শিল্প ও বাণিজ্য নগরী নারায়ণগঞ্জে ৬০ লাখ মানুষের বসবাস। সেই সঙ্গে এই শহরে রয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসব কারণে ছোট এই নগরীর বাসিন্দাদের প্রতিদিনই যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবে নিত্যদিনের এই ভোগান্তিকে আরও প্রকট করে তুলেছে অপর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ।
অধিক জনসংখ্যা ও যানবাহনের এই শহরে মাত্র ৮০ জন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত আছেন। অথচ শহরকে যানজট মুক্ত রাখা এবং সড়কগুলোতে সাধারণ মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজন আরও অধিক সংখ্যক ট্রাফিক ও কমিনিউটি পুলিশ।
তবে জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সরকারের সমন্বিত উদ্যোগে পরিকল্পিতভাবে যানজট নিরসনের উদ্যোগ না নিলে এ সমস্যার সমাধান হবে না। আর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কর্মকর্তারা বলছেন, যানজট নিরসনের দায়িত্ব হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের। তাদের অব্যবস্থাপনার কারণেই শহরে এ সমস্যা তীব্র হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় ২২ লাখ মানুষ বাস করে। সেখানে প্রতিদিন ৪০ হাজার রিকশা, অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত যান চলাচল করে। একই স্থানে বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশন হওয়ায় শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়কে যানবাহনের চাপ অনেক বেশি। এ সড়কের দুই পাশের মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোর সামনে গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় যত্রতত্র গাড়ি রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া সড়কের দুই পাশে হকাররা প্রতিদিন দোকান বসান। এসব কারণে সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে।
অন্যদিকে শহরের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে সিএনজি ও অটোস্ট্যান্ড। পাশাপাশি চাষাড়া এলাকায় ১ ও ২ নম্বর রেলগেটের তিনটি পয়েন্টে এক ঘণ্টা পরপর ট্রেন চলাচলের জন্য সিগন্যাল পড়ে। বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ যানবাহন চলাচল করে। সেই সঙ্গে শিল্প-কারখানার যানবাহনের বাড়তি চাপ রয়েছে। অথচ চাপ সামাল দেয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের সবগুলোতে নেই ট্রাফিক পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সহসভাপতি রফিউর রাব্বি বলেন, শহরের চাষাড়া রাইফেল ক্লাব, শহীদ মিনার ও সোনালী ব্যাংকের মোড়ের ১০০ গজ এলাকার মধ্যে অবৈধভাবে চারটি সিএনজি স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। আর সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। ট্রাফিক পুলিশের সামনেই এসব স্ট্যান্ড থেকে যানবাহন চলাচল করছে। এ ছাড়া ১ ও ২ নম্বর রেলগেট এলাকাসহ মণ্ডলপাড়া পুলের সামনে আরও দুটি অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড রয়েছে। এসব জায়গায় যানজট এতটাই তীব্র যে, যাতায়াত করাই এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এদিকে শহরে যানজটের জন্য পুলিশসহ প্রশাসনের নীরবতাকে দায়ী করলেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আহসান সাদিক। তিনি বলেন, সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ। অথচ শহরজুড়ে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার অটোরিকশা চলাচল করছে। চাষাঢ়া রাইফেলস ক্লাবের সামনের পুলিশ বক্স থেকে টোকেন নিয়ে এসব অবৈধ যানবাহন চলছে।
আহসান সাদিক আরও বলেন, শহরের যত্রতত্র বাস থামিয়ে লোক ওঠা-নামা করা হয়। প্রভাবশালী কয়েকজন বিশেষ ব্যক্তি এসব বাস পরিচালনা করেন। এ কারণে ট্রাফিক পুলিশের সামনে অনিয়ম হলেও তা বন্ধ করা হচ্ছে না। পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধসহ অবৈধ স্ট্যান্ড তুলে না দেয়া পর্যন্ত শহরকে যানজট মুক্ত করা যাবে না।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা বলেন, জেলায় মাত্র ৮০ জন ট্রাফিক পুলিশ যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এত কম জনবল দিয়ে কাজ করানো কঠিন। শহরের যানজট সমস্যা দূর করতে হলে স্থানীয় সরকারের সঙ্গে প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। এরপর পরিকল্পিতভাবে ধাপে ধাপে কাজ করতে হবে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা