এসব উপজেলা হলো- চট্টগ্রামের মিরসরাই, কুষ্টিয়ার সদর, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর, বগুড়ার সোনাতলা, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, ঢাকার নবাবগঞ্জ।

ভোট কম পড়ার কারণ হিসেবে নির্বাচন ভবনের ইসি আলমগীর সাংবাদিকদের আরও বলেন, ধান কাটার মৌসুম, বিশেষ করে হাওরাঞ্চলে বোরো ধান যেসব এলাকায় আছে, এটা আমাদের আগেই মাঠ প্রশাসন থেকে বলেছে, ধান কাটার মৌসুমের জন্য ভোট কম পড়তে পারে। এ ছাড়া ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। আবার একটি বড় দল রাজনৈতিকভাবে অংশ না নেওয়ায় ভোট কম হয়েছে। শহর এলাকায় ছুটি থাকলে শ্রমিকরা বাড়ি চলে যায়। গাজীপুরে কিন্তু ভোট কম পড়েছে। শুধু ধান কাটা না, নানা কারণে ভোট কম পড়েছে। আরও কোনো কারণ থাকলে তা গবেষকরা বলতে পারেন। এ ছাড়া প্রার্থীর জনপ্রিয়তার ওপরও ভোট পড়ার হার নির্ভর করে। এই নির্বাচনের ৭৩ শতাংশ ভোট পড়েছে এমন এলাকাও আছে। আবার ১৭ শতাংশ ভোট পড়েছে এমন উপজেলাও আছে।

তবে নির্বাচন কমিশনের প্রত্যাশা, সামনের ধাপগুলোর নির্বাচন আরও জমে উঠবে। প্রার্থীদের প্রচারণা জমে উঠলে ভোটকেন্দ্রে আরও বেশি সংখ্যক ভোটার উপস্থিতি দেখা যাবে।