ঋণ দেয়ার আগে বাংলাদেশকে বিভিন্ন শর্ত দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তার মধ্যে বিভিন্ন খাতে সরকারকে ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ দিচ্ছে তারা। আইএমএফের শর্ত মেনে কোনো খাতে ভর্তুকি কমানো হবে কি না, সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। তবে কারও শর্ত মেনে কৃষিতে ভর্তুকি কমানো হবে না বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
ঋণের শর্ত ঠিক করতে ঢাকায় আইএমএফের তৎপরতার মধ্যে সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভার পর কৃষিমন্ত্রীকে এ নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘কৃষিতে ভর্তুকি কমবে না, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন।’
আইএমএফের কাছে গত জুলাইয়ে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। এই ঋণ নিয়ে আলোচনা করতে সংস্থাটির একটি দল এখন বাংলাদেশ সফরে রয়েছে। ঋণের শর্ত ঠিক করতে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করছে তারা। ঋণ পেতে কোথায় কী সংস্কার করতে হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছে তারা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার। ভর্তুকির বেশির ভাগই জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের পেছনে খরচ হবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সারে ২০২১-২২ অর্থবছরের আগের পাঁচ বছর ৮ হাজার কোটি টাকা করে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছিলাম। গত অর্থবছর ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছি। আমরা প্রাক্কলন করেছি এবার আমাদের ৪৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এ টাকা কোথা থেকে আসবে? হয় কোনো গুপ্তধন লাগবে, নয়তো আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ লাগবে। বাংলাদেশ এ টাকা কোথা থেকে জোগাড় করবে?’
মন্ত্রী বলেন, ‘তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এটা তোমার চিন্তার বিষয় না। আমরা সারের ব্যাপারে, কৃষি উৎপাদনের ব্যাপারে কোনো ঝুঁকিতে যাব না। কৃষির উৎপাদনটাকে আমাদের দীর্ঘস্থায়ী করতে হবে। যদি ৪৬ হাজার কোটি টাকা লাগে, এটা আমরা দেব।’
সারের কোনো সংকট হবে না জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকৃতি যদি আমাদের সহায়ক থাকে, বোরোতেও কোনো ঝুঁকি হবে না, এটুকু আমি আপনাদের বলতে পারি। এ মুহূর্তে দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে সার রয়েছে। যা প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি সার আমরা সংগ্রহ করেছি।’
চলতি মৌসুমে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এক প্রশ্নে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দেশে ২ কোটি টন বা তার বেশি বোরো উৎপাদন হয়। আর আমন হয় ১ কোটি ৫০ থেকে ৬০ লাখ টন। এবার শ্রাবণ মাসে এক দিন বৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য আমরা খুব উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলাম। তারপরও একদম শেষের দিকে কৃষকরা সেচসহ নানাভাবে মোটামুটি আবাদ করেছেন। বৃষ্টি হয়েছে এবং সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড়ের বৃষ্টিসহ সব মিলিয়ে আমনের অবস্থা বেশ ভালো। কিছুটা উৎপাদন কম হবে, তাতে করেও আমাদের টার্গেট অর্জন হবে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আশ্বিন-কার্তিক মাসেও মঙ্গা এলাকায় কোনো হাহাকার নেই। মোটা চালের দাম গত এক-দেড় মাসে বাড়েনি। দাম বেশি আছে, কিন্তু স্থিতিশীল আছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে।
আমদানি না হলেও চালের সংকট নেই
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে অনেক কম চাল আমদানি হলেও বাজারে চালের কোনো সংকট না থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন কৃষিমন্ত্রী।
চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকারিভাবে গত জুলাই থেকে ৫ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানির কথা থাকলেও ১ লাখ টন চাল এসেছে। সাড়ে ৬ লাখ টন গম আসার কথা থাকলেও ১ লাখ ৫৪ হাজান টন গম এসেছে। এরপরও দেশে চালের দাম বেড়ে সংকট, বাজারে গিয়ে চাল পাওয়া যায় না এমন পরিস্থিতি নেই।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বেসরকারিভাবে ৮ লাখ ৮৩ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হলেও ১ লাখ ৬১ হাজার টন এসেছে। আর গম এসেছে ৪ লাখ টন। কোনো সমস্যা হয়নি। কৃষিমন্ত্রী হিসেবে আমি দাবি করব আমাদের উৎপাদন বেড়েছে। আমদানি না হলেও আমরা ভালো অবস্থানে আছি।’
এদিকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আগে ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টন গম আমদানি হতো। এবার ৪৮ লাখ টন আমদানি হয়েছে, কিছুটা ঘাটতি আছে। বেসকারিভাবে যদি গম না আসে সেই চাপ চালের ওপর পড়বে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকেই কিন্তু খাদ্যের চাহিদা মিটে যায়। দুর্যোগে যদি অসুবিধা হয় সেটা ভেবে আমরা আমদানি করছি। সরকারিভাবে ১০ লাখ টন চাল আমদানি করব। তার মধ্যে সাড়ে ৫ লাখ টন আমদানিতে ভিয়েতনাম, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি করেছি, সেখান থেকে জাহাজ আসতে শুরু করেছে। বাকি চাল আমন সংগ্রহের পর আনব। ভারত গম রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার পর রাশিয়া থেকে ৫ লাখ টন গম আমদানির চুক্তি করেছি, সেই গমও আসা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে খাদ্যের কোনো সমস্যা হবে, দুর্ভিক্ষ হবে এমন আমরা আশা করি না।’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই মুহূর্তে দেশের কোনো এলাকায় খাদ্যের হাহাকার নেই। মোটা চালের দাম বেশি কিন্তু স্থিতিশীল আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম অস্বাভাবিক, এর প্রভাব পড়েছে গম আমদানিতে। তবে বাংলাদেশে খাদ্যসংকট হবে বলে আমরা মনে করি না।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা