আপডেট : ৪ জুলাই, ২০২৪ ১১:১০
তিন ব্যাংকের মাধ্যমেই ৩৬ ভাগ রেমিট্যান্স এসেছে
নিজস্ব প্রতিবেদক

তিন ব্যাংকের মাধ্যমেই ৩৬ ভাগ রেমিট্যান্স এসেছে

ছবি: সংগৃহীত

২০২৩-২৪ অর্থবছরে শরিয়াভিত্তিক তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৮.৬৪ বিলিয়ন বা ৮৬৪ কোটি ডলার, যা এই অর্থবছরের দেশের ব্যাংক খাতের মোট সংগৃহীত রেমিট্যান্সের ৩৬.১৩ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এনেছে ৬.১২ বিলিয়ন ডলার, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ৮৪৪ মিলিয়ন ডলার এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এনেছে ১.৬৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে দেশের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসীদের কাছ থেকে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২৩.৯১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১০.৬৬ শতাংশ বেশি। ২০২৩ অর্থবছরে দেশের ব্যাংক খাতে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২১.৬১ বিলিয়ন ডলার। সে সময়েও শরিয়াভিত্তিক এ তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স ছিল এসেছিল ৬.৪১ বিলিয়ন ডলার, যা সে সময়ে মোট ব্যাংক খাতের সংগৃহীত রেমিট্যান্সের ২৯.৬৮ শতাংশ ছিল। ব্যাংকাররা বলছেন, গত দুই বছরে ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স আহরণে জোরালো ভূমিকা রেখেছে। কয়েকটি ব্যাংক বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর মাধ্যমে তাদের রিপেজেনটেটিভের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। এ কারণে এসব ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বেড়েছে। তবে ব্যাংকারদের অনেকের মতে, কিছু ব্যাংক ডলার মার্কেটের নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দামে রেমিট্যান্স কিনেছেন। বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনেও।

এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স সংগ্রহে শীর্ষে থাকা ১০ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৪.৯১ বিলিয়ন ডলার, যা ব্যাংক খাতের মোট সংগৃহীত রেমিট্যান্সের ৬২.৩৫ শতাংশ। এ ছাড়া এই ১০টি ব্যাংকের ২০২৪ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩২ শতাংশ। ২০২৩ অর্থবছরে এই ১০ ব্যাংকের মাধ্যমে ১১.২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ১০ ব্যাংকের মধ্যে ২০২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স সংগ্রহের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (১৫০%)। এরপরে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক (১০১%), ব্র্যাক ব্যাংক (৯৪%), জনতা ব্যাংক (৫৭%) এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ (৩০%)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হকের মতে, ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য অনেক প্রচারণা চালিয়ে গেছে। পাশাপাশি লোকাল মার্কেটে বিনিয়োগ আকর্ষণীয় হওয়া এবং ল’ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির তৎপরতা রেমিট্যান্স বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া ডলারের দাম অ্যাডজাস্টমেন্টের প্রভাবও পড়েছে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধিতে।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বলেন, যেসব ব্যাংক আগে রেমিট্যান্স সংগ্রহে প্রথম দশে থাকত, তাদের অনেকেই শীর্ষে নেই। তাদের কেউ কেউ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত দামে ডলার সংগ্রহ করতে গিয়ে পর্যাপ্ত রেমিট্যান্স পায়নি। তবে যার মার্কেট রেটের চেয়ে ৫-৮ টাকা বেশি দিয়ে রেমিট্যান্স কিনেছে, তারাই বেশি রেমিট্যান্স পেয়েছে। তিনি বলেন, গত এক বছর ধরে রেমিট্যান্সের দর ছিল ১১০ টাকার মধ্যে। কোনো কোনো ব্যাংক ১২০ টাকার বেশি রেটেও রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছিল। এমনকি ইম্পোর্ট পেমেন্ট ১২২-১২৪ টাকায়ও করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, অতিরিক্ত দামে ডলার কেনাবেচা করায় ২০২৩ সালে ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরবর্তীতে, অবার দশটি ব্যাংকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দামের ডলার কেনাবেচার প্রমাণ পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শন টিম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদায়ী ২০২৪ অর্থবছরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে গেছে ৭১৫ মিলিয়ন ডলার। ২০২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ৩.৩৯ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ অর্থবছরে ২.৬৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি ব্যাংকের মধ্যে ৫টি ব্যাংকেই রেমিট্যান্সপ্রবাহ বিদায়ী অর্থবছরে কমেছে। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে জনতা ব্যাংকের ক্ষেত্রে। এ সময়ে জনতা ব্যাংকে রেমিট্যান্স এসেছে ১.০৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বেশি। বিদায়ী ২০২৪ অর্থবছরে প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে, ৪.৫৯ বিলিয়ন ডলার। এরপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ২.৯৬ বিলিয়ন ডলার; সৌদি আরব থেকে এসেছে ২.৭৪ বিলিয়ন ডলার; মালয়েশিয়া থেকে ১.৬০ বিলিয়ন ডলার এবং যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ২.৭৯ বিলিয়ন ডলার।