ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি গতকাল বুধবার থেকে আবার শুরু হয়েছে। কৃষ্ণসাগর পথে নিরাপদে শস্য রপ্তানির চুক্তিতে রাশিয়া ফের অংশগ্রহণে সম্মতি দেয়ার পরই এ নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যায়। বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকট পরিস্থিতিতে এ খবর কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। খবর এএফপির।
জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় গত জুলাইয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন শস্যচুক্তি সম্পাদন করে। তবে মস্কো গত রোববার ওই চুক্তি থেকে সাময়িকভাবে নিজেদের সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়। তুরস্ক ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার এ বিষয়ে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান পার্লামেন্টে বলেন, কৃষ্ণসাগর পথে ইউক্রেনের শস্যবাহী জাহাজ চলাচল স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে শুরু হচ্ছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তুরস্ককে বলেছে, তারা ওই চুক্তিতে আবারও যোগ দিচ্ছে। কারণ, কিয়েভ ওই নৌপথ থেকে সামরিক উপস্থিতি পুরোপুরি সরিয়ে নেবে বলে ‘পর্যাপ্ত’ নিশ্চয়তা দিয়েছে।
চুক্তিটির আওতায় ইউক্রেনের বিভিন্ন বন্দর থেকে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য খাদ্যপণ্যের ৯৭ লাখ মেট্রিক টন চালান এখন বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হতে পারবে। খাদ্যশস্য উৎপাদনে ইউক্রেন বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি। সেখানে গত ফেব্রয়ারিতে রুশ সামরিক হামলা শুরুর পর থেকে বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকট বেড়ে যায়। কারণ, ইউক্রেন থেকে শস্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল দেশগুলো পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য পাচ্ছিল না। এ সমস্যা নিরসনে জাতিসংঘের উদ্যোগে তুরস্কের মধ্যস্থতায় মস্কো ও কিয়েভ গত জুলাইয়ে একটি চুক্তি সম্পাদন করে, যার আওতায় কোনো পক্ষই কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেন থেকে পণ্য রপ্তানিতে নিয়োজিত জাহাজগুলোয় হামলা করতে পারবে না। এরপর পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া গত শনিবার ওই চুক্তি সাময়িক স্থগিত রেখে নিজেদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। তারা কৃষ্ণসাগরে একটি রুশ নৌবহরে ড্রোন হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করে ওই সিদ্ধান্ত নেয়। তবে কিয়েভ ওই হামলার অভিযোগ স্বীকার করেনি। তবে জাতিসংঘ ও তুরস্কের প্রচেষ্টায় ওই নৌপথে গত মঙ্গলবারও সীমিত পরিসরে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করেছে।
রাশিয়া ওই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিতেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ব্যাপক সমালোচনা শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন দেশে খাদ্যশস্য রপ্তানিতে রাশিয়ার বাধা দেয়ার অভিযোগ তুলে বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে বক্তব্য দেন। অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শস্যচুক্তিতে পুনরায় তার দেশের অন্তর্ভুক্তির জন্য কৃষ্ণসাগরের ওই নৌপথ থেকে ইউক্রেনের সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা দাবি করেন।
পুতিন এ বিষয়ে সত্যিকারের নিশ্চয়তা চেয়েছেন। আর জেলেনস্কি গত মঙ্গলবার বলেন, ওই সমুদ্রপথে দীর্ঘমেয়াদি ও নির্ভরযোগ্য সুরক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
শস্যচুক্তি কার্যকর না হলে সারা বিশ্বেই তার প্রভাব পড়বে- এই বাস্তবতা বুঝতে পেরে বিশ্বনেতারা বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ গতকাল জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং রাশিয়ার ওই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার সাময়িক সিদ্ধান্তের নিন্দা জানান। তিনি বলেন, মস্কোর এমন পদক্ষেপে বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা ফের হুমকির মুখে পড়বে।
চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার আগে মস্কো ইউক্রেনের ড্রোন হামলার যে অভিযোগ করেছে, সেটিকে ইউক্রেন মিথ্যা অজুহাত বলে উড়িয়ে দিয়েছে। আর ক্রেমলিন আগে থেকেই বলে আসছে, ওই চুক্তির আওতায় যেসব পণ্যবাহী জাহাজ ইউক্রেন ছেড়ে যায় সেগুলোর বেশির ভাগের গন্তব্য ইউরোপে। দরিদ্র দেশগুলোয় যেখানে খাবারের চাহিদা অনেক বেশি, সেখানে জাহাজগুলো পৌঁছাচ্ছে না।
ইউক্রেন এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সংশ্লিষ্ট তথ্যউপাত্ত তুলে ধরেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ গত সোমবার বলেছেন, রাশিয়ার অংশগ্রহণ ছাড়া ওই নৌপথে পণ্যরপ্তানি অব্যাহত রাখাটা বিপজ্জনক হবে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা