ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা। তাই ডেঙ্গু নিয়ে হেলাফেলা করার আর সুযোগ নেই। ডেঙ্গুতে পানিশূন্যতা রোধ ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
প্রথমেই বলে রাখি, ডেঙ্গু মূলত তিনভাবে প্রকাশিত হতে পারে। সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর, রক্তক্ষরণজনিত ডেঙ্গু জ্বর এবং এক্সপ্যান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম (বিরল কিন্তু ভয়াবহ রূপ, যেখানে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি)। পানিশূন্যতা রক্তক্ষরণজনিত ডেঙ্গু জ্বরের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। এখানে দুই উপায়ে একজন রোগী পানিশূন্য হতে পারে। প্রথমত, প্রচণ্ড অরুচি ও দুর্বলতার কারণে তরল খেতে না পারা। দ্বিতীয়ত, প্লাজমা লিকেজ অর্থাৎ রক্তনালি ফুটো হয়ে রক্তের তরল অংশ রক্তনালি থেকে বের হয়ে রক্তকে ঘন করে ফেলে।
পানিশূন্যতার কারণে অনেক সময় রোগী হাইপোভলেমিক শকে চলে যায়, যাকে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বলে। এতে হার্ট দুর্বল হয়ে যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন লিভার, কিডনি অকেজো হয়ে যায়। তাই জ্বর শুরু হওয়ার পর থেকেই রোগীকে তরল খাবার খাওয়াতে পারলে প্লাজমা লিকেজজনিত পানিশূন্যতা পূরণ করা সম্ভব। যেসব রোগী একেবারেই খেতে পারেন না তাদের এবং বিশেষত শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি রেখে শিরাপথে প্রয়োজনীয় স্যালাইন দেয়া উচিত।
স্যালাইন দেয়ার সময় কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। রক্তচাপ, প্রস্রাবের পরিমাণ, শ্বাসকষ্ট শুরু হয় কি না এবং হেমাটোক্রিট (এইচসিটি) লেভেল।
যদি রক্তচাপ কমে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক প্রেশারের পার্থক্য বা পালস প্রেশার কমে যায়, রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, হেমাটোক্রিট স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়, তাহলে বুঝতে হবে অতিরিক্ত স্যালাইন রক্তে প্রবেশ করেছে। এতেও কিন্তু হার্ট ফেইলিউর হয়ে রোগী মারা যেতে পারে। তাই কোনোভাবেই বাসায় শিরাপথে স্যালাইন দেয়া যাবে না এবং হাসপাতালেও বিষয়টি যত্নের সঙ্গে মনিটর করতে হবে।
একজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে আমরা দেখি রোগীর স্বজনরা প্লাটিলেট কাউন্টের দিকে অতিরিক্ত মনোযোগী হয়ে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ভুলে যান। প্লাটিলেট সংগ্রহের জন্য ছোটাছুটি করতে থাকেন। বলে রাখা ভালো, প্লাটিলেট কাউন্ট ২০ হাজারের নিচে না নামা পর্যন্ত প্লাটিলেট সংগ্রহের প্রয়োজন নেই। খুবই কমসংখ্যক রোগীর প্লাটিলেট প্রয়োজন হয়।
ডেঙ্গু রোগের মূল চিকিৎসা প্লাটিলেট দেয়া নয়, বরং নিখুঁতভাবে পানিশূন্যতা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রক্তক্ষরণের জন্য নয়, বরং ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে মারা যায়। যদি পায়খানা বা বমির সঙ্গে রক্ত যায়, তাহলে প্লাটিলেট সঞ্চালন না করে বরং সম্পূর্ণ রক্ত দেয়া উচিত।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ভাইরোলজি বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা