নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে এবার কোরবানির হাট মাতাবে বিভিন্ন নামের কয়েকটি গরু। ক্রেতাদের আকর্ষণ বাড়াতে তাদের নাম রাখা হয়েছে সিনবাদ, আলাল, জায়েদ খান, মেসি, রোনালদো, সম্রাট, সুলতান, সাদা বাবু, কালো বাবুসহ আরও অনেক।
গরুগুলোকে এক নজর দেখতে প্রতিনিয়ত মানুষ ভিড় জমাচ্ছে খামারগুলোতে। কোরবানিতে নানা জাতের গরুর চাহিদার সঙ্গে বাহারি সব নামও নজর কাড়ছে ক্রেতাদের। আর এই নজর কাড়তে খামারিরা গরুর নাম দেন রাজকীয় এবং ঐতিহ্যবাহী বা প্রভাবশালী পরিবারের নামকরণে।
উপজেলার পশুর হাট ও ফার্মগুলো ঘুরে দেখা গেছে সবচেয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে ও দামের দিক দিয়ে সেরা অবস্থানে আছে সিনবাদ ও আলাল নামে আমেরিকান ফ্লাকবি জাতের ষাঁড় দুটি। এর পর আলোচনায় আছেন জায়েদ খান, মেসি, রোনালদো।
সোনারগাঁ ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান, সিনবাদের ওজন প্রায় এক হাজার কেজি ও আলালের ওজন এক হাজার বিশ কেজি। ষাঁড় দুটির দাম হাঁকাচ্ছেন ১৭ থেকে ১৮ লাখ টাকা করে। উপজেলার সনমান্দী ইউনিয়নের কাফাইকান্দা গ্রামের তার মালিকানাধীন সোনারগাঁ ডেইরি ফার্মে গত চার বছর ধরে আমেরিকান ফ্লাকবি সিনবাদ, আলাল, সম্রাট, সুলতান, সিনবাদ, মেসি, রোনালদো, সাদা বাবু, কালো বাবুসহ ৭০টি ষাঁড় গরু তৈরি করেছি। মেসির ওজন ৬০০ কেজি ও রোনালদোর ওজন ৫০০ কেজি। মেসির দাম ৮ লাখ ও রোনালদোর দাম ৬ লাখ টাকা। সোনারগাঁও ডেইরি ফার্মের ভেতর লালনপালন করা গরু এসব নামে গরুগুলো ইতিমধ্যে ক্রেতাদের নজর কেড়েছে। কোরবানির উপযোগী করে উৎপাদন করা গরু আলাল সবচেয়ে বড় গরু বলে জানান খামারের মালিক নজরুল ইসলাম।
তিনি আরও জানান, সোনারগাঁ ডেইরি খামারের রয়েছে ফ্রিজিয়ান,শাহীওয়াল,গয়াল ক্রস, ও ভুটানিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গরু। এই খামারের ভুটানি প্রজাতির ছোট গরুর বেশ চাহিদা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাকৃতিক উপায়ে অর্গানিক খাদ্য দিয়ে কোরবানির জন্য তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গরু। খৈল, ভুসি, খড় ও নিজস্ব জমিতে উৎপাদিত ঘাসসহ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ানো হয়েছে গরুগুলোকে। এখানে থাকা ফ্রিজিয়ান, ক্রস, শাহীওয়াল ও ভুটানিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গরুগুলো অর্ধেক আমার খামারে গাভীর বাছুর ও বাকি গুলো বিভিন্ন খামার ও গরুর হাট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
জানা গেছে, নজরুল ইসলাম তার নিজের দোকান সোনারগাঁ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এর দুগ্ধ চাহিদা মেটানোর জন্য ২০০৯ সালে ক্ষুদ্র পরিসরে খামারটির যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে বাণিজ্যিকভাবে খামারটির কার্যক্রম শুরু হয়।
তিনি বলেন, পশুর খাবারের তালিকায় খৈল, ভুসি, খড়, সবুজ ঘাস, ছোলা ও ঝাউয়ের মতো প্রাকৃতিক খাবার। প্রাকৃতিক উপায়ে সম্পূর্ণ স্টেরয়েড ও ইনজেকশনমুক্ত বিশুদ্ধ গো-খাদ্যের মাধ্যমে বড় করে কোরবানির জন্য বিক্রয় করছেন বলে জানিয়েছেন ফার্ম কর্তৃপক্ষ। বডি ওজন করেও বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে কোরবানি হাটে আরেক আলোচনার নাম জায়েদ খান। সোনারগাঁয়ে সনমান্দী ইউনিয়নের ভটেরকান্দি গ্রামে ফ্রিজিয়ান জাতের একটি গরু দুই বছর আগে কেনেন আব্দুর রউফ। ওই গরু খুব চঞ্চল ও অনেক লাফালাফি করে আর ডিগবাজি দিতে চায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে জায়েদ খানকে যেমনটা দেখা যায়। তাই এ অভিনেতার সঙ্গে এ গরুটির অনেকটা মিল থাকায় নাম রেখেছে জায়েদ খান। প্রায় ১ টন ওজনের বিশালদেহী জায়েদ খান নামে এই গরুটিকে এক নজর দেখতে প্রতিনিয়ত ভিড় জমাচ্ছে মানুষ।
গরুর মালিক আব্দুর রউফ বলেন, যেহেতু গরুটা খুব পাগলামি করে, লাফালাফি করে তাই গরুটির নাম দিয়েছি জায়েদ খান। মোবাইলে জায়েদ খানের ভিডিওতে দেখেছি জায়েদ খান খালি লাফ দেয়, বিভিন্ন স্থানে ডিগবাজি দেয়। এই গরুটাও লাফ দেয়, তাই গরুর নাম জায়েদ খান রাখা হয়। আব্দুর রউফ দুই বছর আগে ফ্রিজিয়ান জাতের এ গরুটি কেনেন। এরপর লালন পালন শুরু করেন। প্রতিদিন দেড় হাজার টাকার খাবার খাওয়া মস্ত বড় ষাঁড় গরুটি এখন প্রায় ১ টন ওজনের। এবাবের কোরবানি বিক্রি করব আশা করছি। জায়েদ খানের দাম হাঁকা হচ্ছে ৭ লাখ টাকা। যারা গরুটিকে দেখতে আসছেন তাদের কেউ কেউ বলছেন, আমরাও দেখলাম বিশাল এই গরু খুব পাগলামি করে। কোনো ভাবেই স্থির থাকে না, তাই এর নাম দেয়া হয়েছে জায়েদ খান।
দর্শনার্থী এনামুল, জাহিদ, রাবিকসহ কয়েকজন বলেন, জায়েদ খানকে কখনো সামনা সামনাসামনি দেখি নাই। শুনলাম গরুটির নাম জায়েদ খান রাখা হয়েছে। তাই এই গরুটিকে দেখতে আসছি। গরুটি আসলেই খুব সুন্দর।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা