সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আজ বুধবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ হাসান এই ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (বুধবার) সকাল দশটা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমাদের এই কর্মসূচি চলবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি শুরু হবে। সড়ক ও রেলপথ আমাদের এই কর্মসূচির আওতাভুক্ত থাকবে।’
নাহিদ বলেন, হাইকোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে আমাদের আন্দোলন শুরু হলেও আমরা এখন চূড়ান্ত ফয়সালা চাচ্ছি। আমরা এমন একটি সমাধান চাচ্ছি, যাতে কোটা নিয়ে বাংলাদেশে আর কখনো কোনো সংকট তৈরি না হয়। সেজন্য আমরা সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে বিবেচনায় রেখে কোটা বৈষম্য নিরসনের কথা বলছি।’
তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে। তাই আদালত কী রায় দিল সেটির সঙ্গে আমাদের আন্দোলনের আর কোনো সম্পর্ক নেই।
আদালতে আবেদন করা দুই শিক্ষার্থী কারা জানতে চাইলে আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, আদালতে দুই শিক্ষার্থীর করা আবেদনের সঙ্গে আমাদের আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। যারা এটি করেছে তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, তারা সংক্ষুব্ধ হয়ে এটি করেছে। তবে আমরা তাদের এই আবেদনের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি।
কোটা নিয়ে বুধবার আপিল বিভাগের শুনানিতে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত এলে কী হবে- জানতে চাইলে আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ১৮ সালের পরিপত্রটি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির। আর আমাদের এক দফা দাবি, সব শ্রেণির, অর্থাৎ প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির। সুতরাং ১৮-এর পরিপত্র কালকে যদি বহালও রাখা হয়, তাহলেও কিন্তু আমাদের দাবি পূরণ করা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, তাই শুধু হাইকোর্টের রায় দিয়ে এটি সম্ভব নয়। এটি যেহেতু সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত, তাই এটি নিয়ে আমরা নির্বাহী বিভাগ থেকে কমিশন গঠনের পরিপত্র বা এটি নিয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করি। তারা যদি একটি লিখিত ডকুমেন্টস বা পরিপত্র জারির মাধ্যমে আমাদের নিশ্চিত করেন যে, একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করা হবে, তাহলে আমরা তাৎক্ষণিক রাজপথ ছেড়ে আনন্দ মিছিল করতে করতে আমাদের পড়ার টেবিলে ফিরে যাব।
সারজিস আরও বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যতজন তরুণ চাকরি করে, তারচেয়ে অনেক অনেকগুণ বেশি মানুষ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরি করে। আর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চেয়ে অনেকগুণ বেশি অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক চাকরি রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে। সুতরাং বাংলাদেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর দাবিকে পাশ কাটিয়ে এসব দাবি পূরণ না করে আমরা অবিবেচকের মতো রাজপথ থেকে ফিরতে পারি না। আমাদের এক দফা আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা