চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও সমর্থন নিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর স্বাধীন ও নিরেপক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রথম ধাপে দেশের ১৫২টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৮ মে। পাশাপাশি দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৬১টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সে ক্ষেত্রে আগামী ২১ মে এসব উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ভোট দিয়ে পুনরায় নির্বাচিত করেছে। ফলে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে ঈর্ষান্বিত স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যরা। গণতন্ত্র ও জনগণের কাছে পরাজিত হলেও গণতন্ত্র ও নির্বাচনের বিরুদ্ধে তাদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত থামিয়ে দেয়নি। সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সংঘটিত বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কমাতে এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি কুচক্রীমহলের তৎপরতা এখনো বিদ্যমান। বাংলাদেশের আসন্ন উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচনকে ঘিরে তা বানচাল এবং তাতে ভোটার উপস্থিতি কমানোর লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র থেমে নেই।
উল্লেখ্য, ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মাধ্যমে গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করে অবৈধভাবে সরকারের ক্ষমতায় আসীন হওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচনের পূর্ব থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের অপকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করেছে বিএনপি ও তাদের বিদেশি মিত্ররা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কমাতে বিএনপি কঠিন ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের পথ অবলম্বন করেও তাতে সফল হতে পারেনি। বিএনপির সব ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা জনগণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণতন্ত্রের বিজয় নিশ্চিত করে সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করেছে।
নির্বাচন বানচালে সব অপপ্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় এখন তাদের নতুন কৌশল হচ্ছে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত যেকোনো নির্বাচনকে যে করেই হোক প্রশ্নবিদ্ধ করা। দেশি-বিদেশি সব পর্যবেক্ষক যেখানে বলেছে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। সেখানে বিএনপি-জামায়াতসহ স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিগুলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ আসন্ন উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচনেও ষড়যন্ত্র করে ভোটার উপস্থিতি কমিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নতুন করে অপপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অংশ হিসেবে বিএনপি প্রথমে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা তাই করেছিল। তারা ভেবেছিল যে যদি তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে বাতিল হবে; কিন্তু সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি ছাড়া অন্যান্য যত গণতান্ত্রিক দল ছিল তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে গণতন্ত্রের বিজয় নিশ্চিত হয়েছে এবং ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির সব ধরনের ব্যর্থতায় রাজনৈতিক পরাজয় ঘটেছে। তারপর থেকে তারা বাংলাদেশবিরোধী আন্তর্জাতিক চক্রের প্ররোচনায় পড়ে মিথ্যাচার করেছে। বাংলাদেশবিরোধী বিদেশি অপশক্তিগুলোর সাথে আঁতাত করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচনের বিরুদ্ধে করা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের ধারাবাহিকতায় আসন্ন উপজেলা নির্বাচনও বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে অপপ্রচার চালিয়ে সরকার ও দেশকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে। দেশের উন্নয়নে অংশীদার না হয়ে দেশ ও সরকারের অর্জনকে বিতর্কিত ও ম্লান করার জন্য ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সদ্য অতীত ইতিহাস বলছে শুধু নির্বাচন বর্জন করেই থেমে যায়নি বিএনপি। নির্বাচনের আগে থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনী ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম রাখার লক্ষ্যে বাস, ট্রেন, ভ্যান, ট্রাক, রিকশা এবং মোটরসাইকেলে আগুনসন্ত্রাস তথা জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো সহিংস কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে জনমনে ভীতির সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচালের অপপ্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। নির্বাচনের দিন ভোটারদের উপস্থিতি কমানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুর চালিয়েছে। নির্বাচনের আগের দিন থেকে শুরু করে একটানা তিন দিন সহিংসতা চালিয়ে গিয়েছে; কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে- বিএনপির আগুনসন্ত্রাসকে এ দেশের গণতন্ত্রমনা জনগণ একদমই তোয়াক্কা করেনি। বিএনপি কর্তৃক পরিচালিত সব ধরনের আগুন ও সহিংসতাকে উপেক্ষা করে এ দেশের গণতন্ত্রমনা জনগণ ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে পুনরায় নির্বাচিত করে জনগণের সমর্থন ও শক্তিতে বিশ্বাসী বাংলাদেশের ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগকে। বিএনপির ভুলে গেলে চলবেনা যে বাঙালিরা বীরের জাতি। আগুনসন্ত্রাসী করে তাদের দমিয়ে রাখা যায় না। বিএনপি চেয়েছিল জ্বালাও-পোড়াও করে বাঙালি জনগণকে ভোটের দিন ঘরের ভিতর আটকে রেখে নির্বাচন বানচাল করতে; কিন্তু তা আর হলো কই, গণতন্ত্রমনা সাহসী বাঙালি জনগণ সব ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে উপেক্ষা করে গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে গণতন্ত্রের বিজয় নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি হরতাল-অবরোধের নামে দেশের অচলাবস্থা সৃষ্টির সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল বিএনপির। সেই লক্ষ্যেই মূলত ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে ৬ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। ৬ জানুয়ারি সকাল ৬টা থেকে বিএনপি কর্মসূচি দিয়েছিল। এভাবে হরতাল-অবরোধের নামে দলটি দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে গিয়েছে। নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালনের সুযোগও নিতে চাচ্ছে না দলটি। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন কর্মসূচি জনসম্পৃক্ত করে তুলতে না পারা এবং আন্দোলনের জন্য নতুন ইস্যু সৃষ্টির ব্যর্থতায় এমন সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে দলটি। এখন দলের কর্মসূচিও আসে অজ্ঞাত স্থান থেকে। মাঠেও দেখা যায় না দলীয় কোনো নেতা-কর্মীকে। রাজনৈতিকভাবে পরাজিত বিএনপির সন্ত্রাসী নেতা-কর্মীরা অজ্ঞাত স্থান থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনায় সব ধরনের সহিংস কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে নির্বাচনকে বানচাল এবং প্রশ্নবিদ্ধ করতে।
অতীতের মতো এখন আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরেও বিএনপির প্রস্তুতি অপরিবর্তনীয়। তারা ইতোমধ্যে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। এখন থেকে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বাকি সময়টুকু তারা কীভাবে অতীতের মতো আগুনসন্ত্রাস করে বাঙালি জনগণের মনে ভীতির সৃষ্টি করে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কমিয়ে নির্বাচনকে বানচাল করা যায় সেই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের নীলনকশা আঁকছে বিদেশি অপশক্তিগুলোর সঙ্গে আঁতাত করে। নির্বাচনকে কেন্দ্র বিভিন্ন সময়ে তারা এ ধরনের গণতন্ত্রবিরোধী অপকর্ম করে সফল হতে না পারলেও নষ্ট করে দেশীয় অনেক সম্পদ এবং কেড়ে নেয় বাংলাদেশের সাধারণ এবং খেটে-খাওয়া মানুষের তাজা প্রাণ। নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি-জামায়াতের মতো গণতন্ত্রবিরোধী অপকর্ম অন্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল।
বিএনপির ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অপরাজনীতি শুধু ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কমানোর ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়- তাদের ষড়যন্ত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা পর্যন্ত বিস্তৃত। আর সেই লক্ষ্যেই ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে বিএনপি ষড়যন্ত্র করে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ইতিহাসের জঘন্যতম এবং ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা ঘটিয়েছিল। ১৯ বছরের আগের এ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম ঘৃণ্যতম দিন। দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নেতৃত্বশূন্য করার জঘন্য অপচেষ্টার দিন। দেশের মানুষ আজও কেঁপে ওঠেন শনিবার ওইদিনটির কথা ভেবে। কতশত মানুষ মনের অজান্তে কেঁদে ফেলেন। স্বজন হারানোরা খুঁজে ফেরেন প্রিয় মানুষের স্মৃতি। সেদিন যদি ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড সমাবেশের জন্য ব্যবহৃত ট্রাকে বিস্ফোরিত হতো- আজ হয়তো বঙ্গবন্ধুকন্যা বেঁচে থাকতেন না। মারা পড়তেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও। মূলত আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতেই এমন পৈশাচিক হামলা চালায় ঘাতকরা। এ ছাড়া ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার জনসমর্থন নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসার পরপরই বিএনপি ষড়যন্ত্র করে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহ ঘটায়, যেন আওয়ামী লীগের জয়কে বানচাল করে দিয়ে তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা যায়। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় প্রাণ হারায় হাজার হাজার বাঙালি শ্রেষ্ঠ সন্তান বিডিআরের বিভিন্ন উচ্চ পদের কর্মকর্তারা।
সুতরাং, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মূলত ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তনির্ভর একটি রাজনৈতিক দল। তাদের রাজনৈতিক আদর্শের মূলে রয়েছে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত। তাদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিস্তার শুধু নির্বাচন ঘিরেই নয় বরং আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা মানুষও তার আওতাভুক্ত। আওয়ামী লীগ যেখানে জনগণের সমর্থন ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিএনপি সেখানে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ সেখানে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক উপায়ে সংঘটিত করতে নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ সহায়তা দিয়ে গণতন্ত্রের বিজয় নিশ্চিত করতে যাচ্ছে। সেখানে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিএনপি ভোটারদের কম উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে ও চক্রান্তে লিপ্ত আছে। স্বাধীন ও নিরেপক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে সংঘটিত বিভিন্ন গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক বিজয় বিএনপির রাজনৈতিক পরাজয়কে নিশ্চিত করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচনের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি কোনো ষড়যন্ত্রই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বিজয়ের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারবে না। বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা জনগণ সব ধরনের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে।
লেখক: উপাচার্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা