ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভেঙ্গে পড়ে দেশের প্রায় সব থানার কার্যক্রম। বিভিন্ন থানায় পুলিশের ওপর হামলা, লুটপাট-অগ্নিসংযোগ করা হয়। আতঙ্কে থানা ছেড়ে গা-ঢাকা দেন পুলিশ সদস্যরা। এতে সারা দেশের মত রাজধানীর থানাগুলোর সেবা কার্য়ক্রমও মুখথুবড়ে পড়ে।
অবশেষে প্রায় চার দিন পর আজ শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ২৯ থানায় সেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিটি থানায় পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় থাকছেন সেনা সদস্যরা।
যেসব থানা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসব থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। হামলায় যেসব থানা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব থানাগুলো এখনও কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। এসব থানায় হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করার কারণে এমনই পরিস্থিতি যে পুলিশ সদস্যরা থানায় এলেও বসার মতো ব্যবস্থা ছিল না। তাই ডিএমপির ২১ থানায় এখনো কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।
সেবা কার্যক্রম শুরু হওয়া থানাগুলো হলো- গুলশান, তেজগাঁও, রমনা, কলাবাগান, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, কোতোয়ালি, চকবাজার, সূত্রাপুর, ডেমরা, গেন্ডারিয়া, মতিঝিল, সবুজবাগ, শাহজাহানপুর, শেরেবাংলা নগর, হাতিরঝিল, শাহ আলী, কাফরুল, ভাষানটেক, দারুসসালাম, রূপনগর, ক্যান্টনমেন্ট, বনানী, উত্তরা পশ্চিম, উত্তরখান ও বিমানবন্দর থানা।
আজ সকাল ১১টায় তেজগাঁও থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয়ে জানান সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে সেনাবাহিনীর ২৫ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কোম্পানি কমান্ডার শাখাওয়াত খন্দকার বলেন, সেদিন (৫ আগস্ট) জনমানুষের প্রচণ্ড স্রোত ছিল। তাদের কন্ট্রোল করা তখন ডিফিকাল্ট হয়ে যাচ্ছিল। দুর্বৃত্তরা যেভাবে পুলিশসহ সাধারণ মানুষ হত্যা করছে, তখন আমরা ডিসিশন নিয়েছি থানা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, পুলিশ সদস্যদের বাঁচাতে হবে। তারা জনগণের সেবক, তাদের আবার রিফর্ম করার সুযোগ কের দিতে হবে। এছাড়াও তেজগাঁও থানায় কয়েকশ’ পরিবার আছে, পুলিশ সদস্যরা আছে। থানায় অনেক অস্ত্র রয়েছে। যেগুলো দুর্বৃত্তদের কাছে গেলে দেশ চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তখন আমরা থানার নিরাপত্তা জোরদারের ব্যবস্থা করেছি।
তিনি বলেন, আমরা এ এলাকায় পুলিশকে সহায়তার জন্য ছাত্র-শিক্ষক, ব্যবসায়ী, স্কাউট, বিএনসিসি ও আনসার বাহিনীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে কথা বলেছি। পুলিশ বাহিনীকে রিফর্ম করতে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
এ সময় তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক বলেন, সামরিক বাহিনীর সদস্যরা যেভাবে আমাদের পুলিশ সদস্যদের বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন, সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আজ আমরা সামরিক বাহিনীর সহায়তায় পুলিশের সব সেবা কার্যক্রম শুরু করেছি। সব নাগরিকের কাছে অনুরোধ, আপনারা থানায় আসুন। আপনাদের সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত।
তেজগাঁও বিভাগে ৬টি থানার মধ্যে ৩টি থানার কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন- ক্ষতিগ্রস্ত থানায় স্বল্প পরিসরে কাজ চলছে। এরইমধ্যে থানাগুলোতে অনেক পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দিয়েছেন। বাকিরাও আসতে শুরু করেছেন। আমরা আশা করছি দুপুরের মধ্যে আমাদের সব পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে যোগ দেবেন।
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, কিছু দিন আগেও আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করেছি। আজ আমাদের অনেক পুলিশ সদস্য কাছে নেই। অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমাদের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জন্য আমরা অনেক ভুল করেছি। মানুষ সঙ্গে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আসলে আমরা জনগণের সেবক। আমরা কারো লেজুড়বৃত্তি করতে চাই না। জনগণই আমাদের মূল শক্তি। আপনারা থানায় আসুন। আপনাদের সেবার আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
এদিকে ৫ আগস্ট রাজধানীর বাড্ডা থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এমনই অবস্থা যে থানায় কাজ করার মত বসার জায়গা নেই। সেনাসদস্যদের মহায়তায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য থানায় এসেছেন। একজন সেনাসদস্য থানার সামনে বসে থানায় আসা পুলিশ সদস্যদের নামের তালিকা করছেন। একজন পরিদর্শকসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য জানা, শিগগিরি তারা থানার ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নির্দেশনায় কাজ শুরু করবেন।
অপরদিকে রাজধানীর শাহআলী থানায় সকাল থেকে পুলিশ সদস্যরা থানায় ফিরতে শুরু করেছেন। সেবা কার্যক্রম শুর করা হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তারিকুজ্জামান দৈনিক বাংলাকে বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় আমাদের পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগদান শুরু করেছেন। পুলিশ সদস্যরা একটা ট্রমার মধ্যে আছেন। তাদের সবাইকে কাজে যোগ দিতে হাজির করাচ্ছি। তবে এখনও থানার সেবা কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। কম্পিউটারসহ বিভিন্ন আসাবাপত্র ও পুলিশের ব্যবহারের গাড়ি ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সবকিছু গোছগাছ করা হচ্ছে। দ্রতই সেবা কার্যক্রম শুরু করা হবে। আমরা সবার দোয়া ও সহায়তা চাই।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা