বিশ্বের শ্রমবাজারে এখন চলছে তীব্র মন্দা। বিষয়টি নিয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ। গত সোমবার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) জানিয়েছে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে এই মন্দা আরও বেড়ে যেতে পারে। গত এক বছরে বিশ্বব্যাপী চাকরিচ্যুত হয়েছেন অন্তত ৪ কোটি মানুষ।
‘দ্য আইএলও মনিটর অন দ্য ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক শ্রমবাজার গত কয়েক মাস ধরেই ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। বিশেষ করে ২০২২ সালের সর্বশেষ তিন মাসে শ্রমিক নিয়োগের হার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। বেকারত্ব আরও বাড়তে পারে।
গভীর জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তাসংকট, ব্যাপক মূল্যস্ফীতি, আর্থিক নীতি কঠোর করা এবং বিশ্বব্যাপী মন্দার আশঙ্কার মধ্যে জাতিসংঘের এ অঙ্গপ্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার ও কাজের মান উভয়ই কমে যাচ্ছে।
আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়, যদিও সাধারণত অর্থনৈতিক মন্দার ফলে শ্রমবাজারের সংকোচন এবং বেকারত্ব বাড়ার ক্ষেত্রে বেশ সময় লাগে তার পরও প্রাপ্ত তথ্য থেকে বোঝা যায়, শ্রমবাজারে তীব্র মন্দা বিদ্যমান রয়েছে।
আইএলওর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি বছরের শুরুতে বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কা থেকে সামলে উঠতে শুরু করলেও জনসংখ্যা অনুপাতে কর্মসংস্থানের হার আবার কোভিড-১৯-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে গিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সেই পরিস্থিতি নেতিবাচক দিকে পরিবর্তিত হয়েছে।
চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোভিড মহামারির আগে যে পরিমাণ শ্রমঘণ্টা ছিল বিশ্বজুড়ে তা অন্তত দেড় শতাংশ কমে গেছে। সারা বিশ্বে অন্তত ৪ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়, যেহেতু বিশ্বজুড়ে শ্রমবাজার সংকুচিত হচ্ছে, মূল্যস্ফীতির কারণে প্রকৃত মজুরি কমছে। তাই বিশ্বের অনেক দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের মান অনেকটা কমে গেছে, যা দেশগুলোর অর্থনীতিকে নেতিবাচক দিকে প্রভাবিত করছে।
উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে ব্যবধান আরও বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ৭৫ শতাংশ উন্নত দেশে দেখা গেছে, ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জনসংখ্যা-কর্মসংস্থানের অনুপাত প্রাক্-কোভিডপর্যায়ে ফেরত গেছে বা ক্ষেত্রবিশেষে তাকে ছাড়িয়েও গেছে। কর্ম সময়ের পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোতে কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধারের হার ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল। কিন্তু পরবর্তী প্রান্তিকে তা একেবারেই গতি হারায়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই আইএলও বলেছিল, ২০২০ সালে মহামারি শুরুর সময়ের তুলনায় পৃথিবী অনেকটা ঘুরে দাঁড়ালেও ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২২ সালেও পিছিয়ে থাকবে অর্থনীতি। আর তাতে কর্মঘণ্টা কমবে। ২০২২ সালের বৈশ্বিক কর্ম সময় ২০১৯ সালের তুলনায় ২ শতাংশ কম থাকবে।
যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের শ্রমবাজারে কী প্রভাব পড়বে, তা-ও নিরূপণ করেছে আইএলও। বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ইউক্রেনের কর্মসংস্থানের হার আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ কমবে। তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আইএলও আরও ভয়ানক পূর্বাভাস দিয়েছিল। তারা তখন বলেছিল, ২০২২ সালে ইউক্রেনের ৪৮ লাখ মানুষ কাজ হারাতে পারে। মূলত রুশ বাহিনীর কাছ থেকে বিভিন্ন অধিকৃত এলাকা পুনরুদ্ধার ও বিরোধপূর্ণ অঞ্চল হ্রাসের কারণে এমনটি ঘটেছে। তবে এই পুনরুদ্ধার দীর্ঘস্থায়ী হবে না, তার প্রকৃতি হবে ভঙ্গুর।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রমবাজারের এই পতন ঠেকাতে সারা বিশ্বে সামাজিক সংলাপ প্রয়োজন। এটা শুধু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বা তার প্রভাব ঠেকানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, বরং কর্মসংস্থান, উদ্যোগ, দারিদ্র্য- এসব বিষয়েও নজর দিতে হবে বলে প্রতিবেদনে মতপ্রকাশ করা হয়েছে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা