আপডেট : ২৬ জুলাই, ২০২৪ ১৫:০৯
শিরা-উপশিরায় মিশে গেছে ইন্টারনেট
ফাতেমা তুজ জোহরা মাইসা

শিরা-উপশিরায় মিশে গেছে ইন্টারনেট

বর্তমানে পড়াশোনা থেকে শুরু করে অফিস-আদালতের কোনো কাজই ইন্টারনেট ছাড়া কল্পনা করা যায় না। একটা দিন যদি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকে তো দুনিয়া যেন অচল হয়ে পড়ে! তবে এই কল্পনাতীত ব্যাপারটি এবার সত্যিই ঘটে গেল আমাদের দেশে! ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় কেটে গেল ৫টি দিন।

বাংলাদেশের ঘড়ির কাঁটা যেন থেমে গেল। কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল। দেশের ভয়ংকর অরাজকতায় চারদিকে দম বন্ধ পরিবেশ সৃষ্টি হলো। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাইকে যেন শূন্যতা গ্রাস করে ফেলেছিল। ‘কীভাবে সময় কাটবে’- এই ভেবেই প্রায় সবার কপালে পড়েছিল চিন্তার ভাঁজ। সেই সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবস্থা কখন ঠিক হবে- এই উদ্বিগ্নতায় বারবার ফোনের নেটওয়ার্ক অন করে দেখার অস্থিরতাও তৈরি হলো। সর্বোপরি সবকিছু যেন একেবারে থমকে গিয়েছিল।

ইন্টারনেটের যেমন অসংখ্য উপকারী দিক রয়েছে, সেই সঙ্গে রয়েছে কিছু ভয়ংকর ক্ষতিকর দিক । বর্তমানে মানুষের অবসরের সবচেয়ে বড় বন্ধু ইন্টারনেট। ইন্টারনেটে আসক্ত মানুষের সংখ্যা রয়েছে অগণিত। আসক্তির পরিমাণ এতটাই বেশি যে, দিন-রাত মিলিয়ে প্রায় ১২/১৪ ঘণ্টায় অনেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। সারারাত চোখ আটকে থাকে ফোনের স্ক্রিনে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের রিলস, বিভিন্ন অনলাইন গেমস মাদকের মতো আসক্তিদায়ক হয়ে উঠেছে। ফলে মাদকাসক্ত মানুষ যেমন মাদকের অভাবে অস্থির হয়ে পড়ে, ইন্টারনেট আসক্ত মানুষের অবস্থাও ঠিক তেমনই হয়ে পড়েছিল এই কয়টা দিনে ।

ইন্টারনেট সংযোগবিহীন এই দিনগুলোর পর আমার রিয়েলাইজেশন হলো ইন্টারনেটের অনুপস্থিতিতে মানুষ যে কতটা অসহায় তা অবর্ণনীয়। এখন ইন্টারনেট শুধু নেটওয়ার্কের জাল নয় বরং এটা এখন রূপকথার মায়াজালে পরিণত হয়েছে, যা আমাদেরকে প্রতিনিয়ত বশীভূত করে রাখছে। শিরা-উপশিরায় মিশে গেছে ইন্টারনেট ।

এমতাবস্থায় আমি মনে করি সময় কাটানোর উপায় হিসেবে আমরা নিজেদের মধ্যকার সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করতে পারি । যেমন অনেকেই আছেন দারুণ ছবি আঁকতে, গান গাইতে বা নাচতে পারেন । কিন্তু প্রাত্যহিক জীবনের ব্যস্ততায় এসব চর্চা করার সময় আর হয়ে ওঠে না। তারা চাইলেই তাদের অবসরে ইন্টারনেটের পরিবর্তে এসব চর্চা করে সময় কাটাতে পারেন। বিভিন্ন শিক্ষণীয় বই পড়তে পারেন সঙ্গে ডায়েরিতে লেখালেখি করেও সময় কাটাতে পারেন।

এ ক্ষেত্রে মাথায় আসে অ্যারিস্টটলের একটা বিখ্যাত উক্তি –‘Know Thyself অর্থাৎ নিজেকে জানো ।’ ইন্টারনেট সংযোগবিচ্ছিন্ন এই দিনগুলোতে আর কিছু করার না থাকলেও নিজেকে জানার একটা দারুণ সুযোগ কিন্তু অবশ্যই ছিল। শুধু এমন দুর্যোগের দিন বলেই নয় আমাদের উচিত সবসময়ই ব্যস্ততা কাটিয়ে উঠে নিজেকে জানার চেষ্টা করা। এতে লাভ ছাড়া কোনো ক্ষতি অন্তত হবে না। অন্যথায় এমন অতিরিক্ত ইন্টারনেটনির্ভর অবস্থা থেকে নিজেদের পরিত্রাণ করতে না পারলে ক্রমশই অন্ধকারের অতল গভীরে ডুবে যাব আমরা এবং আমাদের ভবিষ্যৎ।

লেখক : শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়