আপডেট : ২ নভেম্বর, ২০২২ ১৬:০১
শাওনের আর রইল না কেউ
সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি

শাওনের আর রইল না কেউ

এতিম শাওনকে জড়িয়ে বিলাপ করছেন স্বজনরা। ছবি: দৈনিক বাংলা

গতরাতেও মা আদর করে মুখে তুলে খাইয়েছেন শাওনকে। এরপর শাওন ঘুমিয়ে পড়েছিল বাবা-মায়ের কোলেই। প্রতিদিনের মতো আজ ভোরেও শাওনকে ঘুম থেকে তুলে ভাত খাইয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হয়ে যান বাবা ইসরাফিল ও মা স্বপ্না। তবে কে জানত এই যাওয়াই তাদের শেষ যাওয়া।

আজ বুধবার সকালে নিজেদের কর্মস্থল ধামরাইয়ের বালিথা এলাকায় গ্রাফিক্স ডিজাইন কারখানার সামনে গাড়িচাপায় প্রাণ হারান ইসরাফিল-স্বপ্না দম্পতি।

মুহূর্তেই খবরটি পৌঁছে যায় ধামরাইয়ের সানোড়া ইউনিয়নের শোলধন এলাকায় ইসরাফিল-স্বপ্নার বাড়িতে। শুরু হয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্না। পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। মানুষের আর্তনাদের মধ্যে শাওন ছিল নির্বাক। চোখ পানিতে টলমল করলেও অন্য সবার মতো চিৎকার করে কাঁদতে পারছে না সে। বুঝাতে পারছে না বাবা-মা হারানোর কষ্ট।

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মা-বাবা, নিজে না কাঁদলেও স্বজনদের বিলাপ দেখে চোখ টলমল করছে শাওনের। ছবি: দৈনিক বাংলা

নিহত দম্পতির স্বজনরা জানান, প্রায় ১২ বছর আগে পারিবারিকভাবে ইসরাফিল ও স্বপ্নার বিয়ে হয়। পরে তাদের সন্তান শাওনের জন্ম হয়। কয়েক বছর ধরে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন ইসরাফিল। গত কিছুদিন ধরেই বাড়িতে নতুন ঘর তোলার চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু একার রোজগারে অর্থের সংকুলান না হওয়ায় স্ত্রী স্বপ্নাকেও কারখানায় চাকরি নিয়ে দেন। বাইসাইকেলে চেপে প্রতিদিন তারা দুজন কারখানায় যেতেন। আজ সকালেও একসঙ্গে বের হন।

ইসরাফিলের চাচি মরিয়ম আক্তার বলেন, খুব হাসিখুশি ও মিশুক ছিল ওরা। চাকরি করে এসেও বাড়ির কাজ একাই সামলে নিত স্বপ্না। এক রুমে থাকত দেখে একটা ঘর করতে চেয়েছিল। কিন্তু টাকা-পয়সায় কুলিয়ে উঠতে পারছিল না। এজন্য দুইমাস আগে কারখানায় চাকরি নেয়। আজকে তাদের ১২ বছরের সাজানো সংসার নিমিষেই শেষ হয়ে গেল।

শাওনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন ফুফু নাজনীন আক্তার। বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার এই ভাতিজার কী হবে? তার তো কেউ রইল না। গতকাল রাতে শাওনরে খাওয়ায় দিছে ওর মা। বাপ-মায়ের সঙ্গেই ঘুমাছিল সে। আজকে সকালেও শাওনরে খাওয়ায় দিয়ে কাজে যায় তারা। সব শেষ হয়ে গেল তার।’