আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ২১:১১
যৌক্তিক সময়ে আমরা হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেব: জামায়াতের আমির
চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা প্রতিনিধি

যৌক্তিক সময়ে আমরা হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেব: জামায়াতের আমির

শনিবার চুয়াডাঙ্গায় হোটেল সাহিদ প্যালেসের কনফারেন্স রুমে চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াত আয়োজিত দায়িত্বশীল সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের কেউ সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন। তাদের যৌক্তিক সময় দেওয়া হবে। এরপর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে তাদের সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিতে হবে। সেই যৌক্তিক সময়টা কখন জানতে চাইলে তিনি গতকাল চুয়াডাঙ্গায় বলেছেন, ‘যৌক্তিক সময়ে আমরা হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেব।’

আজ শনিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা শহরের হোটেল সাহিদ প্যালেসের কনফারেন্স রুমে চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াত আয়োজিত দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ড. শফিকুর রহমান।

বক্তৃতায় অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমের বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেন, ‘মানুষ কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। এখন যারা দায়িত্বে আছেন, তারা এ দেশেরই মানুষ। আর আমরা দেশবাসী মিলে ঐকমত্যের ভিত্তিতে তাদের ওপর দায়িত্ব দিয়েছি। সুতরাং তারা যদি ভালো কিছু করেন, তাহলে দেশবাসী উপকৃত হবে, আমি উপকৃত হব, আপনিও উপকৃত হবেন। কিন্তু তার আগে যদি কোনো ভুল করেন, আমরা তা ধরিয়ে দেব, সংশোধন করে দেব।’

তিনি বলেন, ‘তবে কিছু বিষয় আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে। আমরা তাদের পরামর্শ দিয়েছি, এতে আমরা ইতিবাচক ফল পেয়েছি। মানুষ হিসেবে তাদের জন্য আমাদের দোয়া করা উচিত। তারা যেন জাতির প্রত্যাশা ও আবেগের বাইরে কোনো কাজ না করেন। জাতির চেতনাকে তারা যেন ধারণ করে ২৪ বিপ্লবের চেতনাকে সম্মান করেন। আমরা তাদের কাছে এইটুকুই আশা করি। তবে আবেগবশত মাঝেমধ্যে দুই একটা জিনিস হয়ে যাচ্ছে, এটা হওয়া উচিত না। কী হয়ে যাচ্ছে এটা আপনারা (সংবাদকর্মী) সব বোঝেন, আমি সব কিছু ভেঙে বলতে চাচ্ছি না। ’

এর আগে তিনি কোরআনের আলোকে জীবনযাপন এবং মহানবীর আদর্শ প্রতিপালনে দায়িত্বশীলদের প্রতি আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে সবার কাছে ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দিতে নির্দেশনা দেন।

ড. শফিকুর রহমান বলেন, ‘দেশবাসীর উদ্দেশে আমাদের একটাই বক্তব্য, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা করি। কোনো বিভক্তি নয়, ঐক্যই হোক এ জাতির সৌন্দর্য ও শান্তির প্রতীক।’

ভারত প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, ‘আলাদা করে ভারতের ব্যাপারে আমরা কিছু বলব না। ভারত যেমন একটি দেশ, আমরাও একটি দেশ। ভারত ছাড়া আমাদের আরও প্রতিবেশী আছে এবং বিশ্বসভায় আরও অনেক দেশ আছে। সবার প্রতি আমাদের একই কথা, বিশ্বের সবাই আমরা মিলেমিশে পারস্পরিক মর্যাদা ও সমতার ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ক সামনে এগিয়ে নেব।’

রাষ্ট্র সংস্কারে বর্তমান (অন্তর্বর্তী) সরকারকে কত দিন সময় দিতে চান সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে আপনারা দেখতে পাবেন, কতটুকু সময় তারা পাবে বা আমরা কী চিন্তা করছি, ইনশাল্লাহ জানতে পারবেন।’

এর আগের দিন খুলনাতে আয়োজিত রুকন সম্মেলনে ‘যৌক্তিক সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিদায় নিতে হবে’ এই বক্তব্যের প্রসঙ্গে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ড. শফিকুর রহমান বলেন, ‘এটা আমরা আগে থেকেই বলছি, যৌক্তিক সময়ে আমরা হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেব। দেরি করব না ইনশাল্লাহ।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমীনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক মোবারক হোসাইন। এতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমীন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর জেলা আমির মাওলানা তাজউদ্দীন খান।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের আমির আবুল হাশেম, চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আজিজুর রহমান, মেহেরপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা মাহবুবুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা জেলার সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান, মেহেরপুর জেলার সেক্রেটারি ইকবাল হোসাইন, চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আনোয়ারুল হক মালিক, চুয়াডাঙ্গা জেলার সহ-সেক্রেটারি আব্দুল কাদের, মাসুদ পারভেজ রাসেল, ইসলামী ছাত্র শিবিরের চুয়াডাঙ্গা জেলার সভাপতি হাফেজ মোহসিনসহ অন্যান্য নেতারা।

সমাবেশে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার ৪২০ জন রুকন উপস্থিত ছিলেন। এরপর পাবনায় এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে জামায়াতে ইসলামীর পৃথক সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। পাবনা জেলার ষান্মাসিক রুকন‌ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি মন্তব্য করেন জামায়াতের‌ সদস্যরা আগে পাল্টাবে তারপর তারা দেশ পাল্টাবে।

পাবনা প্রতিনিধি জানান, জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান ওই সম্মেলনে মন্তব্য করেন, জামায়াতে ইসলামীর প্রতিটা সদস্য (রুকন) আগে পাল্টাবে তারপর তারা দেশটাকে পাল্টাবে। তিনি বলেন, আল্লাহর সৃষ্টি যা আছে সবগুলোকে সম্মান করতে হবে। মানুষকে মানুষ হিসাবে মনে করব এবং আল্লাহর পথে ডাকব।

জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদের বিরোধিতা যারা করেন আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। তারা বিরোধিতা করেন বলেই এই সংগঠনের (জামায়াত) চর্চা হয়। আমরা যেটা পৌঁছাতে পারতাম না তারা সেটা পৌঁছে দেয়।’

তিনি বলেন, ‘বৈষম্য এখনো দূর হয়নি। সাময়িক একটা স্বস্তি এসেছে। আমরা ছোটখাটো সমস্ত বৈষম্য দূর করব ইনশাআল্লাহ। আগস্ট বিপ্লব হুদাইবিয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে এই বাংলাদেশ পাল্টাবে কেউ কল্পনাও করতে পারিনি। যারা বুক পেতে লড়াই করেছে তাদের যেন দ্বীনের জন্য আল্লাহ কবুল করেন।

জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডলের সভাপতিত্বে এবং জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইকবাল হুসাইনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাসেম, সিরাজগঞ্জ জেলা আমির অধ্যক্ষ শাহিনুর আলম, নাটোর জেলা আমির ড. মীর নুরুল ইসলাম ও পাবনা জেলার সাবেক আমির আব্দুর রহিম প্রমুখ।

রুকন সম্মেলনের পর দুপুরে তিনি পাবনা দারুল আমান ট্রাস্টে পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সঙ্গে দেখা ও মতবিনিময় করেন। পরে বিকেলে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।