গাজীপুরের কালিয়াকৈরে জমে উঠেছে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। উপজেলা চেয়ারম্যানের চেয়ারটি দখলে নিতে মরিয়া গুরু ও তার শিষ্য। চেয়ার পেয়ে গুরুর জনবিমুখ ও চেয়ার পেয়ে শিষ্যের জনমুখো হওয়া নিয়ে হিসাব কষছেন জনগণ। তবে জনমুখো ও কর্মফলের কারণে তাদের এ লড়াইয়ে জনমুখে ভাসছে শিষ্যের নাম।
এলাকাবাসী, নেতা-কর্মী ও উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২১ মে কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। দ্বিতীয় ধাপের এ নির্বাচন সামনে রেখে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত। নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নিয়ে। এখানে চেয়ারম্যান পদে কাগজে-কলমে তিন প্রার্থী। তাদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী (কাপ-পিরিচ) মুরাদ কবীর শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তাই এ পদে লড়ছেন বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সিকদারের (আনারস) সঙ্গে তারই এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহচর, বর্তমান উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ও গাজীপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম আজাদ (মোটরসাইকেল)। নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটাররা এই দুই নেতার লড়াইকে গুরু-শিষ্যের লড়াই হিসেবে দেখছেন। তাদের ভাষ্যমতে, কামাল উদ্দিন সিকদার দুইবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু তিনি নির্বাচনের পর উন্নয়নে ভূমিকা রাখলেও ধীরে ধীরে জনবিমুখ হয়ে পড়েছেন। নির্বাচনের পর তিনি জনগণের কাছে না যাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
পক্ষান্তরে, তার শিষ্য সেলিম আজাদ বিপুল ভোটে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েও থেমে থাকেননি। প্রত্যেকটা গ্রাম পাড়া-মহল্লায় জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন এবং এখনো যাচ্ছেন। তাদের সমস্যা ও সুখ-দুঃখে পাশে দাঁড়ান সেলিম আজাদ। সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছেন। ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে প্রায় তিন হাজারের বেশি ওয়াজ মাহফিলে যোগদান করেন। তার অনুদানের ছোঁয়া লেগেছে বিভিন্ন মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মন্দিরসহ প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এমন কোনো গ্রাম, পাড়া-মহল্লা নেই যেখানে চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম আজাদের অনুদান যায়নি। এমন জনমুখো ও কর্মফলের কারণে গুরু-শিষ্যের এ লড়াইয়ে জনমুখে ভাসছে শিষ্যের নাম। তাদের ভাষ্য, যাকে আমরা কাছে পাই, তাকেই আমরা নির্বাচিত করব। জনগণ মোটরসাইকেল মার্কায় ভোট দিবে, এতে সেলিম আজাদের ভোটের অভাব হবে না।
তবে সাধারণ ভোটারদের ভাষ্য, বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন সিকদার উন্নয়নমূলক কাজ করলেও এলাকায় যোগাযোগ কম। তবে সেলিম আজাদও উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। আবার বারবার এলাকাবাসীর কাছে গিয়েছেন, তাদের সমস্যার কথা শুনেছেন ও অনুদান দিয়েছেন।
মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী সেলিম আজাদ বলেন, ‘আনারস প্রতীকের প্রার্থী নিজেও তার সমর্থক, নেতা-কর্মীরা আমার মোটরসাইকেল সমর্থকদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তাই আমি সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত। সুষ্ঠ নির্বাচন হলে অনেক ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হব।’
অন্যদিকে আনারস প্রতীকের প্রার্থী কামাল উদ্দিন সিকদার তার প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে গিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন। তবে তিনি এবারও বিজয়ের মালা গলায় পরার বিষয়ে আশাবাদী।
অবাধ, সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসার হাফিজুর রহমান জানান, এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাতজন ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৪ জন।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা