গর্ভাবস্থা এমন একটি সময়, যেটার গুরুত্ব অনেক মা বা পরিবারের সদস্যরা জানেন না। এই না জানার কারণে এবং সঠিক ধারণার অভাবে অনেক শিশু অপুষ্টি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। সেই সঙ্গে মায়ের শারীরিক নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়।
গর্ভাবস্থায় মা এবং শিশুর জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো তার ডায়েট বা পুষ্টিকর খাবার। যেটা একটা বাচ্চার সঠিক শারীরিক গঠন এবং ২৫ শতাংশ ব্রেইন/মানসিক বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই খাবারই নির্ধারণ করবে বাচ্চার পরিপূর্ণ বিকাশ।
গর্ভাবস্থার মোট সময় ৯ মাস। এই ৯ মাস সময়কে আমরা তিন ভাগে ভাগ করে নিতে পারি কাজ অনুযায়ী। প্রথম তিন মাস মায়ের নিজের জন্য যতটুকু ক্যালরি প্রয়োজন ঠিক ততটুকু যথেষ্ট। কিন্তু বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি রোধে এই সময়টুকুতে বাচ্চার জন্য কিছু বিশেষ পুষ্টির চাহিদা রয়েছে। এ জন্য মাকে ফলেটযুক্ত খাবার, ভিটামিন-সি, কলিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
পরের তিন মাস সময়ে মায়ের এবং বাচ্চার জন্য অতিরিক্ত ৩০০ কিলোক্যালরি গ্রহণ করতে হবে। এ সময় বাচ্চার শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধির জন্য কিছু বিশেষ পুষ্টির প্রয়োজন হয়। যেমন- আয়রন, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, জিংক, ফলেট ইত্যাদি। এগুলোর অভাব হলে মায়ের এনিমিয়া, প্রি-একলাম্পশিয়া, হ্যামারেজ এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া এগুলোর অভাবে মৃত শিশু, কম ওজনের শিশু জন্ম দিতে পারেন মা।
তাই মায়ের বাড়তি পুষ্টির দিকে নজর দিতে হবে। দুটি রঙের সবজি এবং ফল মাকে প্রতিদিন দিতে হবে। আমিষজাতীয় খাবারের ভূমিকা এ সময় অনেক বেশি। তাই প্রতিদিন মাকে একটি বা দুটি ডিম, এক গ্লাস দুধ এবং পর্যাপ্ত শাকসবজি, মাছ, মাংস খেতে দিতে হবে।
এর পরের তিন মাস সময়কেও গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়। কারণ এ সময় বাচ্চার ওজন দ্রুত বাড়ে।
অনেক সময় মায়েরা অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া খাবার বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করে ওজন বাড়িয়ে ফেলেন, যার কারণে মায়ের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। তাই অবশ্যই মাকে খাবারের পুষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ক্যালরি ঠিক রাখতে হবে। এ সময় মায়ের অতিরিক্ত মোট ৪০০ কিলোক্যালরি গ্রহণ করা উচিত। এই বাড়তি ক্যালরি আমিষযুক্ত খাবার থেকে আসা প্রয়োজন। এতে বাচ্চার ওজন সঠিকভাবে বৃদ্ধি পায়।
লেখক: পুষ্টিবিদ, ল্যাবএইড, গুলশান
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা