রাজধানীর পুরান ঢাকায় সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের কর্মীর সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের কিছু কর্মীর মধ্যে দফায় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও ন্যাশনাল হাসপাতালের সামনে লাঠিসোঁটা-পাইপ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয় বলে জানা যায়।
এতে দুই গ্রুপরে ২ জন করে মোট ৪ জন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পূর্ব শত্রুতার জেরে মারামারি সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে প্রথমে মারামারির সূত্রপাত হয়। এ সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের কর্মীরা রড, হাতুড়ি, ইট দিয়ে জবি শাখা ছাত্রলীগের কর্মী মেহেদী হাসান মিরাজসহ তার বন্ধুদের মারধর করে গুরুতর আহত করেন। এরপর তাদের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ইন্সটিটিউট হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের কয়েকজনও হাসপাতালে ভর্তি হন। সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সূত্রাপুর ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের সহকর্মীদের হাসপাতালে দেখতে গেলে খবর পেয়ে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি-সেক্রেটারি গ্রুপের ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী রড, লাঠি, জিআই পাইপ নিয়ে এসে তাদের ওপর হামলা করেন। এতে সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের সিয়াম ও ফয়সাল নামে দু’জন গুরুতর আহত হন।
আহত জবি ছাত্রলীগের কর্মী ও অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসান মিরাজ বলেন, ‘আমি পুরান ঢাকার স্থানীয়। শনিবার রাতে জবির ৫ থেকে ৬ জন ও পুরান ঢাকার আরও ৫ থেকে ৬ জন বন্ধুরা মিলে সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে আমরা আড্ডা দিচ্ছিলাম। এ সময় আমার বন্ধু আকাশের সঙ্গে পূর্বের শত্রুতার জের ধরে আমাদের ওপর হামলা করা হয়। এ সময় তারা ৭ থেকে ৮ জন ছিলেন। তারা হাতুড়ি, রড দিয়ে হামলা করেন। এ সময় আমার কয়েকজন বন্ধু মার খেয়ে পালিয়ে যায়। একা পেয়ে আমাকে ও আমার বন্ধুদেরকে মেরে গুরুতর আহত করা হয়।
বিপক্ষ গ্রুপের পরিচয় জানতে চাইলে মিরাজ বলেন, ‘তারা কেউ সোহরাওয়ার্দী ছাত্রলীগের, আবার কেউ সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের কর্মী। তাদের নেতা আজিম। তারা সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ বিল্লালের রাজনীতি করেন।
জানা যায়, আলী আজিম খাঁন সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। পড়ালেখা করেছেন সোহরাওয়ার্দী কলেজে। এদিকে ঘটনাস্থল থেকে শান্ত নামে মেহেদীর এক বন্ধুকে থানায় আটক করেছে সূত্রাপুর থানার পুলিশ।
সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আজম খাঁন বলেন, ‘সিয়ামকে মারতে জগন্নাথের ৩০-৪০ জন আসে। আর এরা ছিল মাত্র ৩-৪ জন। তাদের হামলায় সিয়াম ও ফয়সাল নামে দুইজন আহত হয়েছেন। সিয়াম একটি কলেজে ও ফয়সাল লালবাগ কলেজে পড়ে। আমার সঙ্গে রাজনীতি করত বলতে ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম করত মাঝে মাঝে। এটা রাজনৈতিক ঘটনা নয়। বন্ধুদের ভিতর হাতাহাতি।’
সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কলেজের কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। বহিরাগতরা কলেজের নাম ভাঙিয়ে ঘটনা ঘটায়। সিয়াম, ফয়সাল কলেজের কেউ নয়।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আক্তার হোসেন বলেন, ‘মারামারির ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কেউই ছিলেন না। ওখানে যারা মারামারি করেছেন সেটা তাদের ব্যক্তিগত কোন ঝামেলায় ঘটেছে। যারা ওখানে মারামারিতে ছিলেন তাদের সঙ্গে আমাদের মিছিল মিটিং করা অবস্থায় কোনো ছবি কেউ দেখাতে পারবে না। এমনকি ওখানে সোহরাওয়ার্দী কলেজেরও কেউ ছিলেন না। চাইলে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে পারেন।’
জবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজী বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে জবি ছাত্রলীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী সেখানে মারামারিতে জড়িত ছিলেন তাদের কাওকেই আমি চিনিনা।’
জবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ক্যাম্পাসের ভেতর কোনো মারামারি হয়নি। জেনেছি এই ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র ছিলেন। কোনো অপরাধকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্রয় দেয় না। পুলিশ প্রশাসন ঘটনা তদন্ত করছে। তারা ব্যবস্থা নেবে।’
সূত্রাপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রবিউল ইসলাম জানান, ‘তুচ্ছ ঘটনায় হাতাহাতি। আমরা ঘটনাস্থলে আসার পর পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি। এ ঘটনার তদন্ত চলছে।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা