আপডেট : ১ নভেম্বর, ২০২২ ১৫:৫৮
‘তিন দিন চাল পাইনি, তাই আজ ভোরেই চলে এসেছি’
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

‘তিন দিন চাল পাইনি, তাই আজ ভোরেই চলে এসেছি’

ওএমএসের চাল পেতে ভোর থেকেই ব্যাগ রেখে জায়গা দখলে নেন ক্রেতারা। ছবি: দৈনিক বাংলা

ঘড়িতে তখন ৫টা বেজে ৪৮ মিনিটি। ভোরের আকাশে তখনও লালচে রঙ আসেনি। এ সময় একটি দোকানের সামনে দেখা গেল, কয়েকজন নারী-পুরুষ দোকানটির সামনের মেঝেতে ইটচাপা দিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগ সারিবদ্ধভাবে রেখে পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই জানা গেল, তারা ওএমএসের চাল নেয়ার জন্য এভাবে ব্যাগ রেখে লাইনের জায়গা দখলে নিচ্ছেন।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ওয়ার্ড-১০ শিমুলতলীতে আজ মঙ্গলবার ভোরে এ চিত্র দেখা যায়।

ওএমএসের চাল নিতে আসেন ওই ওয়ার্ডের আকচা মুন্সিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আকলিমা খাতুন। তিনি বলেন, আমার স্বামী একজন ভ্যানচালক। গতকাল ওএমএসের চাল কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। আমার সিরিয়াল অনেক দূরে থাকায় চাল পাইনি। খালি হাতে ফিরে গিয়েছি। তাই আজ ভোরে এসে লাইনে ব্যাগ রেখে দিয়েছি।

পৌরসভার সামস নগরের বাসিন্দা জরিফা বেগম বলেন, এখানে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খুব ভিড় লেগে যায়। পৌরসভার ওএমএস পয়েন্টে ইউনিয়নের নারী-পুরুষরাও চাল কিনতে আসেন। ৫ কেজির বদলে ৩ কেজি করে দিলেও অধিকাংশই চাল না নিয়ে ফিরে যান। তাই আগে চাল পেতে ভোরে এসেছি।

আইনুল হক নামের এক যুবক বলেন, প্রতিদিন লাইনে কমপক্ষে ৩ শতাধিক নারী-পুরুষ ওএমএসের চাল ও আটা কিনতে দাঁড়ান। কিন্তু অর্ধেকের বেশি মানুষ না পেয়ে ফেরত চলে যান। আমি তিন দিন চাল পাইনি। আজ ভোরে এসেছি।

স্থানীয় ওএমএস ডিলার মো. হাবিব বলেন, চাহিদার তুলনায় তিনগুণ মানুষ এসে লাইনে দাঁড়ায়। আমাদের যা বরাদ্দ দেয়া হয়, তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। প্রতিদিন চাল ও আটা বিক্রির সময় হিমশিম খেতে হয়। দোকান খোলার আগেই শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে।

জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সদর উপজেলায় ২৪টি ডিলারের মাধ্যমে ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন এসব ডিলারের মাধ্যমে ৬ টন আটা ও ৬ টন চাল খোলা মার্কেটে সরকারের নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম বলেন, ওএমএস পয়েন্টে চাল ও আটা কিনতে হলে লাইনে দাঁড়াতে হবে। যে আগে আসবে, সে আগে পাবে। চাল ও আটা মানুষের কতটা প্রয়োজন, তা ভোরবেলার এ চিত্র প্রমাণ করে। আমাদের কাছে খবর আছে, অনেক মানুষ ওএমএস থেকে কোনো কিছু কিনতে না পেরে ফেরত যাচ্ছে। এটি রাষ্ট্রীয় বরাদ্দের বিষয়। বরাদ্দ কম থাকায় এ অসুবিধা হচ্ছে। বরাদ্দ বাড়লে আরও বেশি মানুষ পাবে।