শেরপুরের চারটি পাহাড়ি নদীর উজানের পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে জেলার ভাটি এলাকায় নতুন করে আরও সাতটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এর মাধ্যে রয়েছে শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলা। এ নিয়ে জেলার পাঁচটি উপজেলায় মোট ৩০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হলো। জানা গেছে, গতকাল শনিবার রাত থেকেই প্লাবিত হতে শুরু করে নতুন এলাকাগুলো। জেলার গাজীরখামার, ধলা, পাকুরিয়া ও নকলা পৌর পুরো নকলা উপজেলাই বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
আজ রোববার সকালে শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর পানি বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং চেল্লাখালী নদীর পানিও ৫৩ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া অপর দুটি পাহাড়ি নদী- মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড আরও জানিয়েছে, বন্যার কারনে শেরপুর নাকুগাঁও স্থলবন্দর পরো স্থবির হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য গ্রামীণ পাকা-কাঁচা রাস্তা। তলিয়ে গেছে কৃষকের উঠতি আমনের খেত। ভেসে গেছে কাঁচা ঘর-বাড়ি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাকিবুজ্জামান খান বলেন, আগামীকাল সোমবারের ভেতর কমবে সব নদীর পানি, উন্নতি হবে বন্যা পরিস্থিতির। জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত জেলার সাড়ে ৩৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। সাড়ে ৯শ হেক্টর জমির সবজির আবাদ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
এদিকে, শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্যার পানির স্রোতে নিখোঁজ হওয়া দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এই জেলায় বন্যায় সাত জনের মৃত্যু হলো। গতকাল শনিবার উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর কুতুবাকুড়া গ্রামের ফসলের মাঠ থেকে দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছানোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- হাতেম আলী (৩০) ও তার ভাই আলমগীর হোসেন (১৮)। তারা অভয়পুর গ্রামের মৃত বাছির উদ্দিনের ছেলে। এর আগে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে ইদ্রিস আলী, খলিলুর রহমান ও বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের ওমিজা বেগমসহ ৫ জন।
নিহতের স্বজনরা জানান, গত শুক্রবার চেল্লাখালী নদীর পাহাড়ি ঢলের স্রোতের তোড়ে নিখোঁজ হন সহোদর দুই ভাই। এরপর থেকে তাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। কুতুবাকুড়া গ্রামের দুইজন কৃষক গতকাল শনিবার বিকেলে ধানক্ষেতে তাদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে স্বজনরা গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করেন।
জেলায় বন্যায় উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিএনপি, জামায়াত ও স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনের উদ্যোগে বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধারে অভিযান চললেও পানির প্রবল স্রোত আর পর্যাপ্ত নৌযানের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা