আপডেট : ৭ জুলাই, ২০২৪ ০০:১৪
রামপাল পাওয়ার ঘিরে তৈরি হচ্ছে গ্রিন বেল্ট
থাকবে পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য
খুলনা ব্যুরো

রামপাল পাওয়ার ঘিরে তৈরি হচ্ছে গ্রিন বেল্ট

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) রামপাল পাওয়ার প্লান্ট এলাকায় বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে গ্রিন বেল্ট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলতে প্লান্ট চত্বর ও সংলগ্ন অঞ্চলে মোট ৫ লাখ বৃক্ষ রোপণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পাখিদের জন্য অভয়ারণ্যও গড়ে তোলা হবে। বন বিভাগের সঙ্গে পাওয়ার প্লান্টের যৌথ উদ্যোগে এই কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় ‘বৃক্ষ দিয়ে সাজাই দেশ, সমৃদ্ধ করি বাংলাদেশ’ স্লোগানে প্লান্ট এলাকার সামনে গতকাল শনিবার বর্ষাকালীন বৃক্ষ রোপণ অভিযান-২০২৪ শুরু হয়েছে।

বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি শুরুর আগে এক উদ্বোধনী সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে বক্তারা বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনী পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য গড়ে তোলার ওপর আলোকপাত করেন।

সেখানে জানানো হয়, রামপাল পাওয়ার প্লান্টের চারপাশে কয়েক ধাপে মোট ৫ লাখ বৃক্ষ রোপণ করা হবে। ইতোমধ্যে ৮৭ হাজার বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে আরও ১ লাখ ১৩ হাজার বৃক্ষ রোপণ করা হবে। পরবর্তীতে বন বিভাগের সঙ্গে আবারও সমন্বয় করে ধারাবাহিকভাবে অবশিষ্ট ৩ লাখ বৃক্ষ রোপণ করা হবে।

এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বন বিভাগের উপপ্রধান বন সংরক্ষক ড. মো. জগলুল হোসেন বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র তাদের উৎপন্ন কার্বন শোষণ করানোর জন্য বিশাল গ্রিন বেল্ট তৈরি করেছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশপাশে ভবিষ্যতে একবিন্দু জায়গা ফাঁকা থাকবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের সিপিও মো. জিয়াউর রহমান বলেন, রামপাল পাওয়ার প্লান্টের সুবিধা সারা দেশই পাচ্ছে। সুতরাং দেশবাসীর কাছে অনুরোধ থাকবে প্রত্যেকে যেন নিজের উদ্যোগেও বনায়ন সৃষ্টি করেন। এর ফলে আমরা সুন্দর প্রকৃতি ধরে রাখতে পারব।

এ সময় রামপাল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সেখ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এক সময়ে মানুষের মধ্যে ধারণা ছিল রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়ন হলে এর ১০ থেকে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো গাছ থাকবে না। তখন অনেক পরিবেশকর্মী সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে আন্দোলনে নামিয়েছিলেন। তাদের সেই অবাস্তব ধারণা আমরা ভুল প্রমাণিত করতে পেরেছি। এই প্লান্ট নিজস্ব ব্যবস্থায় প্রচুর গাছ লাগিয়েছে। আমরাও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে এই অঞ্চলের প্রচুর গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই- জীবন বাঁচাতে গাছ লাগানোর বিকল্প নেই।

সামাজিক বন বিভাগের খুলনা-বাগেরহাট-পিরোজপুর অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জি এম রফিক আহমেদ বলেন, ‘২০১৫ সালে রামপাল পাওয়ার প্লান্টের সঙ্গে বন বিভাগের একটি চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তির আলোকে ২০১৮ সাল থেকে বনায়নের কাজ শুরু করেছি। এ পর্যন্ত প্লান্টের চার পাশে আমরা ৮৭ হাজার গাছ লাগিয়েছি। এই বর্ষা মৌসুমে আমরা বাকি ১ লাখ ১৩ হাজার গাছ লাগাব। এ ছাড়া পরে চুক্তি বাড়লে আরও গাছ লাগানো হবে।’

প্লান্টের পাশে গাছ টেকসই করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানের মাটি লবণাক্ত ও বালুযুক্ত। তাই গাছ টিকিয়ে রাখতে আমরা বাইরে থেকে মাটি এনে গাছ লাগিয়েছি। পাশাপাশি নদীর পাড়ে ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছ লাগিয়েছি।’

রামপাল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফতাব আহমেদ বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতির ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে তার জন্য উন্নত দেশগুলো বেশি দায়ী। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচতে হলে আমাদের বেশি পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে।

যশোর সামাজিক বনাঞ্চলের বন সংরক্ষক এ এস এম জহির উদ্দিন আকন বলেন, বাংলাদেশ সরকার যখন রামপাল পাওয়ার পয়েন্ট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল, তখন বিজ্ঞানীরা নানা রকম মত দিয়েছিল। তখন আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, তবে বাস্তবে তা হয়নি। এ পাওয়ার প্ল্যান্টের আশপাশে চমৎকার বনান সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। এই বনায়নে এখন পশু-পাখির অভয়ারণ্য সৃষ্টি হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইএফপিসিএলের জেনারেল ম্যানেজার দেবাশীষ সাহা। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।