হিমালয়ের ছয় হাজার ৩৩২ মিটার উঁচু ‘ডোলমা খাং’ পর্বতচূড়া জয় করেছেন বাংলাদেশের পর্বতারোহী শায়লা বিথী। তিনি প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে নেপালের দুর্গম এ পর্বতচূড়ায় পা রাখলেন।
গত শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ‘ডোলমা খাং’ চূড়ায় পৌঁছান বিথী। আজ রোববার পর্বত থেকে সফলভাবে নেমে আসেন। পরে বিথী নেপাল থেকে মোবাইল ফোনে এ তথ্য জানান।
তার এবারের অভিযানের শিরোনাম ছিল ‘দ্য ডোলমা খাং চ্যালেঞ্জ: ফিচার শায়লা বিথী অ্যান্ড জেডএম অ্যাকুয়াবোম্ব’। অভিযানটির টাইটেল স্পন্সর জেডএম অ্যাকুয়াবোম্ব এবং কো-স্পন্সর বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। বিথীর আগে আর কোনো বাংলাদেশি এ পর্বতচূড়ায় আরোহণ করেননি।
গত ২৯ অক্টোবর অভিযানের উদ্দেশে ঢাকা থেকে ফ্লাইটযোগে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর উদ্দেশে যাত্রা করেন। ৩১ অক্টোবর কাঠমান্ডু থেকে ‘ডোলমা খাং’র উদ্দেশে রওনা হন শায়লা বিথী। সেদিন চেট চেট নামের একটি এলাকা থেকে ট্রেকিং শুরু হয়। শায়লা বিথীর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় একজন শেরপা। তিন ঘণ্টার ট্রেকিংয়ের পর তারা সিমিগাঁও নামের একটি গ্রামে পৌঁছান।
পরদিন সকালে আবারও শুরু করেন ট্রেকিং। পরের চারদিনে চুষা, চোডার গ্রাম হয়ে পৌঁছে যান বেদিং নামের একটি গ্রামে। সেখানেই ‘ডোলমা খাং’ পর্বতের বেজক্যাম্প অবস্থিত। পরদিন হাইক্যাম্প হয়ে শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ‘ডোলমা খাং’ চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকার ওড়ান শায়লা বিথী। সেখানে কিছু সময় অবস্থান করে বিথী শুরু করেন নামার পালা। সেদিন তিনি ‘ডংখাং’ নামের একটি গ্রামে ফেরেন। গতকাল রোববার তিনি সিমিগাঁও ফেরেন। এখান থেকে তিনি আজ সোমবার বা আগামীকাল রোববার কাঠমান্ডুতে ফিরবেন।

শায়লা বিথী বলেন, ‘ডোলমা খাং’ পর্বতটির চূড়ার দিকের অংশ খুবই দুর্গম। এ পর্বতে এখন পর্যন্ত খুব বেশি অভিযান পরিচালনা হয়নি। সে কারণে আমাদের জন্য শীর্ষে আরোহণ করা খুবই কঠিন কাজ ছিল। অনেকখানি খাড়া পর্বত বেয়ে উঠতে হয়েছে। চূড়ার আগে খুবই সরু একটা রিজ লাইন পাড়ি দিতে হয়েছে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। একটুখানি এদিক-সেদিক হলেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো।’
এই পর্বতারোহী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘ডোলমা খাং শীর্ষে আরোহণ করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। দেশের পতাকা শীর্ষে তুলে ধরতে পারার মধ্যে অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে। পর্বতচূড়ায় আমি যুদ্ধবিরোধী বার্তা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে নিয়ে যাই ও ছবি তুলি। এ ছবিগুলো যুদ্ধবিরোধী প্রচারে ব্যবহার করব।’
শায়লা বিথী জানান, কাঠমান্ডু ফিরতে আরও এক-দুইদিন লেগে যাবে। এরপর সেখান থেকে দেশে ফিরবেন তিনি।
শায়লা বিথীর অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রয়েছে নয়টি পর্বতাভিযান, ট্রেকিং ও ট্রেনিং। তিনি ‘ডোলমা খাং’ চূড়ায় আরোহণের আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে হিমালয়ের আইল্যান্ড পর্বতচূড়া জয় করেন। শায়লা বিথী ২০১৬ সালে ভারতের নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টিনিয়ারিং থেকে পর্বতারোহণের মৌলিক প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন।
প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০১৮ সালের মে মাসে তিব্বতের লাকপারি (৭ হাজার ৪৫ মিটার) পর্বতচূড়া জয় করেন শায়লা। ২০১৯ সালের মে মাসে প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে হিমালয়ের দুর্গম তাশিলাপচা (৫ হাজার ৭৫৫ মিটার) গিরিপথ পার হন তিনি। প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০২১ সালের নভেম্বরে তিনি অতিক্রম করেন হিমালয়ের বিখ্যাত থ্রি-পাস।
শায়লা বিথী ২০১৫ সালে নেপালের মাউন্ট কেয়াজুরির বেসক্যাম্প (১৫ হাজার ৫শ ফুট উঁচু) ট্রেকিং করেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে সফলভাবে নেপালের মেরা পর্বতের চূড়ায় (৬ হাজার ৪৭৪ মিটার) ওঠেন। ২০১৭ সালের এপ্রিলে নেপালের থ্রংলা পাস (৫ হাজার ৪১৬ মিটার) অতিক্রম করেন এই পর্বতারোহী। ২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি দলের অংশ হয়ে তিনি মানাসলু সার্কিট (৫ হাজার ১০৬ মিটার) ট্রেকিং সম্পন্ন করেন।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা