দুপুর সাড়ে বারোটা। রাজধানীর খিলগাঁও উড়ালসড়কের (ফ্লাইওভার) ঢালে দাঁড়িয়ে আছে জনা পঞ্চাশেক শিক্ষার্থী। তাদের হাতে নানান প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা, ‘পড়তে চাই, জানতে চাই, ভেঁপু (হর্ন) থেকে বাঁচতে চাই’, ‘ও গাড়ি আমাকে পড়তে দাও, ভেঁপু থামাও’ ইত্যাদি স্লোগান।
শিক্ষার্থীরা বলছে, তাদের বিদ্যালয় সংলগ্ন সড়ক উচ্চশব্দে যানবাহন চলাচল করে। শব্দের কারণে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটে। এর প্রতিবাদ করতেই আজ রোববার দুপুরে খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ঢালে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছে খিলগাঁও স্টাফ কোয়ার্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সঙ্গে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকেরাও।
প্রতিষ্ঠানটিই এ মানববন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছে। মানববন্ধন চলাকালে উচ্চশব্দ রোধে সচেতনতামূলক স্টিকার বিভিন্ন যানবাহনে সেঁটে দেয় শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে কথা হয় খিলগাঁও স্টাফ কোয়ার্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারিয়া আক্তারের সঙ্গে।
মারিয়া বলে, ‘হর্নের কারণে আমাদের মাথাব্যথা করে। আমরা চাই, হর্ন বাজানো বন্ধ হোক। হর্নের কারণে নানা সমস্যা হয়। ক্লাসে শিক্ষকদের কথা শুনতে কষ্ট হয়, মনোযোগ দিতে পারি না।’
উচ্চশব্দের কারণে শ্রেণিকক্ষে একই সমস্যার কথা জানায় আরেক শিক্ষার্থী মো. নাইম। তার হাতে ছিল ‘ও গাড়ি আমাকে পড়তে দাও, ভেঁপু থামাও’ লেখা প্ল্যাকার্ড।
নাইম দৈনিক বাংলাকে বলে, ‘আমাদের সকালে ক্লাস হয়। দোতলায় আমাদের ক্লাসরুম। ক্লাস থেকেই হর্নের আওয়াজ শুনতে পাই। শিক্ষকদের কথা শুনতে পাই না। মাথা ভারি লাগে, কান ধরে থাকে।’
খিলগাঁও স্টাফ কোয়ার্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদা নারগিস মানববন্ধনে বলেন, ‘শব্দদূষণের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি। শব্দদূষণের জন্য ঠিকমতো ক্লাস নিতে পারি না, শিশুদেরও নানা সমস্যা হয়। চালকদের আরও সচেতন হতে হবে। তারা অহেতুক হর্ন দেয়। আমাদের স্কুলটি সড়কের পাশে হওয়ায় উচ্চশব্দ আরও আতঙ্কের কারণ।’
খিলগাঁওয়ে সামাজিক সংগঠন পল্লীমা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, ‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের দাবিতে এখানে আমাদের দাঁড়ানো। শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অন্তরায় উচ্চশব্দ। শিশুদের শেখাতে হবে উচ্চশব্দ কত খারাপ। প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে দাবি তুলতে হবে। মানুষ যদি আরও সচেতন হয়, তাহলেই উচ্চশব্দ কমবে।
পল্লীমা সংসদের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ মনসুর বলেন, ‘এই উড়ালসড়কের ঢালেই প্রাথমিক বিদ্যালয়। তাই যানবাহনগুলোর উচিত হর্ন না দেয়া এবং গতি কমানো। চালকদের প্রতি অনুরোধ বিদ্যালয়টির সামনে দিয়ে যাওয়া-আসার সময় অযাচিত হর্ন বাজাবেন না এ পথে। শিশুদের পরিবেশ দেয়া আমাদের দায়িত্ব।’
পল্লীমা সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আউয়াল কামরুজ্জামান বলেন, ‘শব্দদূষণের ক্ষতি বোঝা যায় না। শব্দদূষণ রোধে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় আইন মানা হয় না। দীর্ঘদিন উচ্চশব্দের মধ্যে থাকলে মানুষ বধির হয়ে যেতে পারে। উচ্চশব্দের কারণে অবসাদ আসে, পড়ালেখায় মনোযোগ কম থাকে। এ প্রতিষ্ঠানের সামনে উচ্চশব্দ রোধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের উদ্যোগ নেয়া উচিত।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা