আপডেট : ৭ নভেম্বর, ২০২২ ২১:১২
১৮ কর্মকর্তার পদোন্নতি বাতিল করল ডিএসই
বীর সাহাবী

১৮ কর্মকর্তার পদোন্নতি বাতিল করল ডিএসই

ফাইল ছবি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ১৮ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি বাতিল করেছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ। গত ২৭ অক্টোবর ডিএসইর বোর্ড সভায় নেয়া এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে গত রোববার থেকে। একবার পদোন্নতি দিয়ে আবার তা বাতিল করায় কর্মকর্তাদের মাঝে বিরাজ করছে অসন্তোষ।

অভিযোগ উঠেছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নীতিমালা ভেঙে এ পদোন্নতি বাতিল করা হয়েছে। এতে অনেক কর্মকর্তা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

পদোন্নতি হারানোর তালিকায় রয়েছেন, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) থেকে জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) পদে পদোন্নতি পাওয়া তিনজন। সিনিয়র ম্যানেজার (এসএম) থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) পদে সাতজন, ম্যানেজার থেকে সিনিয়র ম্যানেজার পদে পাঁচজন এবং সিনিয়র এক্সিকিউটিভ থেকে ডেপুটি ম্যানেজার তিনজন।

পদোন্নতি বাতিল করা জিএম পদবির কর্মকর্তারা হলেন- সৈয়দ আল-আমিন রহমান, সাইদ মাহমুদ যোবায়ের ও মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। এজিএম পদে যাদের পদোন্নতি বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন- মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন রেজা, মো. বজলুর রহমান, কামরুন নাহার, মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ পাঠান, মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, সৈয়দ ফয়সাল আব্দুল্লাহ ও মোহাম্মদ আহসান হাবিব।

সিনিয়র ম্যানেজার পদে যাদের পদোন্নতি বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন- ফারহানা শরিফা, সাদাত মারুফ হাসনায়েন, শরিফ গিয়াস উদ্দিন আলম, মো. মশিউর রহমান চৌধুরী ও মামুন-উর-রশিদ। ডেপুটি ম্যানেজার পদে যাদের পদোন্নতি বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন- মো. আব্দুল লতিফ মিয়া, মো. সফিকুল আলম ও মো. দেলোয়ার হোসেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর একজন কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমরা পদোন্নতি পাওয়ার পর সামাজিক, পারিবারিক ও বন্ধুমহলে জানিয়েছিলাম। এখন হুট করে পদোন্নতি বাতিল করে দেয়া হলো। এতে আমাদের সামাজিকভাবে অনেক ছোট হতে হবে। এটা ভাবতেই ভীষণ খারাপ লাগছে। এটা কীভাবে মেনে নেব?’

অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মানসিকভাবে আমরা অনেক ভেঙে পড়েছি। এখন পরিবার ও বন্ধুমহলে কী বলবো তা-ই বুঝতে পারছি না। কোন অপরাধে আমাদের পদোন্নতি বাতিল করা হলো- এ প্রশ্নের কী জবাব দেব? এর থেকে পদোন্নতি না দেয়াই তো ভালো ছিল। একজন মানুষকে অফিসিয়ালি প্রমোশন দিয়ে তা আবার তিন মাস পরে বাতিল করে দেয়া এটি কোন আইনের মধ্যে পড়ে?’

পদোন্নতি বাতিল হওয়া আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাকে সিনিয়র ম্যানেজার থেকে এজিএম পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল। এতদিন আমি খাতাপত্রে এটিই লিখে এসেছি। ডিএসই কর্তৃপক্ষও এটিকে এতদিন মেনে নিয়েছে। তাহলে এই দুই-আড়াই মাস আমি যে এজিএম হিসেবে নথিপত্রে সই করেছি এটি কী এমনি এমনি? এখন আবার সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে নিজের টাইটেল লিখতে হবে- বিষয়টি কতটা অসম্মানজনক শুধু আমিই টের পাচ্ছি।’

জানা গেছে, ডিএসইর একাধিক স্বতন্ত্র পরিচালক পদোন্নতি-সংক্রান্ত আগের সার্কুলার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাতিলে পক্ষে মত দেন।

ডিএসইর কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়ার প্রতি আক্রোশ থেকেই এ পদোন্নতি বাতিল করা হয়েছে। তিনি দায়িত্বে থাকাকালে যাদের কাজে আস্থা রাখতেন বেছে বেছে তাদের পদোন্নতি বাতিল করা হয়েছে।

ডিএসইর কর্মকর্তাদের মধ্যে কাজের উদ্দীপনা ফেরাতে একযোগে ৯৫ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি দিয়েছিলেন তারিক আমিন। কিন্তু এতে ক্ষিপ্ত হন পরিচালনা পর্ষদের অনেকে। অভিযোগ আছে, ডিএসইর সংক্ষুব্ধ পরিচালকরা তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। বিষয়টি মানতে না পেরে পদত্যাগ করেন সাবেক এমডি।

পদত্যাগের পর তারিক আমিন ভূঁইয়া বিএসইসিতে পাঠানো এক চিঠিতে দাবি করেন, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন নীতিমালা মেনেই তিনি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়েছিলেন। নীতিমালা মেনে কাজের সুযোগ পেলে তিনি আবার ফিরতে চান। কিন্তু তাকে সেই সুযোগ না দিয়ে অনেকটা তড়িঘড়ি করে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়।

নীতিমালায় কী আছে?
২০১৩ সালে বিএসইসির অনুমোদিত গেজেটের ডিএসইর বোর্ড ও প্রশাসনিক বিধি-নিয়মের ৬.৬ ধারা অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ এমডির সব সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। যদি এমন কোনো হস্তক্ষেপ করে তাহলে তা নীতিমালা পরিপন্থী বলে বিবেচিত হবে।

৮.৯ ধারায় বলা আছে, পরিচালকরা কোনোভাবেই এক্সচেঞ্জের ম্যানেজমেন্টের কার্যক্রমের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।

এমডির কোনো সিদ্ধান্তে কিছু ভুল বা ডিএসইর ক্ষতি হতে পারে এমন মনে হলে পরিচালনা পর্ষদ তা বিএসইসিকে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করতে পারে। অথবা অভ্যন্তরীণ অডিট দল দিয়ে তদন্ত করার সুযোগ রয়েছে।

একজন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই বিধান অনুযায়ী এমডির দেয়া পদোন্নতির পর তা বাতিল সম্পূর্ণ নীতিমালার লঙ্ঘন।

যোগাযোগ করা হলে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আইনে যেখানে বলা আছে এমডির কোনো সিদ্ধান্ত চাইলেই বোর্ড বা ম্যানেজমেন্ট হস্তক্ষেপ করতে পারে না, সেখানে কোনো প্রকার তদন্ত করা ছাড়া এভাবে এতগুলো কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ার পর, তা কেড়ে নেয়া ঠিক হয়নি।’

এ বিষয়ে ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আগে যে এমডি ছিলেন তিনি যাওয়ার আগে একটি পদোন্নতি দিয়ে গেছেন, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এটিকে রিভিউ করে বর্তমান ম্যানেজমেন্ট যাদের উপযুক্ত মনে করেছে তাদের প্রমোশন দিয়েছে, যাদের মনে করেনি তাদের পদোন্নতি বাতিল করেছে। এখানে আমার কোনো মতামত নেই। পদোন্নতির বিষয়টি ম্যানেজমেন্টের।’

বোর্ড কি এমডির নেয়া সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি আসলে বোর্ড একা সিদ্ধান্ত নেয়নি। এখানে ম্যানেজমেন্ট আছে, তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই সব হয়েছে। বোর্ডের এখানে কোনো হস্তক্ষেপ নেই।’

বারবার ফোন দিলেও তা রিসিভ করেননি ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত এমডি সাইফুর রহমান মজুমদার।